লেখক: মুহাম্মাদ আইনান ইকবাল
চেঙ্গিস খানের কথা মোটামুটি সবার জানা থাকলেও Khan of the Golden Horde বারকা খান সম্পর্কে আমাদের জানার পরিধি কম। অথচ মোঙ্গল সাম্রাজ্যের এই মহান শাসক সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন।
তাই চলুন, আজ আমরা বারকা খানকে জানবো।
বারকা খান (অথবা বিরকায়) ছিলেন চেঙ্গিস খানের নাতি। তিনি একজন মোঙ্গল সেনাপতি এবং ১২৫৭–১২৬৬ পর্যন্ত সোনালি সাম্রাজ্যের শাসক, যিনি নীল সাম্রাজ্য এবং সাদা সাম্রাজ্যের উপর শাসন করতে পেরেছিলেন। যুদ্ধের ময়দানে সাহসিকতা ও বীরত্বের জন্য জীবনে বহুবার পুরস্কৃত হন তিনি।
বারকা খান ১২৫২ সালে বুখারা শহরে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি যখন সর-জেকে ছিলেন তখন বুখারার একটি কাফেলার সাথে সাক্ষাত করেন এবং তাদের ধর্ম-বিশ্বাস সম্পর্কে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। বারকা খান তখন ইসলামের একত্ববাদ ও অন্যান্য বিশ্বাসের ধারণা পান এবং মুগ্ধ হন। তিনি কাফেলা ভ্রমণকারীদের কথার দ্বারা ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হন। তারপরে বারকা তার ভাই তুখ-তিমুরকেও ইসলাম গ্রহণে উৎসাহিত করেছিলেন।
১২৫৫ সালে বারকা খানের ভাই বাতু খান মারা যাওয়ার পর ১২৫৭ সালে তিনি নীল সাম্রাজ্যে (পশ্চিম) তার ভাইয়ের স্থলাভিষিক্ত হন। তিনিই প্রথমবারের মতো মঙ্গোল সাম্রাজ্যের একটি খানাতে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামের আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠা করেন। বারকা শীঘ্রই একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান হয়ে গেলেন। তাঁর ধর্মান্তরের ফলে নীল সাম্রাজ্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েছিল, যদিও তাদের মধ্যে তখনও পশু-পূজারী এবং বৌদ্ধ ছিল। চেঙ্গিস খানের আরেক নাতি হালাকুর বাগদাদ ধ্বংস এবং খলিফা আল-মুস্তা'সিমকে হত্যা করা বারকাকে ক্ষুব্ধ করেছিল। তিনি হালাকু খানকে মোকাবেলা করার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। সিরিয়া ও মিশর দখলের হালাকুর উচ্চাভিলাষ বারকার স্ব-ধর্মীয় লোকদের হুমকিতে রেখেছিল।
মুসলিম ঐতিহাসিক রশিদ-আল-দীন হামাদানীর অনুযায়ী বারকা খান বাগদাদে আক্রমণের প্রতিবাদে তাঁর মঙ্গোল এবং মুসলিম প্রজাদের বলেছিলেন:
“সে (হালাকু) মুসলিমদের সব শহর ধ্বংস করেছে এবং খলিফাকে হত্যা করেছে। আল্লাহর সহায়তায় আমি তার কাছ থেকে সকল নির্দোষের রক্তের হিসাব আদায় করব।”
হালাকু পুত্র আবাকা খানকে আক্রমণ করার জন্য বারকা কুড়া নদী পার হওয়ার চেষ্টা করার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ১২৬৬ থেকে ১২৬৭ এর মধ্যেই তিনি মারা যান। তার পরে তাঁর ভাইয়ের নাতি মেঙ্গু-তিমুর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। মামলুকদের সাথে জোটবদ্ধ থাকার এবং ইলখানাতের সাথে সংঘর্ষে জড়িত থাকার নীতি মেঙ্গু-তিমুর চালিয়ে যান। অনেক ইতিহাসবিদ একমত হয়েছেন যে হালাকুর বিরুদ্ধে বারকার হস্তক্ষেপ মক্কা এবং জেরুজালেমসহ অন্যান্য পবিত্র ভূমির বাগদাদের মতো ভাগ্য হওয়া থেকে রক্ষা করেছিল। প্রকৃতপক্ষে, আল্লাহ তা'আলা বারকা খানের মাধ্যমে মক্কা এবং জেরুজালেমসহ অন্যান্য পবিত্র ভূমিকে রক্ষা করেছিলেন।
বারকা খান তাঁর শাসনামলে যে কাজ করেন তার প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। বিশেষত হালাকু খানের ধ্বংসযাত্রা থামিয়ে তাঁর হাত থেকে মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার মুসলিম গোত্রগুলোকে রক্ষা করেন; যদিও বেশির ভাগ ঐতিহাসিক আইন জালুতের যুদ্ধকেই ইতিহাসের বাঁকবদলকারী আখ্যা দেন। (আইন জালুতের যুদ্ধ সম্পর্কে জানতে এই বিষয়ে আমার লেখা পড়তে পারেন এই লিংকে: https://muhammadainaniqbal.blogspot.com/2020/08/blog-post_22.html?m=1) কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা ছিল একটি প্রাথমিক জয়। এর পরও মুসলিম বিশ্ব হালাকু খানের আক্রমণঝুঁকিতে ছিল। তাছাড়া হালাকু খান নিজেও সেই যুদ্ধে উপস্থিত ছিলেন না। তবে অসম যুদ্ধে মামলুকদের বিজয় অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। এই কৃতিত্বের প্রকৃত দাবিদার বারকা খান। তাঁর বাহিনীই হালাকু খানকে ডেরায় ফিরে যেতে বাধ্য করেছিল। তিনি আরেকটি মুসলিম গণহত্যা রোধ করতে সক্ষম হন। তিনি যদি হালাকু খানকে রোধ না করতেন হয়তো ইসলামের পবিত্র ভূমিও বাগদাদের মতো রক্তে ভেসে যেত। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, বর্তমান সময়ের মুসলিম ঐতিহাসিকরা বারকা খানের এই অবদান স্মরণ করেন না।
যদিও বারকা খান কোনো দরবেশ ছিলেন না, তবে তিনি মুসলিম ভ্রাতৃত্ব লালন করতেন। সংকটপূর্ণ সময়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। রাজনীতির কূটকৌশল ও ব্যক্তিস্বার্থ বারকা খানকে ‘উম্মাহ চিন্তা’ থেকে দূরে ঠেলে দেয়নি। এটিই বারকা খানের শ্রেষ্ঠত্ব।
আল্লাহ তা'আলা নীল ও সাদা সাম্রাজ্যের শাসক বারকা খানকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।- আমীন
লেখাটি লেখতে যেসব সূত্র আমাকে সহযোগিতা করেছে:
Our group link: https://www.facebook.com/groups/302517450203009/
Our pages link: https://www.facebook.com/islamicmediachannelbd/?fref=gs&dti=302517450203009&hc_location=group_dialog
and
https://www.facebook.com/islamicmediablogs/
Our youtube channel link: https://www.youtube.com/c/Islamicmedia1234
No comments:
Post a Comment