Saturday, January 18, 2020

মানুষকে ভালোবাসুন, আল্লাহ তা'আলা আপনাকে ভালোবাসবেন

যখন আপনার রক্ত লাগে তখন কি আপনি দেখেন, যে ব্লাড ডোনার আপনাকে রক্ত দিচ্ছে সে কোন মতাদর্শের! না। দেখেন না। আর রক্তদাতাও যদি আপনার মতাদর্শ বিবেচনা করতেন, তাহলে হয়তো আপনাকে আর রক্ত দেয়া হতো না তার। মতাদর্শ, ধর্ম ইত্যাদির ভিন্নতার জন্য কখনোই মানুষকে ঘৃণা করা যাবেনা। রসূলুল্লাহর(সঃ) আদর্শ ছিল মানুষকে ভালোবাসা সে যে মতাদর্শেরই হোক না কেন। 

হাদীসে এসেছে, হযরত সাহল ইবনে হুনাইফ ও হযরত কায়েস ইবনে সা'দ (রাঃ) একদিন বসা ছিলেন। তারা তখন কাদিসিয়ায় থাকেন। পাশ দিয়ে একটি লাশ নেয়া হচ্ছিল। তা দেখে তারা দুজনই দাঁড়ালেন। উপস্থিত লোকেরা তাদেরকে জানাল, 'এ এক অমুসলিমের লাশ।' তাঁরা তখন শোনালেন, রসূলুল্লাহর (সল্লল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পাশ দিয়েও একবার এক লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তিনি যখন তা দেখে দাঁড়ালেন, উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম তখন বললেন, 'এ তো ইহুদির লাশ।' রসূলুল্লাহ (সল্লল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, أليست نفسا অর্থাৎ 'সে মানুষ  ছিল তো?' 
(সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৩১২)

রসূল(সঃ) কোনো মানুষকে ঘৃণা করতেননা সে যে ধর্মেরই হোকনা কেন। রসূলের(সঃ) জীবনে এরকম আরও অনেক ঘটনা আছে। যেখানে রসূলই(সঃ) মানুষকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে তার মত-পথ দেখেননি। সেখানে আমরা কিভাবে মতপার্থক্যের কারণে মানুষকে ঘৃণা করতে পারি!
  
 - Ainan

Sunday, December 1, 2019

আওলাদে রসূল (সঃ) এবং আহলে বায়াতে রসূল (সঃ) নিয়ে ভন্ডামি এবং একটি হাদীসের অপব্যাখ্যা

আমাদের প্রথমত 'আওলাদে রসূল' এবং 'আহলে বায়াতে রসূল', এই দু'টো শব্দের পার্থক্য জানতে হবে। সোজা কথায়, আওলাদে রসূল (সঃ) বলতে রসূলুল্লাহর (সঃ) বংশধরকে বোঝায়। অন্যদিকে আহলে বায়াতে রসূল (সঃ) বলতে রসূলুল্লাহর (সঃ) পরিবারবর্গকে বোঝায়। প্রিয়নবীর (সঃ) পরিবারে যাঁরা ছিলেন অর্থ্যাৎ পরিবারের সদস্যরাই কেবল হযরতের আহলে বায়াতের অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে 'আওলাদে রসূল' বলতে রসূলের (সঃ) বংশধরকে বোঝায়। অতএব, এই দু'টি শব্দই সম্পূর্ণ আলাদা। যেমন : হযরত আয়েশা (রাঃ) রসূলে করিমের (সঃ) বংশধর বা আওলাদে রসূল (সঃ) নন, কিন্তু তিনি আহলে বায়াতে রসূলের (সঃ) অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে বর্তমানে কেউ যদি সত্যিই আওলাদে রসূল (সঃ) হন, তবে তিনি আহলে বায়াতে রসূলের (সঃ) অন্তর্ভুক্ত হবেন না। কেননা তিনি রসূলের বংশধর হতে পারেন, কিন্তু পরিবারের সদস্য নন। তিনি রসূলের (সঃ) যেই পরিবার ছিল, সেখানে ছিলেন না।

আওলাদে রসূল (সঃ) সম্পর্কে কোনো হাদীস নেই। কিন্তু আহলে বায়াতে রসূল (সঃ) সম্পর্কিত হাদীস রয়েছে। এমনই একটি উল্লেখযোগ্য হাদীস হলো, 
"হযরত আবু যর (রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু) হতে বর্ণিত,
তিনি পবিত্র ক্বাবা ঘরের দরজা হাত
দিয়ে ধরা অবস্থায় বলেন, আমি নবীয়ে পাককে
(সল্লল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতে শুনেছি, তোমাদের মধ্যে আমার
আহলে বায়াতের দৃষ্টান্ত হযরত নুহ্ (আলাহিস সালামের)
জাহাজের মত । যে এতে আরোহন
করেছে সে মুক্তি পেয়েছে, আর যে এটা থেকে মুখ
ফিরিয়ে নিয়েছে, সে ধ্বংস হয়েছে।"
(মুসনাদে ইমাম
আহমদ : সুত্র : মিশকাত শরীফ ৫৭০ পৃষ্ঠা) 

বর্তমানে আমাদের সমাজে বেশিরভাগ ভন্ডরাই নিজেদেরকে বা তার ভক্তরা তাকে আওলাদে রসূল (সঃ) দাবী করে এবং এই হাদীসকে উদাহরণ হিসেবে টেনে বলে যে তারা হাদীস অনুযায়ী নিজেদের মুক্তির জন্য আওলাদে রসূলকে (সঃ) অনুসরণ করছে। অথচ হাদীসে আওলাদে রসূলকে (সঃ) অনুসরণ করতে বলা হয় নি, বরং রসূলের (সঃ) আহলে বায়াতের মর্যাদার কথা বলা হয়েছে। আর আহলে বায়াত আর আওলাদে রসূলের (সঃ) মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে যা উপরের আলোচনা থেকে প্রতীয়মান। অতএব, কেউ যদি 'আওলাদে রসূল' দাবী করে ভন্ডামি করে তবে আমরা তাকে অনুসরণ করবনা বরং আহলে বায়াতে রসূলের (সঃ) পথ অনুসরণ করব। 

পোস্টটি শেয়ার করুন এবং ভন্ড, মাজার পূজারীদের রুখে দিন। ধন্যবাদ।

- Ainan

Saturday, June 15, 2019

ইসলামের আলোকে খেলাধুলা (বিশেষ করে ক্রিকেট, ফুটবল)

--- মুহাম্মাদ ইনান ইকবাল
একশ্রেণির মানুষ প্রচার করছে যে ইসলামে খেলাধুলা হারাম। এক্ষেত্রে তারা বিশেষত ক্রিকেট, ফুটবলের কথায় উল্লেখ করে। এই বিষয়ে সবসময় লিখার কথা আমার মাথায় থাকে। কারণ খেলাধুলা(ক্রিকেট, ফুটবল প্রভৃতি) ইসলামে হারাম নয় এই ব্যাপারে আমার কাছে প্রচুর প্রমাণ আছে। যারা এটার বিরুদ্ধে কথা বলে তারা কিন্তু খেলাধুলা হারাম হওয়ার পক্ষে কোনো যুক্তিই দেখায় না। শুধু বলে যে, খেলাধুলার কারণে সময়ের অপচয় হয়, খেলাধুলা করা বাজে কাজ।
প্রথমে তাদের যুক্তিগুলো খন্ডন করি চলুন। খেলাধুলা ক্রিকেট বা ফুটবল খেলা করা কি আসলেই সময়ের অপচয়? উত্তর হলো, "না।" কারণ যারা খেলাধুলা করেন তারা এটাকে পেশা হিসেবেই নেন। অনেকটা তাদের কাছে খেলাধুলা অফিসের চাকরি করার মতো। এখন কি বলবেন যে চাকরি করা হারাম বা এটার কারণে সময়ের অপচয় হয়! তবে শালীনতা এবং শ্লীলতার বিষয়গুলো মাথায় রেখেই খেলাধুলা করতে হবে। যেমনটা করেন হাশিম আমলা, মুশফিকুর রহীম কিংবা মোহাম্মদ আলীরা।
দ্বিতীয়ত, খেলাধুলা করা বাজে কাজ নয়। কারণ খেলাধুলা বর্তমানে শুধু বিনোদনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং একটি দেশ ও জাতিকে বিশ্বের মাঝে সমুন্নত হতে হলে, সেই দেশ বা জাতিকে অবশ্যই ক্রিকেট ও ফুটবল খেলায় এগিয়ে থাকতে হবে। আপনি কি জানেন শুধু সাকিবের কারণেই বাংলাদেশকে অনেক দেশের মানুষ চেনে? যদি মেসি, নেইমাররা না থাকতো অথবা বিশ্বকাপ ফুটবল না হতো হয়ত আমরা কখনো আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিলকে চিনতামই না। অতএব, খেলাধুলা কখনো কখনো আন্তর্জাতিক মহলে একটি দেশ ও জাতিকে পরিচয়ও করিয়ে দেয়।
উপরের লিখা হতে মোটামুটি এতটুকু নিশ্চিত যে খেলাধুলা(ক্রিকেট, ফুটবল প্রভৃতি) করা কোনো অনর্থক কাজ নয় এবং এটির কারণে সময়ের অপচয় হয় না।
এবার চলুন দেখে আসি পবিত্র কুরআনুল মাজীদ ও হাদীস শরীফে খেলাধুলার ব্যাপারে কি বলা হয়েছে।
১২. (ইউসুফের (আঃ) ভাইয়েরা তাদের পিতাকে বলল) "আপনি আগামীকাল তাকে (ইউসুফকে (আঃ)) আমাদের সঙ্গে পাঠিয়ে দিন, সে তৃপ্তিসহকারে (ফলমূল) খাবে এবং (খোলা প্রান্তরে) খেলাধুলা করবে। আমরা অবশ্যই তার রক্ষণাবেক্ষণ করব।"
(সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ১২)
ইউসুফের (আঃ) ভাইয়েরা পিতার সঙ্গে প্রতারণা করে তাঁকে দূরে কোথাও নিয়ে যাওয়ার ফন্দি খোঁজে। তারা তাদের পিতাকে বলল, আগামীকাল আমরা মাঠে পশু বিচরণ করাতে যাব। আমাদের সঙ্গে ইউসুফকে দিয়ে দিন। জঙ্গলে গিয়ে সে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল খাবে, আমাদের সঙ্গে খেলাধুলা করবে। ইউসুফের কোনো ক্ষতি হবে না। আমরাই তাঁর রক্ষণাবেক্ষণ করব। পরে ইয়াকুব (আঃ) ইউসুফ (আঃ)-কে তাদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। কেননা শরিয়তের সীমারেখা মেনে শরীরচর্চা ও খেলাধুলা করা হলে তা অবৈধ নয়। যদি অবৈধ হতো তবে হযরত ইয়াকুব (আঃ) কি অনুমতি দিতেন! কখনোই দিতেননা।
মানুষের স্বভাব হলো, অবিরাম কাজ করার ফলে সে ক্লান্ত হয়ে ওঠে।
ক্লান্তি দূর করতে প্রয়োজন একটু বিনোদনের। যেন নবোদ্যমে কাজ শুরু করা যায়। ইসলাম মানুষের স্বভাবগত ধর্ম। তাই ইসলাম বৈধ পন্থায় প্রশান্তি ও প্রফুল্লতা লাভ করার যাবতীয় পথ উন্মুক্ত রেখেছে। স্বয়ং রসুল (সঃ)-এর জীবনে এর প্রতিফলন দেখা যায়। একবার কৃষ্ণাঙ্গ কিছু লোক মসজিদে নববীর সামনে যুদ্ধের মহড়া দিচ্ছিল, তখন রসুল (সঃ) আয়েশাকে (রাঃ) জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি তাদের মহড়া দেখতে যাবে? আয়েশা (রাঃ) হ্যাঁ সূচক জবাব দেন। রসুল (সঃ) ঘরের দরজায় আয়েশাকে (রাঃ) চাদর দিয়ে আড়াল করে দাঁড়িয়ে যান। আর আয়েশা (রাঃ) রসুলের পেছনে দাঁড়িয়ে তাঁর কাঁধ ও কান মুবারকের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গা দিয়ে তাদের মহড়া দেখতে থাকেন। আয়েশা (রাঃ) নিজে থেকে প্রস্থান না করা পর্যন্ত রসুল (সঃ) এভাবেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। (বুখারি, হাদিস : ৫১৯০)
এই হাদীস থেকে বলা যায়, শুধু খেলাধুলা করাই বৈধ নয়, বরং বিনোদনের জন্য দেখাও যায়।
রসুলুল্লাহ (সঃ) ইরশাদ করেন, " তোমরা মাঝেমধ্যে বৈধ বিনোদন, খেলাধুলা কিংবা অন্য কোনো বৈধ উপায়ে হৃদয়কে বিশ্রাম ও আরাম দেবে। " (আবু দাউদ)
এই হাদীসটাতে স্পষ্টভাবেই বৈধ পন্থায় বিনোদনের উপদেশ দেয়া হয়েছে।
আরেকটি কথা হলো খেলাধুলা করা ও উপভোগ করা যাবে শরীয়তের সীমারেখায়। যেমন : ফুটবল খেলাটা জায়েজ হলেও পরিহিত কাপড় শরীয়ত সম্মত নয়। তবে ক্রিকেটে এই ব্যাপারে খেলা করা ও কাপড় উভয়টিই সঠিক।
খেলাধুলা ও বিনোদনের ক্ষেত্রে শালীনতা বজায় রাখতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, " যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। " (সুরা : নূর, আয়াত : ১৯)
যারা খেলাধুলা অপছন্দ করে তারা কুরআনের নিম্মোক্ত আয়াতটির কথা বলে বিরোধিতা করতে পারে।
তা হলো,
"একশ্রেণির লোক এমন আছে, যারা অজ্ঞতাবশত মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশ্যে লাহওয়াল হাদিস তথা অবান্তর কথাবার্তা ক্রয় করে এবং তা নিয়ে ঠাট্টাবিদ্রূপ করে। তাদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি। " (সুরা : লোকমান, আয়াত : ৬)
বেশির ভাগ সাহাবি, তাবেঈ ও তাফসিরবিদ এ আয়াতে উল্লিখিত 'লাহওয়াল হাদিস'-এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, গান-বাজনা, বাদ্যযন্ত্র, কিসসা-কাহিনীসহ যেসব বিষয় মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিল করে দেয়, সেগুলো "লাহওয়াল হাদিস"-এর অন্তর্ভুক্ত। (মা’আরেফুল কোরআন : ৭-৮)
কিন্তু ক্রিকেট বা ফুটবল লাহওয়াল হাদিসের অন্তর্ভুক্ত নয়।
ক্রিকেটের ক্ষেত্রে নিজ দেশের জয়ের জন্য ' ইনশাআল্লাহ ', জয় লাভ করলে ' আলহামদুলিল্লাহ ' বললেও কোনো সমস্যা নেই অথবা যেকোনো মুসলিম দেশের জয়ে এরকম অভিব্যক্তি ব্যক্তও করা যায়। কারণ এতে করে বিশ্বের কাছে নিজ দেশের ও জাতির মর্যাদা সমুন্নত হয়।
আর হালাল কোনো কাজে এই ধরণের অভিব্যক্তি প্রকাশে কোনো গুনাহ নেই।
আমার নানু এই ব্যাপারে সংক্ষেপে বলেন, " সতর্কতার সাথে, শরীয়ত সম্মত উপায়ে খেলাধুলা করা বৈধ। "
এছাড়া উনার কাছে শুনেছি হযরতের দাদা আল্লামা জমীরউদ্দীন আহমদ চাটগামী(রহঃ) (হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠাতা) একবার রেঙ্গুনে গেলে কুস্তি খেলা উপভোগ করেছেন।
ধন্যবাদ আপনাদেরকে। সময় করে লিখাটি পড়ার জন্য। লিখাটি কপি না করে শেয়ার করুন।
পরিশেষে বলতে চাই, আলহামদুলিল্লাহ বাংলাদেশ ক্রিকেটে এখন অনেক এগিয়ে। ইনশাআল্লাহ এবার বাংলাদেশ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হবে। ইনশাআল্লাহ পরের ম্যাচে ইন্ডিয়া হারবে।

Saturday, April 20, 2019

লাইলাতুল বারাআত প্রসঙ্গে

--- মুহাম্মাদ ইনান ইকবাল

লাইলাতুল বারাআতের পরের দিন রোজা রাখার কথা রয়েছে। এই রাতে সাধ্যমতো ইবাদত করার কথা রয়েছে। তবে নির্দিষ্ট করে এই রজনীর কোনো নামাজ নেই।

এই পবিত্র রাত সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ হাদীসমূহ :-

হযরত আয়েশা (রঃ) থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে রয়েছে, "আমি এক রাতে মহানবীকে (সঃ) বিছানায় পেলাম না। তাই আমি অত্যন্ত পেরেশান হয়ে খোঁজাখুঁজি আরম্ভ করলাম। খুঁজতে খুঁজতে দেখি, তিনি জান্নাতুল বাকীর মধ্যে মহান আল্লাহর প্রার্থনায় মগ্ন। তখন তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা! আমার নিকট হযরত জিবরাইল (আঃ) উপস্থিত হয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, আজ রাত হল নিসফে শাবান অর্থাৎ, লাইলাতুল বারাআত। এ রাতে আল্লাহ তা'আলা অধিক পরিমাণে জাহান্নামবাসী লোকদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। এমনকি কালব বংশের বকরীগুলোর লোম সমপরিমাণ গুনাহগার বান্দা হলেও।" [মিশকাত শরীফ-১১৫ পৃ ]

মুয়াজ ইবনে জাবাল (রঃ) বলেন, "রসূল (সঃ) বলেছেন, শাবান মাসের মধ্য রাতে আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন, মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তি ব্যতিত অন্য সকলকে তিনি ক্ষমা করেন।" [আলবানী : সহীহাহ/৩]

হযরত সাইয়্যিদুনা আলী মুরতাদ্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মহান বাণী, "যখন শাবানের ১৫তম রাতের আগমন ঘটে তখন তাতে কিয়াম (ইবাদত) করো আর দিনে রোযা রাখো । নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা‘আলা সূর্যাস্তের পর থেকে প্রথম আসমানে বিশেষ তাজাল্লী বর্ষণ করেন এবং ইরশাদ করেন, "কেউ আছ কি আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনাকারী? তাকে আমি ক্ষমা করে দিব। কেউ আছ কি জীবিকা প্রার্থনাকারী? তাকে আমি জীবিকা দান করব। কেউ কি আছ মুসিবতগ্রস্ত? তাকে আমি মুক্ত করব। কেউ এমন আছ কি? কেউ এমন আছ কি? এভাবে সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা তার বান্দাদেরকে ডাকতে থাকবেন।" [সুনানে ইবনে মাযাহ, ২য় খন্ড, পৃঃ ১৬০, হাদিস নং-১৩৮৮]

Tuesday, February 6, 2018

ইসলামের দৃষ্টিতে টেরট কার্ড পড়া কি জায়েজ?

টেরট কার্ড বলতে এমন কতগুলো প্রাচীন কার্ডকে বুঝায় যেগুলো পড়ে ভবিষ্যত জানা যায় এবং গায়েবী জানা যায় বলে একশ্রেণীর মানুষ বিশ্বাস করে।
ইসলামে টেরট কার্ড পড়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।কারণ ইসলামের অালোকে অদৃশ্য বা গায়েবী সম্পর্কে এবং ভবিষ্যতে কি হতে পারে সেই সম্পর্কে একমাত্র অাল্লাহ তা'অালা ব্যতীত কেউ জানতে পারেনা।
আল্লাহ তা'অালা বলেন :-
ﻗُﻞْ ﻟَﺎ ﻳَﻌْﻠَﻢُ ﻣَﻦْ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺍﻟْﻐَﻴْﺐَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ
অর্থ : "আপনি বলুন, একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত আসমান ও জমিনের কেউ অদৃশ্যের সংবাদ জানেন না।"(সূরা নামল : ৬৫)
অন্য এক আয়াতে অাল্লাহ তা'অালা বলেন, "নিশ্চয়ই কিয়ামতের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছেই রয়েছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং জরায়ুতে কী আছে তা তিনিই জানেন। কেউ জানে না আগামীকাল সে কী উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোথায় তার মৃত্যু ঘটবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ। সব বিষয়ে অবহিত"(সূরা লোকমান : ৩৪)
অতএব,টেরট কার্ডের মাধ্যমে মানুষ ভবিষ্যত ও গায়েবী জানতে পারে,এরকম বিশ্বাস করা উপরের অায়াতসমূহের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

এজন্য অদৃশ্য ও অজানা বিষয়ের কেউ দাবি করতে পারবে না এবং যারা দাবি করে তাদের ধারে-কাছেও যাওয়া যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,"যে ব্যক্তি গণকের কাছে ভবিষ্যতের কোনো বিষয়ে জানতে চায়, চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার কোনো নামাজ আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।"
অন্য এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, "যে ব্যক্তি গণকের কাছে যায় এবং তার কথা বিশ্বাস করে, সে যেন রাসুল (সা.)-এর আনীত ইসলামকে অবিশ্বাস করল।"
যে ব্যক্তি ভাগ্যগণনা করে,মানুষের ভবিষ্যত বলার দাবী করে তাকেই গণক বলে।টেরট কার্ড রিডাররাও ভাগ্য গণনা করে,মানুষের ভবিষ্যত বলে।অতএব,তারাও গণক।অতএব,তাদের কাছে গিয়ে ভবিষ্যত জানতে চাইলে চল্লিশ দিন পর্যন্ত সালাত যেমন কবুল হবে না তেমনি তাদের কথা বিশ্বাস করলে ঈমানও থাকবেনা।
------------  মুহাম্মাদ অাইনান ইকবাল

Friday, November 17, 2017

দুই হাজার একশো সতের সালের একদিন


২১১৭ সাল...
(বিজ্ঞান এখন অনেক উন্নত।মানুষের জীবন অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে।অামি গল্পে ২১১৭ সালের একটি দিনের কথা বর্ণনা করছি।)
জাবের অাজ ঘুম থেকে দেরি করে উঠল।কারণ অাজ ছুটির দিন।অফিস বন্ধ।
তাই সে ব্রেইনফোন দিয়ে তার বন্ধু রাকিবের সাথে যোগাযোগ করল।রাকিবকে সে অাজ তার বাসায় অাসতে বলল।
জানি অাপনারা ভাবছেন,ব্রেইনফোন অাবার কি।ব্রেইনফোন হলো নব্য অাবিষ্কৃত এমন একটি যোগাযোগ করার যন্ত্র যার মাধ্যমে অাপনি কি ভাবছেন তা অাপনার বন্ধুকে দূর থেকে বুঝাতে পারেন।এক্ষেত্রে দু'পক্ষে দু'টি যন্ত্র (যার মধ্যে একটি হলো প্রেরক ও অারেকটি গ্রাহক যন্ত্র) প্রয়োজন।অার এই যন্ত্রের মাধ্যমে অাপনি যার সাথে যোগাযোগ করতে চান তার নির্দিষ্ট চার ডিজিটের নম্বর অাপনার যন্ত্রটিতে টাইপ করতে হবে।
যাই হোক,রাকিব এল।রাকিবকে দেখে জাবেরও অনেক খুশি।বলে রাখা ভালো যে রাকিব অার জাবের ছুটির দিনে কোনো না কোনো বিষয়ে অালোচনা করে।তাই অাজও তার ব্যতিক্রম হলোনা।খাওয়া-দাওয়া শেষ করে তারা চিন্তা করেছে অাজ একটু ভিন্নধর্মী বিষয় নিয়ে অালোচনা করবে।তাদের অাজকের অালোচনার টপিক : 'একুশ শতকের বিজ্ঞান'।
রাকিব জাবেরকে  বলল,"ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায়,একুশ শতকের মানুষেরা বিজ্ঞান বিষয়ে অনেক অাগ্রহী ছিলেন এবং অনেক কিছু অাবিষ্কারও করেছিলেন।কিন্তু হাস্যকর ব্যাপার হলো,তাদের অনেকেই ভাবতেন যে তারা বিজ্ঞান বিষয়ে প্রায় জ্ঞানই অর্জন করে ফেলেছেন।তারা নিজেদেরকে অাধুনিক বিশ্বের মানুষ বলেও দাবী করতেন।"
জাবের হেসে বলল,"তারা যদি এত অাধুনিক হতেন তাহলে অাজকের মানুষেরা কি!"
জাবের অারও বলল,"অাসলে একুশ শতকে অনেক কিছু অাবিষ্কার হয়ে ছিল ঠিক।তবে তাই বলে একুশ শতককে অত্যাধুনিক বলা যায়না।"
রাকিব বলল,"একদম ঠিক কথা।শুনেছি তারা নাকি যোগাযোগের জন্য একটি যন্ত্র ব্যবহার করতেন যার নাম ছিল মোবাইল।এটার গঠন প্রকৃতি নাকি অামাদের অাজকের ব্রেইনফোনের মতো ছিল।কিন্তু কার্যকারিতা ব্রেইনফোন থেকে অালাদা।এই সম্পর্কে তোর কি মতামত?"
জাবের : হ্যা দোস্ত।কিন্তু যন্ত্রটার কথা শুনে অামার কেমন জানি অাজব অাজব লাগে।অাচ্ছা তুই কি তাদের সম্পর্কে অারেকটি মজার কথা জানস?
রাকিব : না।কি?
জাবের : তাদের মধ্যে নাকি কোনো কোনো মানুষ  ছিল যারা অাল্লাহকে অস্বীকার করত!
রাকিব : কি বলছ!তারা এতই পাগল ছিল।
জাবের : সবাই না।তবে কিছু কিছু মানুষ ছিল যারা কিনা ভাবত অাল্লাহ বলতে কিছু নেই।অারও হাস্যকর ব্যাপার হলো তারা নাকি ভাবত তারা নিজে নিজেই সৃষ্টি হয়েছে।ঐ গুটিকয়েক পাগলগুলা নাকি ভাবত তারা বানর থেকে মানুষে পরিণত হয়েছে।তারা নাকি 'বিবর্তনবাদ' নামক একটি কল্পকাহিনীতেও বিশ্বাস করত।অার এই কল্পকাহিনীর মূল কথা ছিল যে অনেক প্রাণী বিবর্তনের মাধ্যমে অন্য প্রাণীতে পরিণত হয়েছে।যেমন : বানর থেকে মানুষ।
রাকিব : হা হা।কি বলছ!এমন পাগলও পৃথিবীতে ছিল!
জাবের : হ্যা বন্ধু।অাবার এরাই নাকি নিজেদেরকে বিজ্ঞানমনস্ক বলে দাবী করতো।তারা নাকি অাবার অাল্লাহর বিধানকেও অস্বীকার করতো।
রাকিব : অাহারে!তখনের এই মানুষগুলা কতই না অজ্ঞ অার অশিক্ষিত ছিল।যারা একদিকে নিজেদেরকে বিজ্ঞানমনস্ক দাবী করতো অন্যদিকে স্রষ্টার অস্তিত্বকে পর্যন্ত অস্বীকার করত।কিন্তু বাইশ শতকের এই অাধুনিক অথচ গতিশীল বিশ্বেতো স্রষ্টাকে অস্বীকার করা সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক।অাজকের বিজ্ঞান বলে অাল্লাহ ছাড়া দুনিয়া সৃষ্টিই অসম্ভব।অার কি যেন কাল্পনিক গল্পকাহিনী বললি!
জাবের : বিবর্তনবাদ!
রাকিব : হ্যা।এই বিবর্তনবাদওতো অযৌক্তিক।অাজকের বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে পৃথিবীর সব মানুষ সর্বপ্রথম এক পুরুষ ও এক নারী থেকেই এসেছে।
জাবের : হুম।অাসলে ঐ সময়ের কিছু মানুষ অাল্লাহ তা'অালা,তাঁর বিধান কুরঅান ও তাঁর পয়গম্বরের প্রতি বিশ্বাস না করে অযৌক্তিকভাবে কতগুলো অর্ধশিক্ষিত বিজ্ঞানীদের প্রতি অন্ধবিশ্বাস করেছিল।অার তারা বোধ হয় জানতোই না যে বিজ্ঞান গতিশীল ও পরিবর্তনশীল।অন্যদিকে ইসলাম পরিপূর্ণ।
রাকিব : একদম ঠিক।এখন যদি কেউ এমন ভাবনা নিয়ে চলে তবে তাকে কি বলা যায়?
জাবের : বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের এই যুগে কেউ অাল্লাহ,তাঁর বিধান কুরঅান ও তাঁর রসূলকে অস্বীকার করলে সে হয়ত পাগল অথবা বেকুব।অবশ্য এখন বোধ হয় এমন কোনো গাধা নেই।
রাকিব : হ্যা একদম ঠিক।অাসলে এরা ছিল বিজ্ঞানান্ধ।অাচ্ছা দোস্ত এসব অবৈজ্ঞানিক অর্ধশিক্ষিত বেকুবদের কথা অার অালোচনা করে লাভ নাই।অার একুশ শতকের সবাই কিন্তু এমন ছিলেননা।অনেকেই ছিলেন পূর্ণ ঈমানদার।
জাবের : হ্যা দোস্ত।যাই হোক,চল একটু বাইরে থেকে ঘুরে অাসি।
রাকিব : ওকে।চল।
---- Muhammad Ainan Iqbal

Monday, October 30, 2017

ওরশ করা যাবে কি?


লেখক : Muhammad Ainan Iqbal
----------------------------------------------------
 পর্ব :০১
********************
চলুন প্রথমে জেনে নিই যে ওরশ কাকে বলে।মূলত বছরে একটি নির্দিষ্ট দিনকে উদ্দেশ্য করে কোনো কথিত বা প্রকৃত বুযুর্গ অথবা অাউলিয়া,যিনি কিনা মৃত,তার মৃত্যু দিবস অথবা জন্ম দিবসকে কেন্দ্র করে তার নামে বা অাল্লাহর নামে অথবা অাল্লাহ তা'অালার সাথে সাথে এই বুযুর্গ বা অাউলিয়ার নাম নিয়ে কোনো পশু যবেহ করে,বিশেষ কোনো অানন্দ অনুষ্ঠানের অায়োজন করা,খাবারের অায়োজন করাকে সাধারণত ওরশ বলে।
ওরশের উদ্দেশ্য থাকে যেই বুযুর্গ বা অাউলিয়ার জন্য ওরশ করা হলো তার মাধ্যমে অাল্লাহর কাজ থেকে কিছু সওয়াব অর্জন করা।
ওরশ করা যাবেনা।কারণ প্রথমতঃ ওরশ বিদা'অাতের অন্তর্ভুক্ত।
ওরশ বিদা'অাতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণ হলো কুরঅান ও হাদীসে ওরশ করার কথা নেই।
অার যা কুরঅানে বা হাদীসে নেই তা যদি কেউ ইবাদত মনে করে সওয়াবের উদ্দেশ্যে করে তাহলে সুস্পষ্ট বিদা'অাত হবে।
বিদা'অাত বলতে ধর্মে নতুন কিছু সংযোজন করাকে বুঝায়।
বিদা'অাতের কুফল সম্পর্কে পবিত্র কুরঅানেই সংক্ষিপ্তভভাবে বলে দেয়া হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন -
"অতঃপর সত্যের পর ভ্রষ্টতা ছাড়া কী থাকে?" (সূরা ইউনুস আয়াত : ৩২)
অর্থ্যাৎ,ইসলাম পূর্ণতা লাভ করার পর ইসলামের নামে দ্বীনের মধ্যে যা কিছু সংযোজিত, আবিস্কৃত ও প্রচলিত হবে সব কিছুই ভ্রান্ত বলে প্রত্যাখ্যাত হবে। আর তা বিদা'আত বলে গণ্য হবে।
আল্লাহ তা'আলা অন্যত্র বলেন -
"আমি এ কিতাবে কোন কিছু বাদ রাখিনি।" (সূরা আন'আম, আয়াত : ৩৮)
অর্থাৎ, আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনুল কারীমে সব কিছু যখন বলে দিয়েছেন তখন ধর্মে নতুন কোন বিষয় সংযোজন বা বিয়োজন করার প্রয়োজন নেই। যে কোন ধরনের সংযোজন ও বিয়োজনই বিদা'আত বলে গণ্য হবে।
তাই যেহেতু ওরশের কথা কুরঅান ও হাদীসে নেই,তাই ওরশ করা বিদাঅাত।
আয়েশা রাঃ বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, " যে ব্যক্তি এমন আমল করল যাতে আমার কোন নির্দেশনা নেই,  তা পরিত্যাজ্য।" ( মুসলিম হাদীস,১৭১৮ )
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি এমন আমল করবে যার ব্যাপারে আমার শরীয়তের নির্দেশনা নেই, উহা প্রত্যাখ্যাত।” (মুসলিম হাদীস,৩২৪৩)

অার এই কারণেই ওরশ করা যাবেনা যেহেতু এই ব্যাপারে রসূলুল্লাহর(স:) কোনো নির্দেশনা নেই।

তিনি আরো বলেন- " নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম কথা হচ্ছে আল্লাহ্‌র কিতাব, সর্বোত্তম পদ্ধতি হচ্ছে রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর পদ্ধতি। আর নিকৃষ্ট কাজ হচ্ছে শরীয়াতে নতুন কিছু সৃষ্টি করা, এবং প্রত্যেক বিদা'আত হচ্ছে ভ্রষ্টতা। (মুসলিমঃ ৭৬৮)
যেহেতু ওরশ বিদা'অাত অর্থ্যাৎ এর কথা কুরঅান ও হাদীসে নেই সুতরাং উপরোক্ত হাদীস অনুযায়ী এটি ভ্রষ্টতা।
---------------------------------
পর্ব :০২
*********************
পূর্বের অালোচনা থেকে এই কথা নিশ্চিত ও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে ওরশ করা বিদা'অাত।অতএব,ওরশ করা যাবেনা।অাজকে ওরশ করতে না পারার অারেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ বর্ণনা করছি।
ওরশ করা যাবেনা কারণ ওরশ শির্কেরও অন্তর্ভুক্ত।ওরশ কেন শির্কের অন্তর্ভুক্ত তা বুঝতে হলে অামাদের অবশ্যই শির্ক সম্পর্কে জানতে হবে।প্রথম পর্বে যেহেতু অামি ওরশের সংজ্ঞা দিয়েছি,তাই এখন দ্বিতীয়বার ওরশের সংজ্ঞা দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিনা।
অামি এখন শির্কের সংক্ষিপ্ত এবং সহজ অথচ প্রকৃত সংজ্ঞাটি দেয়ার চেষ্টা করছি।
অারবি 'শির্ক' শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো  সংযুক্তি, সম্মিলন, মিশ্রণ, শামিল বা অংশীদারিত্ব।
ইশরাক বা শরীক করার অর্থ হলো কোনকিছুকে মিশ্রিত করা, যুক্ত করা, মিলানো, একত্রিত করা, শামিল বা অংশীদার করা। শির্ক শব্দ থেকে উদগত ও রূপান্তরিত প্রতিটি শব্দের মধ্যে তার এ মৌলিক অর্থগুলো পাওয়া যায়।
অহএব,অাল্লাহর সাথে অন্যকিছুকে বা অন্য কাউকে যেকোনো দিক থেকে শরীক করাই শির্ক।শির্ক হতে পারে অাল্লাহ তা'অালার নাম,গুণাবলী,মর্যাদা,ক্ষমতা ইত্যাদির সাথে অন্য কারো নাম,গুণাবলী,মর্যাদা,ক্ষমতা ইত্যাদির তুলনা করলে,অংশীদার করলে,প্রাধান্য দিলে।
এখন চলুন যেনে অাসি ওরশ কেন শির্ক হবে।ওরশে যদি অাল্লাহ ব্যতীত অার কারো নামে পশু যবেহ করা হয়,তবে তা সুস্পষ্ট শির্ক।কারণ কুরঅানেই বলা অাছে,একমাত্র অাল্লাহর নামে পশু যবেহ করার কথা।অতএব,অাল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নাম নেয়া হলে তা অাল্লাহর নামের ওপর তাকে প্রাধান্য দেয়া হয়,যা সুস্পষ্ট শির্ক।যদি ওরশে পশু যবেহ করার সময় অাল্লাহর নাম নেয়া হলো এবং সাথে অন্য কারো নামও নেয়া হলো তবে তা-ও শির্ক হবে।কেননা এক্ষেত্রে অাল্লাহর নামের সাথে অন্য কারো নামকে অংশীদ্বার করা হলো,শরীক করা হলো।
যদি ওরশে যবেহ করা প্রাণীতে শুধু অাল্লাহর নামও নেয়া হয় তবু তা শির্কের অন্তর্ভুক্ত হবে।এর একটি কারণও রয়েছে।এই কারণটি অতি সুক্ষ্ম তাই অনেকে উপলব্ধি করতে পারেনা।অাবার অনেকে বুঝতে পারলেও অন্ধভক্তির কারণে ভুল পথে থেকে যায়।চলুন এবার যেনে অাসি কি সেই কারণ।ওরশ করার উদ্দেশ্যই থাকে অমুক বুযুর্গ বা অাউলিয়াকে মর্যাদা দেয়ার মাধ্যমে তার সন্তুষ্টি অর্জন করে সওয়াব লাভ করা।কিন্ত এরূপ মর্যাদা যেখানে কিনা উদ্দেশ্য থাকে অমুক বুযুর্গ বা অাউলিয়ার  সন্তুষ্টি অর্জন করে সওয়াব লাভ করা,তা সম্পূর্ণ শির্ক।কারণ কেবলমাত্র অাল্লাহকেই সন্তুষ্ট করে সওয়াব লাভ করা যাবে।ওরশে সওয়াব লাভের জন্য অাল্লাহ তা'অালার সাথে বান্দার সন্তুষ্টি ও মর্যাদাকেও শরীক করা হচ্ছে,অংশীদ্বার করা হচ্ছে,যা সুষ্পষ্ট শির্ক।
অাশা করি,ওরশ কেন শির্কের অন্তর্ভুক্ত তা বুঝা গেল।
চলুন এবার শির্কের পরিণতি সম্পর্কে কিছুটা জেনে অাসি।
শির্ক সম্পর্কে অাল্লাহ বলেন,إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ  (لقمان : )
অর্থ :"নিশ্চয় শির্ক চরম জুলুম।" (লুকমান : ১৩)

মহান আল্লাহ তা'অালা অারো বলেন,"তোমরা সূর্যকে সেজদা করোনা, চন্দ্রকে ও নয়, সেজদা কর সেই আল্লাহকে যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা প্রকৃত পক্ষে তারই ইবাদাত কর।"(সূরা ফুসসিলাতঃ আয়াত-৩৭)

আল্লাহ আরো বলেন :

فَمَنْ كَانَ يَرْجُوا لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا (الكهف :১১০)

অর্থ :"সুতরাং,যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাত কামনা করে সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে।" (আল-কাহাফ : ১১০)
শুধু এসব অায়াতই নয় শির্ক সম্পর্কে অারো অনেক অায়াত ও হাদীস রয়েছে।
এবার বলুন,ওরশ করা স্পষ্ট শির্ক এবং শির্ক করার ভয়াবহ পরিণতি জানা সত্ত্বেও একজন সুস্থ বিবেকবান মুসলিম কিভাবে ওরশ করতে পারে?
---------------------------------
পর্ব :০৩
*********************
পূর্বের দু'টি পর্ব থেকে এ কথা স্পষ্ট যে ওরশ করা শুধু বিদা'অাতই নয় বরং শির্ক।অতএব,ওরশ করা মানে বিদা'অাত করা এবং শির্ক করা।
ওরশ করার অারো অপকারিতা অামি বর্ণনা করা প্রয়োজন মনে করছি।
অাল্লাহ তা'অালা পবিত্র কুরঅানে বলেন :-
حُرِّمَتۡ عَلَيۡكُمُ الۡمَيۡتَةُ وَالدَّمُ وَلَحۡمُ الۡخِنۡزِيۡرِ وَمَاۤ اُهِلَّ لِغَيۡرِ اللّٰهِ بِهٖ وَالۡمُنۡخَنِقَةُ وَالۡمَوۡقُوۡذَةُ وَالۡمُتَرَدِّيَةُ وَالنَّطِيۡحَةُ وَمَاۤ اَكَلَ السَّبُعُ اِلَّا مَا ذَكَّيۡتُمۡ وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ وَاَنۡ تَسۡتَقۡسِمُوۡا بِالۡاَزۡلَامِ‌ؕ ذٰلِكُمۡ فِسۡقٌ‌ؕ الۡيَوۡمَ يَٮِٕسَ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا مِنۡ دِيۡنِكُمۡ فَلَا تَخۡشَوۡهُمۡ وَاخۡشَوۡنِ‌ؕ الۡيَوۡمَ اَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِيۡنَكُمۡ وَاَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِىۡ وَرَضِيۡتُ لَكُمُ الۡاِسۡلَامَ دِيۡنًا‌ؕ فَمَنِ اضۡطُرَّ فِىۡ مَخۡمَصَةٍ غَيۡرَ مُتَجَانِفٍ لِّاٍِثۡمٍ‌ۙ فَاِنَّ اللّٰهَ غَفُوۡرٌ رَّحِيۡمٌ﴾

৩.) তোমাদের জন্য হারাম করে দেয়া হয়েছে মৃতজীব, রক্ত, শূকরের গোস্ত, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর নামে যবেহকৃত জীব এবং কণ্ঠরুদ্ধ হয়ে, আহত হয়ে, ওপর থেকে পড়ে গিয়ে বা ধাক্কা খেয়ে মরা অথবা কোন হিংস্র প্রাণী চিরে ফেলেছে এমন জীব, তোমরা জীবিত পেয়ে যাকে যবেহ করে দিয়েছো সেটি ছাড়া। আর যা কোন বেদীমূলে যবেহ করা হয়েছে (তাও তোমাদের জন্য হারাম করে দেয়া হয়েছে। ) এছাড়াও শর নিক্ষেপের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য নির্ণয় করাও তোমাদের জন্য জায়েয নয়।এগুলো ফাসেকীর কাজ। আজ তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে কাফেররা পুরোপুরি নিরাশ হয়ে পড়েছে। কাজেই তোমরা তাদেরকে ভয় করো না বরং আমাকে ভয় করো। আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি, আমার নিয়ামত তোমাদের প্রতি সম্পূর্ণ করেছি এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছি (কাজেই তোমাদের ওপর হালাল ও হারামের যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে তা মেনে চলো। ) তবে যদি কোন ব্যক্তি ক্ষুধার জ্বালায় বাধ্য হয়ে ঐগুলোর মধ্য থেকে কোন একটি জিনিস খেয়ে নেয় গুনাহের প্রতি কোন আকর্ষণ ছাড়াই, তাহলে নিঃসন্দেহে আল্লাহ ক্ষমাশীল ও অনুগ্রহকারী।
(সূরা মায়িদা, অায়াত :০৩)
উক্ত অায়াতে অাল্লাহ তা'অালা মৃতজীব,রক্ত,শূকরের গোস্তকে হারাম করার পাশাপাশি অাল্লাহ ব্যতীত অন্য কারোর নামে যবেহকৃত জীব খেতে নিষেধ করেছেন।ওরশ করার জন্য যে জীব যবেহ করা হয় তাতে যদি অাল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নাম নেয়া হয় তাহলে তা খাওয়া সম্পূর্ণ হারাম হবে।অার যদি ওরশে যবেহ করা জীবে অাল্লাহর নাম নেয়া হয় তবে মনে মনে অমুক বুযুর্গ বা অাউলিয়ার নাম নেয়া হয় বা তাঁদের নামে নিয়্যাত করা হয় তা-ও হারাম হবে।কেননা প্রত্যেকটা কাজই নিয়্যাতের উপর নির্ভরশীল।
রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "সকল আমল নিয়্যাতের উপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক ব্যক্তি তাই পাবে যা সে নিয়্যাত করবে। সুতরাং আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের দিকে যে হিজরাত করবে তার হিজরাত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে হবে। আর যে ব্যক্তি হিজরাত করবে দুনিয়ার উদ্দেশ্যে, কিংবা কোন মহিলাকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে, তাহলে তার হিজরাত হবে সেই দিকে যেদিকে সে হিজরাত করল। (বুখারী, মুসলিম)
অতএব,যবেহ করার সময় অাল্লাহর নাম নিলেও যদি নিয়্যাতে অাল্লাহর সাথে অন্য কারো নাম থাকে অথবা শুধু অন্য কারো নামে নিয়্যাত করা হয়,তা খাওয়া সম্পূর্ণ হারাম।
অার অাল্লাহ তা'অালা যা হারাম করেছেন,তাকে হালাল মনে করা কুফর।

মহান আল্লাহ্ তা'অালা বলেন,
ومن يعص الله ورسوله ويتعد حدوده يدخله نارا خالدا فيها وله عذاب مهين.
অর্থঃ- “যে কোন ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাফরমানি এবং তাঁর সীমা অতিক্রম করে, তিনি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সে সেখানে চিরকাল থাকবে এবং তার জন্য সেখানে রয়েছে লাঞ্ছিত শাস্তি।” (সূরা নিসা :১৪)

সূরা মায়িদার ৩ নম্বর অায়াতের ন্যায় সূরা বাকারার ১৭৩ নম্বর অায়াতেও অাল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে যবেহ করা পশুকে হারাম করা হয়েছে।
اِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيۡکُمُ الۡمَيۡتَةَ وَالدَّمَ وَلَحۡمَ الۡخِنۡزِيۡرِ وَمَآ اُهِلَّ بِهٖ لِغَيۡرِ اللّٰهِ‌ۚ فَمَنِ اضۡطُرَّ غَيۡرَ بَاغٍ وَّلَا عَادٍ فَلَآ اِثۡمَ عَلَيۡهِ‌ؕ اِنَّ اللّٰهَ غَفُوۡرٌ رَّحِيۡمٌ‏﴾

অর্থ :"আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে তোমাদের ওপর যদি কোন নিষেধাজ্ঞা থেকে থাকে তাহলে তা হচ্ছে এই যে, মৃতদেহ খেয়ো না, রক্ত ও শূকরের গোশত থেকে দূরে থাকো। আর এমন কোন জিনিস খেয়ো না যার ওপর আল্লাহ‌ ছাড়া আর কারোর নাম নেয়া হয়েছে।১৭১ তবে যে ব্যক্তি অক্ষমতার মধ্যে অবস্থান করে এবং এ অবস্থায় আইন ভঙ্গ করার কোন প্রেরণা ছাড়াই বা প্রয়োজনের সীমা না পেরিয়ে এর মধ্য থেকে কোনটা খায়, সেজন্য তার কোন গোনাহ হবে না। আল্লাহ‌ ক্ষমাশীল ও করুণাময়।"(আল-বাক্বারাহ ১৭৩)

এই অায়াতটিতেও অাল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নাম নেয়া জিনিস খেতে নিষেধ করা হয়েছে।
অতএব,উপরোক্ত অালোচনা থেকে এই সিদ্ধান্তে যাওয়া যায় যে ওরশে যবেহ করা পশুতে যদি অাল্লাহ তা'অালা ছাড়া অন্য কারো নাম নেয়া হয় অথবা অাল্লাহর নামের পাশাপাশি অন্য কারো নামও নেয়া হয় বা মুখে অাল্লাহর নাম নিলেও মনে মনে অন্য কারো নাম নেয়া হয়,অন্য কারো নামে নিয়্যাত করা হয় তাহলে ওরশকে বরকত মনে করা,ওরশের মাংস খাওয়া হালাল মনে করা কুফর।
কারণ অাল্লাহ তা'অালা যা হারাম করেছেন,তাকে হালাল মনে করা কুফর।
অাবার যারা অাউলিয়া-বুযুর্গদের ওরশ এজন্য করে যাতে ঐ অাউলিয়া-বুযুর্গদের মাধ্যমে তারা অাল্লাহর নিকটবর্তী হতে পারে,তারা মিথ্যাবাদী কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
কারণ আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন :- أَلَا لِلَّه
ِ الدِّينُ الْخَالِصُ ۚ وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَىٰ إِنَّ اللَّهَ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ فِي مَا هُمْ فِيهِ يَخْتَلِفُونَ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي مَنْ هُوَ كَاذِبٌ كَفَّارٌ
"জেনে রাখুন, নিষ্ঠাপূর্ণ এবাদত আল্লাহরই নিমিত্ত। যারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে রেখেছে এবং বলে যে আমরা তাদের এবাদত এ জন্যেই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। নিশ্চয় আল্লাহ তাদের মধ্যে তাদের পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা করে দেবেন। আল্লাহ মিথ্যাবাদী কাফেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।"(৩৯,৩)
এবার অাপনারাই ভেবে দেখুন,ওরশ করা বা ওরশের মাংস খাওয়া যাবে কিনা।

--------------------------------
পর্ব :০৪/শেষ পর্ব
*********************
পূর্বের পর্ব তিনটির অালোচনা থেকে এই কথা স্পষ্ট যে ওরশ করা মানে একই সাথে (ভিন্ন ভিন্ন কারণে) বিদা'অাত করা,শির্ক করা,কখনো কখনো কুফরও করা।এতসব অপকারিতা থাকার পরও মিথ্যা সওয়াবের দোহাই দিয়ে ধর্মব্যবসার উদ্দেশ্যে কেউ এতবড় গুনাহগার কিভাবে হতে পারে অামি জানিনা।তবে অামার এই লেখাটা ধর্মব্যবসায়ী কিংবা অন্ধবিশ্বাসীদের উদ্দেশ্যে নয়।বরং তাদের উদ্দেশ্যে যারা ইসলামের প্রকৃত সত্যের পথে চলতে চাই।
যারা এতদিন ভুল করে,না জেনে ওরশ করেছেন বা ওরশে অংশগ্রহণ করেছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই,
অাপনারা অার কতদিন কথিত পীর অার বাপ-দাদাদের প্রতি অন্ধভক্তি ও অন্ধবিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে নিজের প্রতি এরূপ জুলুম করবেন?অাজ না হয় কাল।সবাইকেই একদিন অবশ্যই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।মৃত্যুর পর অাপনাদের এসব পূর্বপুরুষদের প্রতি অন্ধভক্তি ও অন্ধবিশ্বাস কোনো কাজেই অাসবেনা।বরং কাজে অাসবে অাপনি কতটুকু অাল্লাহর কিতাব কুরঅান ও তাঁর রসূল(সঃ) এর হাদিস অামল করেছেন।মনে রাখবেন অন্ধবিশ্বাসের কারণেই অাবু জাহেল,অাবু লাহাবরা জাহান্নামী।অাবার অনেককেই বলতে দেখি যে চারপাশের প্রতিকূল পরিবেশ অার সমাজের কারণে তারা নাকি জেনেও এসব অন্ধত্বে ডুবে থাকে।তারা বোধ হয় জানেননা যে অাবু তালিব মহানবীর(সঃ) শুভাকাঙ্কী হওয়ার পরও তিনি জাহান্নামে যাবেন।কারণ অাবু তালিব ইসলাম গ্রহণ করেননি।অার তিনি কেন ইসলাম গ্রহণ করেননি জানেন?শুধুমাত্র চারপাশের সমাজের কারণে।তাই বলে কি তিনি জান্নাতে যাবেন?না।বরং সমাজের অার প্রতিকূল পরিবেশের দোহাই দিয়ে কেউ অাল্লাহ তা'অালার বিচার থেকে পার পাবেনা।
(সমাপ্ত)

সকল কাজের মূলেই যেন থাকে খোদার সন্তুষ্টি অর্জন

লেখা: মুহাম্মাদ আইনান ইকবাল আপনারা হয়তো মুসলিম জাহানের ৪র্থ খলিফা হযরত আলী ইবনে আবু তালিবের (রাঃ) সেই ঘটনাটি শোনেছেন। একদা যুদ্ধের ময়দান...