বিজয়ের কথা
নয় মাসের সংগ্রাম শেষে,
বহুল প্রতীক্ষিত বিজয় এসেছে ষোলই ডিসেম্বরে।
বাঙালি বাংলা মাকে মুক্ত করেছে হায়েনাদের নিষ্ঠুরতা থেকে,
বাংলার দামাল ছেলেরা বাংলা মাকে মুক্ত করেছে হানাদারদের অত্যাচার থেকে।
পৃথিবীর মানচিত্রে যু্ক্ত হয়েছে আরেকটি স্বাধীন দেশ,
প্রিয় বাংলাদেশ।
পাকিস্তান ষোলই ডিসেম্বর বোঝেছে, অত্যাচারের বিরুদ্ধে বাঙালি লড়তে জানে,
দেশকে তারা ভালোবাসতে জানে।
তিরিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয় আমাদের,
দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত এই মহান বিজয় আমাদের।
আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন দেশ, স্বাধীন পতাকা, হয়েছি স্বাধীন জাতি,
চলুন আমরা সবাই মিলে দেশটাকে গড়ি।
________________________________________
মানবের মাঝে শ্রেষ্ঠ যিনি
তোমরা কি জানো সেই মহামানবের জীবন কাহিনী,
যার জন্ম না হলে আঁধারে থেকে যেত এই ধরনী?
তবে শোনো!
এক সুন্দর রাতে আমেনা মায়ের গর্ভে এক শিশু জন্ম নেয় অন্ধকার আরবে,
ঐ রাতে এই ধরার সবগুলো মূর্তি নত হয় মাটির দিকে।
ঐ পবিত্র শিশুর জন্মে,
রহমাত নেমে আসে সমস্ত সৃষ্টির মাঝে।
সেই রাতে একটি আলো দৃশ্যমান হয় হিজাজে,
ধীরে ধীরে ঐ আলো ছড়িয়ে পড়ে পুরো ধরণীতে।
হাজার বছরের প্রজ্বলিত আলো নিভে যায়
পারস্যের অগ্নি উপাসনালয়ে,
কেননা খোদার বার্তাবাহকের জন্ম হয়েছে দুনিয়াতে।
এই শিশুরই নাম রাখা হয় মুহাম্মাদ,
খোদা তা"আলা তাঁর আপন মহিমায় পাঠালেন এই রহমাত।
যুবক বয়সে সারা জাহানে তিনি প্রচার শুরু করলেন শান্তি আর মানবতার,
চল্লিশ বছরে ফেরেশতা জিবরাইল মারফত সুসংবাদ পেলেন, তিনিই নবী আল্লাহর।
মূর্তি পূজারী আরবদেরই মাঝে তিনি দিলেন ঘোষণা,
সারা দুনিয়ার খোদা দ্বিতীয় কেউ নেই এক আল্লাহ ছাড়া।
বর্বর আরব জাতির মাঝে তিনি প্রচার করলেন শান্তির বাণী,
খোদার তরফ থেকে তিনি আনলেন "কুরআন" নামক মহাগ্রন্থটি।
সকল অন্যায়, অসত্য, মিথ্যা কুপ্রথার বিরুদ্ধে তিনি শুরু করলেন সংগ্রাম,
তিনিইতো সর্বশেষ, সর্বশ্রেষ্ঠ পয়গম্বর মুহাম্মাদ রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
নারী, শিশুসহ সকলকেই খোদার তরফ থেকে তিনি দিলেন প্রাপ্য সম্মান,
মাত্র তেইশ বছরে অন্ধকার আরবসহ পুরো দুনিয়াকে তিনি উপহার দিলেন মহাসত্যের পরিপূর্ণ সর্বশ্রেষ্ঠ ঐশ্বরিক বিধান।
"ইসলাম" নামক পরশপাথর তিনি আনলেন মানবমুক্তির তরে,
যার ছোঁয়ায় আমরা পেয়েছি আবু বকর, উমর, উসমান, আলীর মতো মহাজ্ঞানী, মহাবীরসহ আরও বহু শ্রেষ্ঠ মানবকে।
হে পয়গম্বরদের সর্দার,
তোমার পবিত্র জীবনী কেমনে বলব আমি যে অধম হীন
তুমি শ্রেষ্ঠ রসুল রহমাতুল্লিল আলামিন।
তোমায় না দেখার কি যে যন্ত্রণা তা বুঝানোর মতো নয়,
স্বপ্নেও যদি একবার তোমার সাথে দেখা হয়!
সালাম নিও ওগো দয়াল নবী,
সালাম নিও ওগো প্রাণের চেয়েও প্রিয় নবী।
একবার হলেও যেন তোমায় দেখি স্বপ্নে,
এই আশায় ঘুমাই আমি রাতে।
তোমার নাম যখনই শুনতে পাই,
এই অধমের দু"চোখ বেয়ে অশ্রু নেমে যায়।
সবশেষে প্রভুর নিকট একটাই ফরিয়াদ,
আমি যেন হতে পারি মুহাম্মাদ রসূলের একজন প্রকৃত উম্মাত।
________________________________________
কবিতা: লিচু চোর
কবি: কাজী নজরুল ইসলাম
বাবুদের তাল-পুকুরে
হাবুদের ডাল-কুকুরে
সে কি বাস করলে তাড়া,
বলি থাম একটু দাঁড়া।
পুকুরের ঐ কাছে না
লিচুর এক গাছ আছে না
হোথা না আস্তে গিয়ে
য়্যাব্বড় কাস্তে নিয়ে
গাছে গো যেই চড়েছি
ছোট এক ডাল ধরেছি,
ও বাবা মড়াত করে
পড়েছি সরাত জোরে।
পড়বি পড় মালীর ঘাড়েই,
সে ছিল গাছের আড়েই।
ব্যাটা ভাই বড় নচ্ছার,
ধুমাধুম গোটা দুচ্চার
দিলে খুব কিল ও ঘুষি
একদম জোরসে ঠুসি।
আমিও বাগিয়ে থাপড়
দে হাওয়া চাপিয়ে কাপড়
লাফিয়ে ডিঙনু দেয়াল,
দেখি এক ভিটরে শেয়াল!
ও বাবা শেয়াল কোথা
ভেলোটা দাড়িয়ে হোথা
দেখে যেই আঁতকে ওঠা
কুকুরও জাড়লে ছোটা!
আমি কই কম্ম কাবার
কুকুরেই করবে সাবাড়!
‘বাবা গো মা গো’ বলে
পাঁচিলের ফোঁকল গলে
ঢুকি গিয়ে বোসদের ঘরে,
যেন প্রাণ আসলো ধড়ে!
যাব ফের? কান মলি ভাই,
চুরিতে আর যদি যাই!
তবে মোর নামই মিছা!
কুকুরের চামড়া খিঁচা
সেকি ভাই যায় রে ভুলা-
মালীর ঐ পিটুনিগুলা!
কি বলিস? ফের হপ্তা!
তৌবা-নাক খপ্তা!
________________________________________
কবিতা: একলা তবে চল
কবি: অভি ওসমান
যদি তোমার থাকে প্রাসাদ
টাকা কাড়ি কাড়ি
কাছে তোমার ভিড় জমাবে
হাজারো নর-নারী।
যদি তোমার থাকে পাওয়ার
বাঘ সিংহদের মতো
স্যালুট তোমায় করবে অযুত
নপুংসক দল যতো।
যদি তুমি লেখ নকল
মিথ্যায় করো বাস
মৌমাছিরা উড়ে উড়ে
ঘুরবে চারিপাশ।
__________________________________________________
কবিতা: নিকট অতীত
বারান্দায় দাঁড়িয়ে ঐ দূর দিগন্তে তাকাতেই হারিয়ে যায় নিকট অতীতে,
সেই ছোট্টবেলা যেন সামনে ধরা দেয় অনায়াসে।
দেখা যায়, এক ছোট্ট শিশু মনের আনন্দে খেলছে বিশাল উঠোনে,
আছে আরো সঙ্গী-সাথি তারই সাথে।
শিশু-কিশোরদের দুষ্ট মিষ্টি আলাপ আর ছোট্ট পাখিগুলোর কলকাকলি মিলে প্রকৃতিকে জাগিয়ে তোলছে,
সেখানে রজনিগন্ধা, গোলাপ, জবা আর শিউলিদের মেলা বসেছে।
পাকা আমের মিষ্টি ঘ্রাণ চারদিক মাতিয়ে রাখছে,
পাকা কাঁঠাল তার সুবাস ছড়াচ্ছে সবদিকে।
ছোট্ট শিশুটি তার সাথিদের নিয়ে হালকা সবুজ জামরুল খাচ্ছে,
কখনো বাচ্চাগুলো লুকোচুরি, কানামাছি খেলছে।
ধীরে ধীরে সূয্যিমামা পশ্চিম আকাশে হেলে যাচ্ছে,
উঠোনে নীরবতা নেমে আসছে, পাখিরা নীড়ে ফিরছে, পেচকের ডাকও শুনা যাচ্ছে।
পেছনে কেউ কাঁধে হাত দিতেই সোনালি সেই অতীত ফেলে বর্তমানে ফিরে আসি,
সবুজ-শ্যামল প্রকৃতি, সেই উঠোন রেখে আবার কংক্রিটের এই কঠিন শহরে চলে আসি।
________________________________________
কবিতা: কবির কবিতা
কবিতা লিখার যোগ্যতা আমার নাই,
তবু আপন মনে লিখে যায়।
কবি হতে হলে মিশতে হয় দুঃখী মানুষের সাথে, জানতে হয়, বুঝতে হয় তাদের ধর্ম, তাদের অন্তরের ভাষা,
এসবে আমি অপারগ, তবু লিখে যায় কবিতা।
প্রকৃতি আর মানবমনের সমন্বয়ের নাম কবিতা,
মেহনতি মানুষের অনুভূতি প্রকাশের নাম কবিতা।
অনুভূতির বিশালতা, গভীরতা ছাড়া কবি হওয়া যায় না,
মাটি ও মানুষকে অবহেলা করে কবি হওয়া যায় না।
নানান দেশের নানান সংস্কৃতি যার জানা, প্রকৃতির মধুরতা যিনি উপলব্ধি করতে পারেন, তীব্র রোদে খেতে কাজ করা ঐ কৃষকের সাথে যিনি মিশতে পারেন, তাঁতির সাথে বসে যিনি তার মনের কথা বুঝতে পারেন, তিনিই কবি,
আর কবিতা, তারই রচিত পঙক্তির সমষ্টি।
________________________________________
কবিতা: আশ্বিনের স্নিগ্ধ হাওয়া
আশ্বিনের মিষ্টি স্নিগ্ধ হাওয়া,
আবারও নিসর্গকে করছে মাতোয়ারা।
শিশির ভেজা সকালে শিউলির মেলা বসতে শুরু করেছে,
শেফালির মধুর গন্ধে চারদিক ভরে ওঠছে।
নীল আকাশে দেখা যায় সাদা মেঘের খেলা,
ভূতলে দেখা যায় আনন্দ করছে বকুল, কামিনী, মাধবী, গোলাপ আর মল্লিকা।
বিলে-ঝিলে দেখা যায় শাপলার রাজত্ব,
নদীর তীর আজ শ্বেতশুভ্র কাশফুল দ্বারা সজ্জিত।
সৌন্দর্যে বিভোর কবি আজ বারংবার তার ছন্দ হারিয়ে ফেলছে,
আজ কবিমন চারদিকে শুধু মুগ্ধ চোখে প্রকৃতি দেখছে।
No comments:
Post a Comment