লেখা: মুহাম্মাদ আইনান ইকবাল
আপনারা হয়তো মুসলিম জাহানের ৪র্থ খলিফা হযরত আলী ইবনে আবু তালিবের (রাঃ) সেই ঘটনাটি শোনেছেন।
একদা যুদ্ধের ময়দানে কাফিরদের সাথে মুসলিমদের তুমুল যুদ্ধ চলছে।
হযরত আলী (রাঃ) এক শক্তিশালী শত্রুর সাথে যুদ্ধে মত্ত রয়েছেন। দীর্ঘক্ষণ যুদ্ধ চলার পর আল্লাহর সিংহ হযরত আলী (রাঃ) তাকে কাবু করে মাটিতে ফেলে দেন এবং সেই কাফেরকে আঘাত হানার জন্য তার জুলফিকার বের করেন।
ঠিক আঘাত হানার আগেই ভূপাতিত সেই কাফের হযরত আলীর (রাঃ) চেহারা মুবারকে থুথু নিক্ষেপ করল। রাগের কারণে হযরত আলীর (রাঃ) চেহারা রক্তবর্ণ হয়ে ওঠল। মনে হলো এখনই তাঁর তরবারি সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে শত্রুকে ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলবে। কিন্তু তিনি তা করলেন না। যে তরবারি আঘাত হানার জন্য ওপরে ওঠেছিল এবং যা বিদ্যুত গতিতে শত্রুর শরীরকে ক্ষত-বিক্ষত করার কথা ছিল, তা থেমে গেল। শুধু থেমে গেল নয়, ধীরে ধীরে নীচে নেমে এল। পানি যেমন আগুনকে ঠান্ডা করে দেয় , তেমনিভাবে হযরত আলীর (রাঃ) রাগে লাল হয়ে যাওয়া পবিত্র মুখমন্ডলও শান্ত হয়ে পড়ল।
হযরত আলীর (রাঃ) এই আচরণে শত্রু অবাক হয়ে গেল। যে তরবারি এসে তার দেহকে খন্ড-বিখন্ড করে ফেলার কথা, তা আবার কোষবদ্ধ হলো কোন কারণে! বিষ্ময়ের ঘোরে শত্রুর মুখ থেকে কিছুক্ষন কথা বের হলো না। এমন ঘটনা সে দেখেনি, শোনেও নি কোন দিন। ধীরে ধীরে শত্রুটি মুখ খোলল। বলল, “আমার মতো মহাশত্রুকে তরবারির নীচে পেয়েও তরবারি কোষবদ্ধ কেন করলেন?”
হযরত আলী (রাঃ) উত্তর দিলেন, “আমরা নিজের জন্য কিংবা নিজের কোনো খেয়ালখুশি চরিতার্থের জন্য যুদ্ধ করি না। আমরা আল্লাহর পথে আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের জন্য যুদ্ধ করি। কিন্তু আপনি যখন আমার মুখে থুথু নিক্ষেপ করলেন তখন প্রতিশোধ গ্রহণের ক্রোধ আমার কাছে বড় হয়ে ওঠল। এই অবস্থায় আপনাকে হত্যা করলে সেটা আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের জন্য হতো না, বরং তা আমার প্রতিশোধ গ্রহণ হতো। আমি আমার জন্য হত্যা করতে চাইনি বলেই তরবারি ফিরিয়ে নিয়েছি। ব্যক্তিস্বার্থ এসে আমাকে জিহাদের পুণ্য থেকে বঞ্চিত করুক, তা আমি চাইনি।”
শত্রুটি মাটি থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে সাথে সাথে তাওবাহ করে ইসলাম কবুল করলেন। আল্লাহু আকবার! এমন শ্রেষ্ঠ, মহান বীরের হৃদয়েও এই পরিমাণ ক্ষমা এবং স্বস্তিগুণ বিদ্যমান থাকে, এত বড় যোদ্ধা এরকম জিহাদের ময়দানেও এমন শক্তিশালী, বলবান শত্রুকে এতটুকু কর্তব্যজ্ঞানে ছেড়ে দিতে পারেন, তা শত্রুকে বিমোহিত করল।
শের-ই-খোদা হযরত আলী ইবনে আবু তালিবের (রাঃ) এই ঘটনা থেকে আমরা কী শিক্ষা পাই? আমরা শিক্ষা পাই মুমিনের সকল কাজই আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টির জন্য করতে হবে। আল্লাহর একজন প্রকৃত বান্দা কখনোই নিজের স্বার্থের জন্য, নিজের ফায়দা হাসিলের জন্য কোনো কাজ করে না, বরং করে একমাত্র মহান রবের সন্তুষ্টি লাভের আশায়। আমরাও যদি প্রকৃত মুসলমান হতে চাই তবে নিজের স্বার্থকে বিসর্জন দিতে হবে, সকল কাজের উদ্দেশ্য হতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি।
No comments:
Post a Comment