Saturday, June 15, 2019

ইসলামের আলোকে খেলাধুলা (বিশেষ করে ক্রিকেট, ফুটবল)

--- মুহাম্মাদ ইনান ইকবাল
একশ্রেণির মানুষ প্রচার করছে যে ইসলামে খেলাধুলা হারাম। এক্ষেত্রে তারা বিশেষত ক্রিকেট, ফুটবলের কথায় উল্লেখ করে। এই বিষয়ে সবসময় লিখার কথা আমার মাথায় থাকে। কারণ খেলাধুলা(ক্রিকেট, ফুটবল প্রভৃতি) ইসলামে হারাম নয় এই ব্যাপারে আমার কাছে প্রচুর প্রমাণ আছে। যারা এটার বিরুদ্ধে কথা বলে তারা কিন্তু খেলাধুলা হারাম হওয়ার পক্ষে কোনো যুক্তিই দেখায় না। শুধু বলে যে, খেলাধুলার কারণে সময়ের অপচয় হয়, খেলাধুলা করা বাজে কাজ।
প্রথমে তাদের যুক্তিগুলো খন্ডন করি চলুন। খেলাধুলা ক্রিকেট বা ফুটবল খেলা করা কি আসলেই সময়ের অপচয়? উত্তর হলো, "না।" কারণ যারা খেলাধুলা করেন তারা এটাকে পেশা হিসেবেই নেন। অনেকটা তাদের কাছে খেলাধুলা অফিসের চাকরি করার মতো। এখন কি বলবেন যে চাকরি করা হারাম বা এটার কারণে সময়ের অপচয় হয়! তবে শালীনতা এবং শ্লীলতার বিষয়গুলো মাথায় রেখেই খেলাধুলা করতে হবে। যেমনটা করেন হাশিম আমলা, মুশফিকুর রহীম কিংবা মোহাম্মদ আলীরা।
দ্বিতীয়ত, খেলাধুলা করা বাজে কাজ নয়। কারণ খেলাধুলা বর্তমানে শুধু বিনোদনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং একটি দেশ ও জাতিকে বিশ্বের মাঝে সমুন্নত হতে হলে, সেই দেশ বা জাতিকে অবশ্যই ক্রিকেট ও ফুটবল খেলায় এগিয়ে থাকতে হবে। আপনি কি জানেন শুধু সাকিবের কারণেই বাংলাদেশকে অনেক দেশের মানুষ চেনে? যদি মেসি, নেইমাররা না থাকতো অথবা বিশ্বকাপ ফুটবল না হতো হয়ত আমরা কখনো আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিলকে চিনতামই না। অতএব, খেলাধুলা কখনো কখনো আন্তর্জাতিক মহলে একটি দেশ ও জাতিকে পরিচয়ও করিয়ে দেয়।
উপরের লিখা হতে মোটামুটি এতটুকু নিশ্চিত যে খেলাধুলা(ক্রিকেট, ফুটবল প্রভৃতি) করা কোনো অনর্থক কাজ নয় এবং এটির কারণে সময়ের অপচয় হয় না।
এবার চলুন দেখে আসি পবিত্র কুরআনুল মাজীদ ও হাদীস শরীফে খেলাধুলার ব্যাপারে কি বলা হয়েছে।
১২. (ইউসুফের (আঃ) ভাইয়েরা তাদের পিতাকে বলল) "আপনি আগামীকাল তাকে (ইউসুফকে (আঃ)) আমাদের সঙ্গে পাঠিয়ে দিন, সে তৃপ্তিসহকারে (ফলমূল) খাবে এবং (খোলা প্রান্তরে) খেলাধুলা করবে। আমরা অবশ্যই তার রক্ষণাবেক্ষণ করব।"
(সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ১২)
ইউসুফের (আঃ) ভাইয়েরা পিতার সঙ্গে প্রতারণা করে তাঁকে দূরে কোথাও নিয়ে যাওয়ার ফন্দি খোঁজে। তারা তাদের পিতাকে বলল, আগামীকাল আমরা মাঠে পশু বিচরণ করাতে যাব। আমাদের সঙ্গে ইউসুফকে দিয়ে দিন। জঙ্গলে গিয়ে সে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল খাবে, আমাদের সঙ্গে খেলাধুলা করবে। ইউসুফের কোনো ক্ষতি হবে না। আমরাই তাঁর রক্ষণাবেক্ষণ করব। পরে ইয়াকুব (আঃ) ইউসুফ (আঃ)-কে তাদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। কেননা শরিয়তের সীমারেখা মেনে শরীরচর্চা ও খেলাধুলা করা হলে তা অবৈধ নয়। যদি অবৈধ হতো তবে হযরত ইয়াকুব (আঃ) কি অনুমতি দিতেন! কখনোই দিতেননা।
মানুষের স্বভাব হলো, অবিরাম কাজ করার ফলে সে ক্লান্ত হয়ে ওঠে।
ক্লান্তি দূর করতে প্রয়োজন একটু বিনোদনের। যেন নবোদ্যমে কাজ শুরু করা যায়। ইসলাম মানুষের স্বভাবগত ধর্ম। তাই ইসলাম বৈধ পন্থায় প্রশান্তি ও প্রফুল্লতা লাভ করার যাবতীয় পথ উন্মুক্ত রেখেছে। স্বয়ং রসুল (সঃ)-এর জীবনে এর প্রতিফলন দেখা যায়। একবার কৃষ্ণাঙ্গ কিছু লোক মসজিদে নববীর সামনে যুদ্ধের মহড়া দিচ্ছিল, তখন রসুল (সঃ) আয়েশাকে (রাঃ) জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি তাদের মহড়া দেখতে যাবে? আয়েশা (রাঃ) হ্যাঁ সূচক জবাব দেন। রসুল (সঃ) ঘরের দরজায় আয়েশাকে (রাঃ) চাদর দিয়ে আড়াল করে দাঁড়িয়ে যান। আর আয়েশা (রাঃ) রসুলের পেছনে দাঁড়িয়ে তাঁর কাঁধ ও কান মুবারকের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গা দিয়ে তাদের মহড়া দেখতে থাকেন। আয়েশা (রাঃ) নিজে থেকে প্রস্থান না করা পর্যন্ত রসুল (সঃ) এভাবেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। (বুখারি, হাদিস : ৫১৯০)
এই হাদীস থেকে বলা যায়, শুধু খেলাধুলা করাই বৈধ নয়, বরং বিনোদনের জন্য দেখাও যায়।
রসুলুল্লাহ (সঃ) ইরশাদ করেন, " তোমরা মাঝেমধ্যে বৈধ বিনোদন, খেলাধুলা কিংবা অন্য কোনো বৈধ উপায়ে হৃদয়কে বিশ্রাম ও আরাম দেবে। " (আবু দাউদ)
এই হাদীসটাতে স্পষ্টভাবেই বৈধ পন্থায় বিনোদনের উপদেশ দেয়া হয়েছে।
আরেকটি কথা হলো খেলাধুলা করা ও উপভোগ করা যাবে শরীয়তের সীমারেখায়। যেমন : ফুটবল খেলাটা জায়েজ হলেও পরিহিত কাপড় শরীয়ত সম্মত নয়। তবে ক্রিকেটে এই ব্যাপারে খেলা করা ও কাপড় উভয়টিই সঠিক।
খেলাধুলা ও বিনোদনের ক্ষেত্রে শালীনতা বজায় রাখতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, " যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। " (সুরা : নূর, আয়াত : ১৯)
যারা খেলাধুলা অপছন্দ করে তারা কুরআনের নিম্মোক্ত আয়াতটির কথা বলে বিরোধিতা করতে পারে।
তা হলো,
"একশ্রেণির লোক এমন আছে, যারা অজ্ঞতাবশত মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশ্যে লাহওয়াল হাদিস তথা অবান্তর কথাবার্তা ক্রয় করে এবং তা নিয়ে ঠাট্টাবিদ্রূপ করে। তাদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি। " (সুরা : লোকমান, আয়াত : ৬)
বেশির ভাগ সাহাবি, তাবেঈ ও তাফসিরবিদ এ আয়াতে উল্লিখিত 'লাহওয়াল হাদিস'-এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, গান-বাজনা, বাদ্যযন্ত্র, কিসসা-কাহিনীসহ যেসব বিষয় মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিল করে দেয়, সেগুলো "লাহওয়াল হাদিস"-এর অন্তর্ভুক্ত। (মা’আরেফুল কোরআন : ৭-৮)
কিন্তু ক্রিকেট বা ফুটবল লাহওয়াল হাদিসের অন্তর্ভুক্ত নয়।
ক্রিকেটের ক্ষেত্রে নিজ দেশের জয়ের জন্য ' ইনশাআল্লাহ ', জয় লাভ করলে ' আলহামদুলিল্লাহ ' বললেও কোনো সমস্যা নেই অথবা যেকোনো মুসলিম দেশের জয়ে এরকম অভিব্যক্তি ব্যক্তও করা যায়। কারণ এতে করে বিশ্বের কাছে নিজ দেশের ও জাতির মর্যাদা সমুন্নত হয়।
আর হালাল কোনো কাজে এই ধরণের অভিব্যক্তি প্রকাশে কোনো গুনাহ নেই।
আমার নানু এই ব্যাপারে সংক্ষেপে বলেন, " সতর্কতার সাথে, শরীয়ত সম্মত উপায়ে খেলাধুলা করা বৈধ। "
এছাড়া উনার কাছে শুনেছি হযরতের দাদা আল্লামা জমীরউদ্দীন আহমদ চাটগামী(রহঃ) (হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠাতা) একবার রেঙ্গুনে গেলে কুস্তি খেলা উপভোগ করেছেন।
ধন্যবাদ আপনাদেরকে। সময় করে লিখাটি পড়ার জন্য। লিখাটি কপি না করে শেয়ার করুন।
পরিশেষে বলতে চাই, আলহামদুলিল্লাহ বাংলাদেশ ক্রিকেটে এখন অনেক এগিয়ে। ইনশাআল্লাহ এবার বাংলাদেশ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হবে। ইনশাআল্লাহ পরের ম্যাচে ইন্ডিয়া হারবে।

No comments:

Post a Comment

সকল কাজের মূলেই যেন থাকে খোদার সন্তুষ্টি অর্জন

লেখা: মুহাম্মাদ আইনান ইকবাল আপনারা হয়তো মুসলিম জাহানের ৪র্থ খলিফা হযরত আলী ইবনে আবু তালিবের (রাঃ) সেই ঘটনাটি শোনেছেন। একদা যুদ্ধের ময়দান...