Friday, November 17, 2017

দুই হাজার একশো সতের সালের একদিন


২১১৭ সাল...
(বিজ্ঞান এখন অনেক উন্নত।মানুষের জীবন অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে।অামি গল্পে ২১১৭ সালের একটি দিনের কথা বর্ণনা করছি।)
জাবের অাজ ঘুম থেকে দেরি করে উঠল।কারণ অাজ ছুটির দিন।অফিস বন্ধ।
তাই সে ব্রেইনফোন দিয়ে তার বন্ধু রাকিবের সাথে যোগাযোগ করল।রাকিবকে সে অাজ তার বাসায় অাসতে বলল।
জানি অাপনারা ভাবছেন,ব্রেইনফোন অাবার কি।ব্রেইনফোন হলো নব্য অাবিষ্কৃত এমন একটি যোগাযোগ করার যন্ত্র যার মাধ্যমে অাপনি কি ভাবছেন তা অাপনার বন্ধুকে দূর থেকে বুঝাতে পারেন।এক্ষেত্রে দু'পক্ষে দু'টি যন্ত্র (যার মধ্যে একটি হলো প্রেরক ও অারেকটি গ্রাহক যন্ত্র) প্রয়োজন।অার এই যন্ত্রের মাধ্যমে অাপনি যার সাথে যোগাযোগ করতে চান তার নির্দিষ্ট চার ডিজিটের নম্বর অাপনার যন্ত্রটিতে টাইপ করতে হবে।
যাই হোক,রাকিব এল।রাকিবকে দেখে জাবেরও অনেক খুশি।বলে রাখা ভালো যে রাকিব অার জাবের ছুটির দিনে কোনো না কোনো বিষয়ে অালোচনা করে।তাই অাজও তার ব্যতিক্রম হলোনা।খাওয়া-দাওয়া শেষ করে তারা চিন্তা করেছে অাজ একটু ভিন্নধর্মী বিষয় নিয়ে অালোচনা করবে।তাদের অাজকের অালোচনার টপিক : 'একুশ শতকের বিজ্ঞান'।
রাকিব জাবেরকে  বলল,"ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায়,একুশ শতকের মানুষেরা বিজ্ঞান বিষয়ে অনেক অাগ্রহী ছিলেন এবং অনেক কিছু অাবিষ্কারও করেছিলেন।কিন্তু হাস্যকর ব্যাপার হলো,তাদের অনেকেই ভাবতেন যে তারা বিজ্ঞান বিষয়ে প্রায় জ্ঞানই অর্জন করে ফেলেছেন।তারা নিজেদেরকে অাধুনিক বিশ্বের মানুষ বলেও দাবী করতেন।"
জাবের হেসে বলল,"তারা যদি এত অাধুনিক হতেন তাহলে অাজকের মানুষেরা কি!"
জাবের অারও বলল,"অাসলে একুশ শতকে অনেক কিছু অাবিষ্কার হয়ে ছিল ঠিক।তবে তাই বলে একুশ শতককে অত্যাধুনিক বলা যায়না।"
রাকিব বলল,"একদম ঠিক কথা।শুনেছি তারা নাকি যোগাযোগের জন্য একটি যন্ত্র ব্যবহার করতেন যার নাম ছিল মোবাইল।এটার গঠন প্রকৃতি নাকি অামাদের অাজকের ব্রেইনফোনের মতো ছিল।কিন্তু কার্যকারিতা ব্রেইনফোন থেকে অালাদা।এই সম্পর্কে তোর কি মতামত?"
জাবের : হ্যা দোস্ত।কিন্তু যন্ত্রটার কথা শুনে অামার কেমন জানি অাজব অাজব লাগে।অাচ্ছা তুই কি তাদের সম্পর্কে অারেকটি মজার কথা জানস?
রাকিব : না।কি?
জাবের : তাদের মধ্যে নাকি কোনো কোনো মানুষ  ছিল যারা অাল্লাহকে অস্বীকার করত!
রাকিব : কি বলছ!তারা এতই পাগল ছিল।
জাবের : সবাই না।তবে কিছু কিছু মানুষ ছিল যারা কিনা ভাবত অাল্লাহ বলতে কিছু নেই।অারও হাস্যকর ব্যাপার হলো তারা নাকি ভাবত তারা নিজে নিজেই সৃষ্টি হয়েছে।ঐ গুটিকয়েক পাগলগুলা নাকি ভাবত তারা বানর থেকে মানুষে পরিণত হয়েছে।তারা নাকি 'বিবর্তনবাদ' নামক একটি কল্পকাহিনীতেও বিশ্বাস করত।অার এই কল্পকাহিনীর মূল কথা ছিল যে অনেক প্রাণী বিবর্তনের মাধ্যমে অন্য প্রাণীতে পরিণত হয়েছে।যেমন : বানর থেকে মানুষ।
রাকিব : হা হা।কি বলছ!এমন পাগলও পৃথিবীতে ছিল!
জাবের : হ্যা বন্ধু।অাবার এরাই নাকি নিজেদেরকে বিজ্ঞানমনস্ক বলে দাবী করতো।তারা নাকি অাবার অাল্লাহর বিধানকেও অস্বীকার করতো।
রাকিব : অাহারে!তখনের এই মানুষগুলা কতই না অজ্ঞ অার অশিক্ষিত ছিল।যারা একদিকে নিজেদেরকে বিজ্ঞানমনস্ক দাবী করতো অন্যদিকে স্রষ্টার অস্তিত্বকে পর্যন্ত অস্বীকার করত।কিন্তু বাইশ শতকের এই অাধুনিক অথচ গতিশীল বিশ্বেতো স্রষ্টাকে অস্বীকার করা সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক।অাজকের বিজ্ঞান বলে অাল্লাহ ছাড়া দুনিয়া সৃষ্টিই অসম্ভব।অার কি যেন কাল্পনিক গল্পকাহিনী বললি!
জাবের : বিবর্তনবাদ!
রাকিব : হ্যা।এই বিবর্তনবাদওতো অযৌক্তিক।অাজকের বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে পৃথিবীর সব মানুষ সর্বপ্রথম এক পুরুষ ও এক নারী থেকেই এসেছে।
জাবের : হুম।অাসলে ঐ সময়ের কিছু মানুষ অাল্লাহ তা'অালা,তাঁর বিধান কুরঅান ও তাঁর পয়গম্বরের প্রতি বিশ্বাস না করে অযৌক্তিকভাবে কতগুলো অর্ধশিক্ষিত বিজ্ঞানীদের প্রতি অন্ধবিশ্বাস করেছিল।অার তারা বোধ হয় জানতোই না যে বিজ্ঞান গতিশীল ও পরিবর্তনশীল।অন্যদিকে ইসলাম পরিপূর্ণ।
রাকিব : একদম ঠিক।এখন যদি কেউ এমন ভাবনা নিয়ে চলে তবে তাকে কি বলা যায়?
জাবের : বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের এই যুগে কেউ অাল্লাহ,তাঁর বিধান কুরঅান ও তাঁর রসূলকে অস্বীকার করলে সে হয়ত পাগল অথবা বেকুব।অবশ্য এখন বোধ হয় এমন কোনো গাধা নেই।
রাকিব : হ্যা একদম ঠিক।অাসলে এরা ছিল বিজ্ঞানান্ধ।অাচ্ছা দোস্ত এসব অবৈজ্ঞানিক অর্ধশিক্ষিত বেকুবদের কথা অার অালোচনা করে লাভ নাই।অার একুশ শতকের সবাই কিন্তু এমন ছিলেননা।অনেকেই ছিলেন পূর্ণ ঈমানদার।
জাবের : হ্যা দোস্ত।যাই হোক,চল একটু বাইরে থেকে ঘুরে অাসি।
রাকিব : ওকে।চল।
---- Muhammad Ainan Iqbal

Monday, October 30, 2017

ওরশ করা যাবে কি?


লেখক : Muhammad Ainan Iqbal
----------------------------------------------------
 পর্ব :০১
********************
চলুন প্রথমে জেনে নিই যে ওরশ কাকে বলে।মূলত বছরে একটি নির্দিষ্ট দিনকে উদ্দেশ্য করে কোনো কথিত বা প্রকৃত বুযুর্গ অথবা অাউলিয়া,যিনি কিনা মৃত,তার মৃত্যু দিবস অথবা জন্ম দিবসকে কেন্দ্র করে তার নামে বা অাল্লাহর নামে অথবা অাল্লাহ তা'অালার সাথে সাথে এই বুযুর্গ বা অাউলিয়ার নাম নিয়ে কোনো পশু যবেহ করে,বিশেষ কোনো অানন্দ অনুষ্ঠানের অায়োজন করা,খাবারের অায়োজন করাকে সাধারণত ওরশ বলে।
ওরশের উদ্দেশ্য থাকে যেই বুযুর্গ বা অাউলিয়ার জন্য ওরশ করা হলো তার মাধ্যমে অাল্লাহর কাজ থেকে কিছু সওয়াব অর্জন করা।
ওরশ করা যাবেনা।কারণ প্রথমতঃ ওরশ বিদা'অাতের অন্তর্ভুক্ত।
ওরশ বিদা'অাতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণ হলো কুরঅান ও হাদীসে ওরশ করার কথা নেই।
অার যা কুরঅানে বা হাদীসে নেই তা যদি কেউ ইবাদত মনে করে সওয়াবের উদ্দেশ্যে করে তাহলে সুস্পষ্ট বিদা'অাত হবে।
বিদা'অাত বলতে ধর্মে নতুন কিছু সংযোজন করাকে বুঝায়।
বিদা'অাতের কুফল সম্পর্কে পবিত্র কুরঅানেই সংক্ষিপ্তভভাবে বলে দেয়া হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন -
"অতঃপর সত্যের পর ভ্রষ্টতা ছাড়া কী থাকে?" (সূরা ইউনুস আয়াত : ৩২)
অর্থ্যাৎ,ইসলাম পূর্ণতা লাভ করার পর ইসলামের নামে দ্বীনের মধ্যে যা কিছু সংযোজিত, আবিস্কৃত ও প্রচলিত হবে সব কিছুই ভ্রান্ত বলে প্রত্যাখ্যাত হবে। আর তা বিদা'আত বলে গণ্য হবে।
আল্লাহ তা'আলা অন্যত্র বলেন -
"আমি এ কিতাবে কোন কিছু বাদ রাখিনি।" (সূরা আন'আম, আয়াত : ৩৮)
অর্থাৎ, আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনুল কারীমে সব কিছু যখন বলে দিয়েছেন তখন ধর্মে নতুন কোন বিষয় সংযোজন বা বিয়োজন করার প্রয়োজন নেই। যে কোন ধরনের সংযোজন ও বিয়োজনই বিদা'আত বলে গণ্য হবে।
তাই যেহেতু ওরশের কথা কুরঅান ও হাদীসে নেই,তাই ওরশ করা বিদাঅাত।
আয়েশা রাঃ বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, " যে ব্যক্তি এমন আমল করল যাতে আমার কোন নির্দেশনা নেই,  তা পরিত্যাজ্য।" ( মুসলিম হাদীস,১৭১৮ )
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি এমন আমল করবে যার ব্যাপারে আমার শরীয়তের নির্দেশনা নেই, উহা প্রত্যাখ্যাত।” (মুসলিম হাদীস,৩২৪৩)

অার এই কারণেই ওরশ করা যাবেনা যেহেতু এই ব্যাপারে রসূলুল্লাহর(স:) কোনো নির্দেশনা নেই।

তিনি আরো বলেন- " নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম কথা হচ্ছে আল্লাহ্‌র কিতাব, সর্বোত্তম পদ্ধতি হচ্ছে রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর পদ্ধতি। আর নিকৃষ্ট কাজ হচ্ছে শরীয়াতে নতুন কিছু সৃষ্টি করা, এবং প্রত্যেক বিদা'আত হচ্ছে ভ্রষ্টতা। (মুসলিমঃ ৭৬৮)
যেহেতু ওরশ বিদা'অাত অর্থ্যাৎ এর কথা কুরঅান ও হাদীসে নেই সুতরাং উপরোক্ত হাদীস অনুযায়ী এটি ভ্রষ্টতা।
---------------------------------
পর্ব :০২
*********************
পূর্বের অালোচনা থেকে এই কথা নিশ্চিত ও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে ওরশ করা বিদা'অাত।অতএব,ওরশ করা যাবেনা।অাজকে ওরশ করতে না পারার অারেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ বর্ণনা করছি।
ওরশ করা যাবেনা কারণ ওরশ শির্কেরও অন্তর্ভুক্ত।ওরশ কেন শির্কের অন্তর্ভুক্ত তা বুঝতে হলে অামাদের অবশ্যই শির্ক সম্পর্কে জানতে হবে।প্রথম পর্বে যেহেতু অামি ওরশের সংজ্ঞা দিয়েছি,তাই এখন দ্বিতীয়বার ওরশের সংজ্ঞা দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিনা।
অামি এখন শির্কের সংক্ষিপ্ত এবং সহজ অথচ প্রকৃত সংজ্ঞাটি দেয়ার চেষ্টা করছি।
অারবি 'শির্ক' শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো  সংযুক্তি, সম্মিলন, মিশ্রণ, শামিল বা অংশীদারিত্ব।
ইশরাক বা শরীক করার অর্থ হলো কোনকিছুকে মিশ্রিত করা, যুক্ত করা, মিলানো, একত্রিত করা, শামিল বা অংশীদার করা। শির্ক শব্দ থেকে উদগত ও রূপান্তরিত প্রতিটি শব্দের মধ্যে তার এ মৌলিক অর্থগুলো পাওয়া যায়।
অহএব,অাল্লাহর সাথে অন্যকিছুকে বা অন্য কাউকে যেকোনো দিক থেকে শরীক করাই শির্ক।শির্ক হতে পারে অাল্লাহ তা'অালার নাম,গুণাবলী,মর্যাদা,ক্ষমতা ইত্যাদির সাথে অন্য কারো নাম,গুণাবলী,মর্যাদা,ক্ষমতা ইত্যাদির তুলনা করলে,অংশীদার করলে,প্রাধান্য দিলে।
এখন চলুন যেনে অাসি ওরশ কেন শির্ক হবে।ওরশে যদি অাল্লাহ ব্যতীত অার কারো নামে পশু যবেহ করা হয়,তবে তা সুস্পষ্ট শির্ক।কারণ কুরঅানেই বলা অাছে,একমাত্র অাল্লাহর নামে পশু যবেহ করার কথা।অতএব,অাল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নাম নেয়া হলে তা অাল্লাহর নামের ওপর তাকে প্রাধান্য দেয়া হয়,যা সুস্পষ্ট শির্ক।যদি ওরশে পশু যবেহ করার সময় অাল্লাহর নাম নেয়া হলো এবং সাথে অন্য কারো নামও নেয়া হলো তবে তা-ও শির্ক হবে।কেননা এক্ষেত্রে অাল্লাহর নামের সাথে অন্য কারো নামকে অংশীদ্বার করা হলো,শরীক করা হলো।
যদি ওরশে যবেহ করা প্রাণীতে শুধু অাল্লাহর নামও নেয়া হয় তবু তা শির্কের অন্তর্ভুক্ত হবে।এর একটি কারণও রয়েছে।এই কারণটি অতি সুক্ষ্ম তাই অনেকে উপলব্ধি করতে পারেনা।অাবার অনেকে বুঝতে পারলেও অন্ধভক্তির কারণে ভুল পথে থেকে যায়।চলুন এবার যেনে অাসি কি সেই কারণ।ওরশ করার উদ্দেশ্যই থাকে অমুক বুযুর্গ বা অাউলিয়াকে মর্যাদা দেয়ার মাধ্যমে তার সন্তুষ্টি অর্জন করে সওয়াব লাভ করা।কিন্ত এরূপ মর্যাদা যেখানে কিনা উদ্দেশ্য থাকে অমুক বুযুর্গ বা অাউলিয়ার  সন্তুষ্টি অর্জন করে সওয়াব লাভ করা,তা সম্পূর্ণ শির্ক।কারণ কেবলমাত্র অাল্লাহকেই সন্তুষ্ট করে সওয়াব লাভ করা যাবে।ওরশে সওয়াব লাভের জন্য অাল্লাহ তা'অালার সাথে বান্দার সন্তুষ্টি ও মর্যাদাকেও শরীক করা হচ্ছে,অংশীদ্বার করা হচ্ছে,যা সুষ্পষ্ট শির্ক।
অাশা করি,ওরশ কেন শির্কের অন্তর্ভুক্ত তা বুঝা গেল।
চলুন এবার শির্কের পরিণতি সম্পর্কে কিছুটা জেনে অাসি।
শির্ক সম্পর্কে অাল্লাহ বলেন,إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ  (لقمان : )
অর্থ :"নিশ্চয় শির্ক চরম জুলুম।" (লুকমান : ১৩)

মহান আল্লাহ তা'অালা অারো বলেন,"তোমরা সূর্যকে সেজদা করোনা, চন্দ্রকে ও নয়, সেজদা কর সেই আল্লাহকে যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা প্রকৃত পক্ষে তারই ইবাদাত কর।"(সূরা ফুসসিলাতঃ আয়াত-৩৭)

আল্লাহ আরো বলেন :

فَمَنْ كَانَ يَرْجُوا لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا (الكهف :১১০)

অর্থ :"সুতরাং,যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাত কামনা করে সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে।" (আল-কাহাফ : ১১০)
শুধু এসব অায়াতই নয় শির্ক সম্পর্কে অারো অনেক অায়াত ও হাদীস রয়েছে।
এবার বলুন,ওরশ করা স্পষ্ট শির্ক এবং শির্ক করার ভয়াবহ পরিণতি জানা সত্ত্বেও একজন সুস্থ বিবেকবান মুসলিম কিভাবে ওরশ করতে পারে?
---------------------------------
পর্ব :০৩
*********************
পূর্বের দু'টি পর্ব থেকে এ কথা স্পষ্ট যে ওরশ করা শুধু বিদা'অাতই নয় বরং শির্ক।অতএব,ওরশ করা মানে বিদা'অাত করা এবং শির্ক করা।
ওরশ করার অারো অপকারিতা অামি বর্ণনা করা প্রয়োজন মনে করছি।
অাল্লাহ তা'অালা পবিত্র কুরঅানে বলেন :-
حُرِّمَتۡ عَلَيۡكُمُ الۡمَيۡتَةُ وَالدَّمُ وَلَحۡمُ الۡخِنۡزِيۡرِ وَمَاۤ اُهِلَّ لِغَيۡرِ اللّٰهِ بِهٖ وَالۡمُنۡخَنِقَةُ وَالۡمَوۡقُوۡذَةُ وَالۡمُتَرَدِّيَةُ وَالنَّطِيۡحَةُ وَمَاۤ اَكَلَ السَّبُعُ اِلَّا مَا ذَكَّيۡتُمۡ وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ وَاَنۡ تَسۡتَقۡسِمُوۡا بِالۡاَزۡلَامِ‌ؕ ذٰلِكُمۡ فِسۡقٌ‌ؕ الۡيَوۡمَ يَٮِٕسَ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا مِنۡ دِيۡنِكُمۡ فَلَا تَخۡشَوۡهُمۡ وَاخۡشَوۡنِ‌ؕ الۡيَوۡمَ اَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِيۡنَكُمۡ وَاَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِىۡ وَرَضِيۡتُ لَكُمُ الۡاِسۡلَامَ دِيۡنًا‌ؕ فَمَنِ اضۡطُرَّ فِىۡ مَخۡمَصَةٍ غَيۡرَ مُتَجَانِفٍ لِّاٍِثۡمٍ‌ۙ فَاِنَّ اللّٰهَ غَفُوۡرٌ رَّحِيۡمٌ﴾

৩.) তোমাদের জন্য হারাম করে দেয়া হয়েছে মৃতজীব, রক্ত, শূকরের গোস্ত, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর নামে যবেহকৃত জীব এবং কণ্ঠরুদ্ধ হয়ে, আহত হয়ে, ওপর থেকে পড়ে গিয়ে বা ধাক্কা খেয়ে মরা অথবা কোন হিংস্র প্রাণী চিরে ফেলেছে এমন জীব, তোমরা জীবিত পেয়ে যাকে যবেহ করে দিয়েছো সেটি ছাড়া। আর যা কোন বেদীমূলে যবেহ করা হয়েছে (তাও তোমাদের জন্য হারাম করে দেয়া হয়েছে। ) এছাড়াও শর নিক্ষেপের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য নির্ণয় করাও তোমাদের জন্য জায়েয নয়।এগুলো ফাসেকীর কাজ। আজ তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে কাফেররা পুরোপুরি নিরাশ হয়ে পড়েছে। কাজেই তোমরা তাদেরকে ভয় করো না বরং আমাকে ভয় করো। আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি, আমার নিয়ামত তোমাদের প্রতি সম্পূর্ণ করেছি এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছি (কাজেই তোমাদের ওপর হালাল ও হারামের যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে তা মেনে চলো। ) তবে যদি কোন ব্যক্তি ক্ষুধার জ্বালায় বাধ্য হয়ে ঐগুলোর মধ্য থেকে কোন একটি জিনিস খেয়ে নেয় গুনাহের প্রতি কোন আকর্ষণ ছাড়াই, তাহলে নিঃসন্দেহে আল্লাহ ক্ষমাশীল ও অনুগ্রহকারী।
(সূরা মায়িদা, অায়াত :০৩)
উক্ত অায়াতে অাল্লাহ তা'অালা মৃতজীব,রক্ত,শূকরের গোস্তকে হারাম করার পাশাপাশি অাল্লাহ ব্যতীত অন্য কারোর নামে যবেহকৃত জীব খেতে নিষেধ করেছেন।ওরশ করার জন্য যে জীব যবেহ করা হয় তাতে যদি অাল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নাম নেয়া হয় তাহলে তা খাওয়া সম্পূর্ণ হারাম হবে।অার যদি ওরশে যবেহ করা জীবে অাল্লাহর নাম নেয়া হয় তবে মনে মনে অমুক বুযুর্গ বা অাউলিয়ার নাম নেয়া হয় বা তাঁদের নামে নিয়্যাত করা হয় তা-ও হারাম হবে।কেননা প্রত্যেকটা কাজই নিয়্যাতের উপর নির্ভরশীল।
রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "সকল আমল নিয়্যাতের উপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক ব্যক্তি তাই পাবে যা সে নিয়্যাত করবে। সুতরাং আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের দিকে যে হিজরাত করবে তার হিজরাত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে হবে। আর যে ব্যক্তি হিজরাত করবে দুনিয়ার উদ্দেশ্যে, কিংবা কোন মহিলাকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে, তাহলে তার হিজরাত হবে সেই দিকে যেদিকে সে হিজরাত করল। (বুখারী, মুসলিম)
অতএব,যবেহ করার সময় অাল্লাহর নাম নিলেও যদি নিয়্যাতে অাল্লাহর সাথে অন্য কারো নাম থাকে অথবা শুধু অন্য কারো নামে নিয়্যাত করা হয়,তা খাওয়া সম্পূর্ণ হারাম।
অার অাল্লাহ তা'অালা যা হারাম করেছেন,তাকে হালাল মনে করা কুফর।

মহান আল্লাহ্ তা'অালা বলেন,
ومن يعص الله ورسوله ويتعد حدوده يدخله نارا خالدا فيها وله عذاب مهين.
অর্থঃ- “যে কোন ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাফরমানি এবং তাঁর সীমা অতিক্রম করে, তিনি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সে সেখানে চিরকাল থাকবে এবং তার জন্য সেখানে রয়েছে লাঞ্ছিত শাস্তি।” (সূরা নিসা :১৪)

সূরা মায়িদার ৩ নম্বর অায়াতের ন্যায় সূরা বাকারার ১৭৩ নম্বর অায়াতেও অাল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে যবেহ করা পশুকে হারাম করা হয়েছে।
اِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيۡکُمُ الۡمَيۡتَةَ وَالدَّمَ وَلَحۡمَ الۡخِنۡزِيۡرِ وَمَآ اُهِلَّ بِهٖ لِغَيۡرِ اللّٰهِ‌ۚ فَمَنِ اضۡطُرَّ غَيۡرَ بَاغٍ وَّلَا عَادٍ فَلَآ اِثۡمَ عَلَيۡهِ‌ؕ اِنَّ اللّٰهَ غَفُوۡرٌ رَّحِيۡمٌ‏﴾

অর্থ :"আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে তোমাদের ওপর যদি কোন নিষেধাজ্ঞা থেকে থাকে তাহলে তা হচ্ছে এই যে, মৃতদেহ খেয়ো না, রক্ত ও শূকরের গোশত থেকে দূরে থাকো। আর এমন কোন জিনিস খেয়ো না যার ওপর আল্লাহ‌ ছাড়া আর কারোর নাম নেয়া হয়েছে।১৭১ তবে যে ব্যক্তি অক্ষমতার মধ্যে অবস্থান করে এবং এ অবস্থায় আইন ভঙ্গ করার কোন প্রেরণা ছাড়াই বা প্রয়োজনের সীমা না পেরিয়ে এর মধ্য থেকে কোনটা খায়, সেজন্য তার কোন গোনাহ হবে না। আল্লাহ‌ ক্ষমাশীল ও করুণাময়।"(আল-বাক্বারাহ ১৭৩)

এই অায়াতটিতেও অাল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নাম নেয়া জিনিস খেতে নিষেধ করা হয়েছে।
অতএব,উপরোক্ত অালোচনা থেকে এই সিদ্ধান্তে যাওয়া যায় যে ওরশে যবেহ করা পশুতে যদি অাল্লাহ তা'অালা ছাড়া অন্য কারো নাম নেয়া হয় অথবা অাল্লাহর নামের পাশাপাশি অন্য কারো নামও নেয়া হয় বা মুখে অাল্লাহর নাম নিলেও মনে মনে অন্য কারো নাম নেয়া হয়,অন্য কারো নামে নিয়্যাত করা হয় তাহলে ওরশকে বরকত মনে করা,ওরশের মাংস খাওয়া হালাল মনে করা কুফর।
কারণ অাল্লাহ তা'অালা যা হারাম করেছেন,তাকে হালাল মনে করা কুফর।
অাবার যারা অাউলিয়া-বুযুর্গদের ওরশ এজন্য করে যাতে ঐ অাউলিয়া-বুযুর্গদের মাধ্যমে তারা অাল্লাহর নিকটবর্তী হতে পারে,তারা মিথ্যাবাদী কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
কারণ আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন :- أَلَا لِلَّه
ِ الدِّينُ الْخَالِصُ ۚ وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَىٰ إِنَّ اللَّهَ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ فِي مَا هُمْ فِيهِ يَخْتَلِفُونَ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي مَنْ هُوَ كَاذِبٌ كَفَّارٌ
"জেনে রাখুন, নিষ্ঠাপূর্ণ এবাদত আল্লাহরই নিমিত্ত। যারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে রেখেছে এবং বলে যে আমরা তাদের এবাদত এ জন্যেই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। নিশ্চয় আল্লাহ তাদের মধ্যে তাদের পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা করে দেবেন। আল্লাহ মিথ্যাবাদী কাফেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।"(৩৯,৩)
এবার অাপনারাই ভেবে দেখুন,ওরশ করা বা ওরশের মাংস খাওয়া যাবে কিনা।

--------------------------------
পর্ব :০৪/শেষ পর্ব
*********************
পূর্বের পর্ব তিনটির অালোচনা থেকে এই কথা স্পষ্ট যে ওরশ করা মানে একই সাথে (ভিন্ন ভিন্ন কারণে) বিদা'অাত করা,শির্ক করা,কখনো কখনো কুফরও করা।এতসব অপকারিতা থাকার পরও মিথ্যা সওয়াবের দোহাই দিয়ে ধর্মব্যবসার উদ্দেশ্যে কেউ এতবড় গুনাহগার কিভাবে হতে পারে অামি জানিনা।তবে অামার এই লেখাটা ধর্মব্যবসায়ী কিংবা অন্ধবিশ্বাসীদের উদ্দেশ্যে নয়।বরং তাদের উদ্দেশ্যে যারা ইসলামের প্রকৃত সত্যের পথে চলতে চাই।
যারা এতদিন ভুল করে,না জেনে ওরশ করেছেন বা ওরশে অংশগ্রহণ করেছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই,
অাপনারা অার কতদিন কথিত পীর অার বাপ-দাদাদের প্রতি অন্ধভক্তি ও অন্ধবিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে নিজের প্রতি এরূপ জুলুম করবেন?অাজ না হয় কাল।সবাইকেই একদিন অবশ্যই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।মৃত্যুর পর অাপনাদের এসব পূর্বপুরুষদের প্রতি অন্ধভক্তি ও অন্ধবিশ্বাস কোনো কাজেই অাসবেনা।বরং কাজে অাসবে অাপনি কতটুকু অাল্লাহর কিতাব কুরঅান ও তাঁর রসূল(সঃ) এর হাদিস অামল করেছেন।মনে রাখবেন অন্ধবিশ্বাসের কারণেই অাবু জাহেল,অাবু লাহাবরা জাহান্নামী।অাবার অনেককেই বলতে দেখি যে চারপাশের প্রতিকূল পরিবেশ অার সমাজের কারণে তারা নাকি জেনেও এসব অন্ধত্বে ডুবে থাকে।তারা বোধ হয় জানেননা যে অাবু তালিব মহানবীর(সঃ) শুভাকাঙ্কী হওয়ার পরও তিনি জাহান্নামে যাবেন।কারণ অাবু তালিব ইসলাম গ্রহণ করেননি।অার তিনি কেন ইসলাম গ্রহণ করেননি জানেন?শুধুমাত্র চারপাশের সমাজের কারণে।তাই বলে কি তিনি জান্নাতে যাবেন?না।বরং সমাজের অার প্রতিকূল পরিবেশের দোহাই দিয়ে কেউ অাল্লাহ তা'অালার বিচার থেকে পার পাবেনা।
(সমাপ্ত)

Tuesday, October 17, 2017

অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে কেন?


লেখক : মুহাম্মাদ অাইনান ইকবাল

'তোমার কি দরকার অমুকের বিরোধীতা করার?'
'প্রত্যেকেই নিজের নীতির উপর থাকুক।তোমার কি অাসে যায়?'
'সে অন্যায় করেছে,সে শাস্তি পাবে।তুমি কেন প্রতিবাদ করছ?'
-এই প্রশ্নগুলো ও এর সমার্থক প্রশ্নগুলো শুনতে শুনতে একদম তিক্ত-বিরক্ত হয়ে গেলাম।তাই এই প্রশ্নগুলোর অাড়ালে মূল যেই প্রশ্নটা লুকে অাছে তার উত্তর দিলেই ইনশাঅাল্লাহ সব প্রশ্নের উত্তর চলে অাসবে।এখানে সব প্রশ্নেরই ভেতর মূল যে প্রশ্নটি লুকে অাছে তা হলো,"অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে কেন?"
প্রথমেই বলে নিই একজন প্রকৃত মুসলিমের কর্তব্য হলো মহান অাল্লাহ রব্বুল অালামিনের নিকট নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করা।তাঁর দেয়া সর্বশ্রেষ্ঠ  কিতাব কুরঅানুল মাজীদের অাদেশ-নিষেধ মেনে চলা ও তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ পয়গম্বর মুহাম্মাদ মোস্তফা(স:) এর দেখানো পথে চলা।
অার কুরঅানুল মাজীদেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করার কথা বলা হয়েছে।
অাল্লাহ তা'অালা বলেন :-

"আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা
উচিত, যারা আহ্বান জানাবে, সৎকর্মের প্রতি,
নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং নিষেধ করবে
অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম।"[সূরা
আল-ই ইমরান:আয়াত- ১০৪]
"তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত।মানবজাতির
কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে।
তোমরা সৎ কাজের আদেশ দান করবে ও অন্যায়
কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান
আনবে।"
[সূরা আল-ই ইমরান: আয়াত-১১০]
উক্ত অায়াতগুলো থেকে চিন্তাশীল ব্যক্তি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবে যে এসব অায়াতে মহান রব অাল্লাহ তা'অালা তাঁর সর্বশেষ রসূলের(স:) উম্মতদেরকে অন্যায়ের প্রতিবাদ কঠোরভাবে করতে বলেছেন।
শুধু যে কুরঅানুল মাজীদেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে বলা হয়েছে তা নয় বরং রসূলুল্লাহর (স:) হাদীসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে,
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা
আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, "তোমাদের
কেউ যদি কোনো অন্যায় কাজ সম্পাদিত হতে
দেখে সে যেন তা তার হাত দ্বারা (শক্তি প্রয়োগ
করে) প্রতিহত করে, এতে সমর্থ না হলে মৌখিক
ভাবে তা প্রতিহত করবে, এতেও সমর্থ না হলে অন্তরে
(ঘৃণার মাধ্যমে) প্রত্যাখ্যান করবে। আর এটা দুর্বলতম
ঈমানের পরিচায়ক।"
(সহীহ মুসলিম শরীফ)
প্রিয় পাঠক উক্ত হাদীসে রসূলুল্লাহ(স:) নিজের শক্তি প্রয়োগ করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে বলেছেন।এতে ব্যর্থ হলে মৌখিকভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে বলেছন।অার তাতেও সফল না হলে অন্তত অন্তরে অন্যায়ের প্রতি ঘৃণা পোষণ করতে বলেছেন।অার শুধুমাত্র অন্তর থেকে অন্যায়ের প্রতি ঘৃণাকে মহানবী(স:) দূর্বলতম ঈমানের পরিচয় বলে অভিহিত করেছেন।
অাশা করি,ইনশাঅাল্লাহ-উপরোক্ত প্রশ্নের উত্তরটি পূর্ণাঙ্গরূপে এসেছে।
যারা বলে যে অন্যায়কারীকে হাজারো বুঝানোর পরও সে বুঝবেনা,তাদের জানা প্রয়োজন যে প্রকৃত মুসলিমের দায়িত্ব অন্যায়ের প্রতিবাদ করার,অন্যায়কারীর সংশোধন নয়।বরং অাল্লাহ তা'অালা চাইলেই অন্যায়কারী কেবলমাত্র সংশোধন হবে।
প্রকৃত মুসলিমদের কাজ হলো  অাল্লাহ তা'অালার দেয়া দায়িত্ব পালন করা। কারণ প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি
ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
"তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল আর
তোমাদের প্রত্যেকেই স্বীয় দায়িত্ব সম্পর্কে
জিজ্ঞাসিত হবে।"
[বুখারী, কিতাবুল জুম'আ: হাদীস নং ৮৪৪]

Sunday, September 17, 2017

জেনে নিন কোডেক্স জিগাস বা 'শয়তানের বাইবেল' সম্পর্কে

কোডেক্স জিগাস (লাতিন ভাষায়: Codex Gigas; বাংলা ভাষায়: বিশাল আকার বই) বিশ্বের বৃহত্তম বিদ্যমান মধ্যযুগীয় পাণ্ডুলিপি[১]। ধারনা করা হয়ে থেকে যে, ১৩শ শতাব্দীর প্রথম তৃতীয় অংশে বোহেমিয়ার (বর্তমানে চেক প্রজাতন্ত্র) বেনেডিক্ট পোডলাজাইসের আশ্রমে এটি তৈরি করা হয়েছিল। এটি ভালগেইট বাইবেলের পাশাপাশি অনেক ঐতিহাসিক নথি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যা সমস্ত লাতিন ভাষা লেখা হয়েছে। ১৬৪৮ সালে, ত্রিশ বছরের যুদ্ধের সময় সুইডিশ সৈন্যবাহিনীরা একে যুদ্ধের লুণ্ঠিত দ্রব্য হিসেবে নিয়ে যায়। বর্তমানে এটি সুইডেনের জাতীয় গ্রন্থাগার স্টকহোমে সংরক্ষিত রয়েছে, যদিও এটি সাধারনত প্রদর্শন কারা হয় না।[১] এটি শয়তানের বাইবেল হিসেবেও পরিচিত, কারণ এর ভিতর অশুভ বড় চিত্রণ রয়েছে এবং এর পৌরাণিক কাহিনীতে বর্ণিত রয়েছে যে, লেখক এটি লিখার জন্য শয়তানের সাহায্য চেয়েছিল। আসলে লেখক ছিলেন একজন মোনাকো, সে তার ঘড়ে বসে মনোযোগ দেয় এক রাত্রিতে একটি কাজ করার জন্য যাতে তার আশ্রমের নাম সুখ্যাতি হয়।

বর্ণনা

কোডেক্স সম্পূর্ণরূপে উদ্দীপ্ত।
কোডেক্স জিগাস একটি কাঠের তৈরি কভার দিয়ে ঢাকা, যা চামড়া এবং কিছু অলঙ্কৃত ধাতু দিয়ে আবৃত। এটি ৯২ সেন্টিমিটার (৩৬.২ ইঞ্চি) লম্বা, ৫০ সেন্টিমিটার (১৯.৭ ইঞ্চি) চওড়া এবং ২২ সেন্টিমিটার (৮.৬ ইঞ্চি) পুরু, যা একে মধ্যযুগীয় বৃহত্তম পাণ্ডুলিপি হিসেবে পরিচিত করে।[২] এটি ৭৫ কেজি (১৬৫ পাউন্ড) ওজন বিশিষ্ট পাণ্ডুলিপি, যাতে রয়েছে ৩১০টি চামড়ার কাগজ যা তৈরি করতে ১৬০টি গাধা অথবা সম্ভবত বাছুরের চামড়া প্রয়োজন হয়েছে।[৩] কোডেক্স জিগাস বিশ্বের বৃহত্তম মধ্যযুগীয় পাণ্ডুলিপি।[৪] প্রাথমিকদিকে এতে ৩২০টি পাতা ছিল, কিন্তু পরবর্তীকালে এর থেকে ৮টি পাতা অপসারিত করা হয়েছে।[৫] কিসের উদ্দেশ্যে বা কারা এই পাতাগুলো অপসারিত করেছে তা অজানা। সম্ভবত, সে পাতাগুলোতে বেনেডিক্ট সন্ন্যাসীদের নিয়ম ছিল।

পৌরাণিক কাহিনী

২৯০ পৃষ্ঠার শয়তানের চিত্র।
একটি পৌরাণিক কাহিনীর অনুযায়ী যা মধ্যযুগে নথিভুক্ত করা হয়েছিল : এই পাণ্ডুলিপির লেখক ছিলেন একজন মোনাকো, যে তার মোনাকোর প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে যার ফলে তাকে শাস্তি হিসেবে তাকে জীবিত দেওয়াল গেঁথে বুজিয়ে দেওয়া হয়। এই কঠোর শাস্তি থেকে নিবৃত্তি পাওয়ার জন্য তিনি প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেন যে তিনি এক রাতের মাঝে একটি বই তৈরি করবেন যা তার আশ্রমের নাম চিরকালের জন্য সুখ্যাতি করবে, যেখানে মানুষের সমস্ত জ্ঞান থাকবে। তিনি মধ্যরাত্রি কাছাকাছি নিশ্চিত হন, যে তিনি একা এই কাজের সম্পূর্ণ করতে পারবেন না, তাই তিনি একটি বিশেষ প্রার্থনা করেন, ঈশ্বরের কাছে না নিপতিত দেবদূত শয়তানের কাছে। তার আত্মার বিনিময়ে বইটি সম্পূর্ণ করার সাহায্য প্রার্থনা করেন। শয়তান পাণ্ডুলিপিটি সম্পূর্ণ করে এবং মোনাকো শয়তানের সাহায্যের কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য প্রতীক হিসেবে সে একটি চিত্র সংযোগ করেন।
সূত্র: উইকিপিডিয়া
সংগ্রাহক: মুহাম্মাদ আইনান ইকবাল
(ছবিটি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত)

Saturday, September 16, 2017

জেনে নিন মুসলিম সিংহপুরুষ ওমর মুখতার সম্পর্কে

ওমর মুখতার (আরবি: عمر المختار‎) (১৮৬২-১৬ সেপ্টেম্বর,১৯৩১) লিবিয়ার সিরেনিকায় জানযুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[১] ১৯১২ সাল থেকে শুরু করে প্রায় বিশ বছর তিনি লিবিয়ায় ইতালীয় ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেন। ১৯৩১ সালে তিনি ইতালীয়দের হাতে গ্রেপ্তার হন এবং তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।

জন্ম ২০ অগাস্ট ১৮৬১
জানযুর, সিরেনিকা
মৃত্যু ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৩১ (৭০ বছর)
সুলুক, ইতালি অধীকৃত লিবিয়া
পেশা কুরআন শিক্ষক
যে জন্য পরিচিত ইতালীয়দের বিরুদ্ধে লিবিয়ার লড়াইয়ে নেতৃত্বদানকারী
ধর্ম ইসলাম
জীবন সম্পাদনা

ওমর মুখতার পূর্ব সিরনিকার আল-বুতনান জেলায় জানযুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে তিনি পিতৃমাতৃহীন হন। স্থানীয় মসজিদে তিনি প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহণ করেন। সেনুসি আন্দোলনের মূলকেন্দ্র জাগবুবের সেনুসি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ৮ বছর শিক্ষালাভ করেন। ১৮৯৯ সালে চাদে ফরাসীদের প্রতিহত করার জন্য রাবিহ আযযুবায়েরের সাহায্যার্থে অন্য সেনুসিদের সাথে তাকে চাদে পাঠানো হয়।

ইতালীয় আক্রমণ সম্পাদনা

১৯১১ সালে ইতালী-তুর্কী যুদ্ধের সময় অ্যাডমিরাল লুইগি ফারাভেলির নেতৃত্বে ইতালীয় নৌবাহিনীর একটি দল লিবিয়ার উপকূলে পৌছায় যা তৎকালে উসমানীয় তুর্কীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তুর্কী প্রশাসন ও সেনাদেরকে তাদের অধীনস্থ অঞ্চল ইতালীয়দের কাছে ছেড়ে দিতে বলা হয়। কিন্তু তুর্কী ও তাদের লিবিয় মিত্ররা আত্মসমর্পণের পরিবর্তে লিবিয়ার অভ্যন্তরে চলে যায়। ইতালীয়রা তিন দিন পর্যন্ত শহরে গোলাবর্ষণ করে। এরপর অধিকৃত অঞ্চলকে ইতালীর অধীনস্থ বলে ঘোষণা করা হয়। এই ঘটনা ইতালীয় ঔপনিবেশিক সেনাবাহিনী এবং ওমর মুখতারের বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের সূচনা করে।[২]

গেরিলা যুদ্ধ সম্পাদনা

পেশাগত দিক থেকে কুরআন শিক্ষক হলেও মুখতার মরুভূমিতে যুদ্ধকৌশল বিষয়ে দক্ষ ছিলেন। স্থানীয় ভূপ্রকৃতি সম্পর্কে তার সম্যক ধারণা ছিল। তার এই জ্ঞানকে তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে ইতালীয়দের বিরুদ্ধে কাজে লাগান। এই ইতালীয়রা মরু অঞ্চলে যুদ্ধের সাথে পরিচিত ছিল না। মুখতার তার ছোট সৈন্যদল নিয়ে সফল গেরিলা আক্রমণে সক্ষম হন। আক্রমণের পর তার বাহিনী মরুভূমিতে আত্মগোপন করত। তার বাহিনী দক্ষতার সাথে বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা, সৈন্যবহরের উপর আক্রমণ চালায় এবং যোগাযোগ ও সরবরাহে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। তার গেরিলা পদ্ধতির লড়াইয়ে ইতালীয় সৈনিকরা পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে।[৩]

ইতালীয় গভর্নর আর্নেস্ট বমবেলি ১৯২৪ সালে জেবেল আখদারের পার্বত্য অঞ্চলে পাল্টা গেরিলা বাহিনী গঠন করেন যা বিদ্রোহীদের উপর বেশ কয়েকটি আক্রমণ পরিচালনা করে। মুখতার দ্রুত তার কৌশল পাল্টান এবং মিশর থেকে সাহায্য লাভে সমর্থ হন। ১৯২৭ সালের মার্চে ইতালীয়রা জাঘবুব দখল করে। ১৯২৭ থেকে ১৯২৮ পর্যন্ত মুখতার সানুসি বাহিনীকে পুনর্গঠিত করেন। তার দক্ষতার কারণে ইতালীয় গভর্নর জেনারেল আটিলিয়ো তেরুজ্জি ওমরকে “ব্যতিক্রমী স্থীরচিত্ত ও অটল ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন” বলে উল্লেখ করেন।

১৯২৯ সালে পিয়েত্রো বাদোগলি গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পান। ওমর মুখতারের সাথে আলোচনায় তাকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। সেই বছরের অক্টোবরে মুখতার এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন এবং ইতালীয় সেনানায়ক রডোলফো গ্রাজিয়ানির সাথে ব্যাপক যুদ্ধের জন্য লিবিয় যোদ্ধাদের পুনরায় সংগঠিত করেন।

জুনে পরিচালিত সেনা অভিযানে গ্রাজিয়ানির বাহিনী মুখতারের কাছে পরাজিত হয়। পিয়েত্রো বাদোগলি, এমিলো দা বোনো ও বেনিতো মুসোলিনির সাথে গ্রাজিয়ানি মুখতারের প্রতিরোধ ভেঙে দিতে পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী সহস্রাধিক মানুষকে উপকূলবর্তী কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়, গিয়ারাবুবে উপকূল থেকে লিবিয়া ও মিশরের সীমানা বন্ধ করে দেয়া হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল যাতে যোদ্ধারা কোনো বিদেশী সাহায্য না পায় এবং স্থানীয় জনতার সমর্থন থেকে বঞ্চিত হয়। সানুসিদের প্রতিরোধে গ্রাজিয়ানির এই পরিকল্পনা সফল হয়। বিদ্রোহীরা সাহায্যবঞ্চিত হয় এবং ইতালীয় বিমান দ্বারা আক্রান্ত হয়। স্থানীয় চর ও সহায়তাকারীদের সাহায্যে ইতালীয় বাহিনী স্থলযুদ্ধেও বিদ্রোহীদের উপর আধিপত্য স্থাপন করে। ঝুকি সত্ত্বেও মুখতার লড়াই চালিয়ে যান। ১৯৩১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তাকে অতর্কিত আক্রমণ করে প্রেপ্তার করা হয়।


গ্রেপ্তারের পর ওমর মুখতার
মুখতারের চূড়ান্ত প্রতিপক্ষ, জেনারেল রডোলফো গ্রাজিয়ানির বর্ণনামতে : “মাঝারি উচ্চতা, সুঠাম, সাদা দাড়ি গোফ বিশিষ্ট ব্যক্তি। ওমর মুখতার ছিলেন প্রত্যুৎপন্নমতি সম্পন্ন, ধর্মীয় বিষয়ে জ্ঞানী, শক্তিসম্পন্ন ও ক্ষীপ্র ব্যক্তি, স্বার্থ ও আপোষহীন। তিনি খুব ধার্মিক ও দরিদ্র ছিলেন যদিও তিনি ছিলেন সেনুসিদের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে।”

মৃত্যুদন্ড সম্পাদনা
ইতালীয় ঔপনিবেশিকদের বিরুদ্ধে মুখতারের প্রায় ২০ বছরব্যাপী লড়াই ১৯৩১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তার প্রেপ্তারের মাধ্যমে সমাপ্তি লাভ করে। স্লোনটার নিকটে যুদ্ধে তিনি আহত অবস্থায় প্রেপ্তার হন। তাকে প্রেপ্তারে সাহায্য করায় স্থানীয় নেতাদেরকে পুরষ্কৃত করা হয়। তার দৃঢ়তা জেলারের উপর প্রভাব ফেলে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]মুখতারের জিজ্ঞাসাবাদকারীদের মতে তিনি কুরআনের শান্তিসূচক আয়াত তেলাওয়াত করতেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]


ওমর মুখতারের ফাঁসি
মাত্র তিন দিনের মধ্যেই মুখতারের বিচার সম্পন্ন হয়। বিচারে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং ১৪ সেপ্টেম্বর রায়ে তাকে প্রকাশ্যে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেয়া হয়। তবে ঐতিহাসিকদের মতে এই বিচার স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ছিল না। শেষ কথা জানতে চাওয়া হলে মুখতার কুরআনের আয়াত “ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন” (আমরা আল্লাহর জন্য এবং তার কাছেই ফিরে যাব) পাঠ করেন। ১৯৩১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর সুলুকের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে তার অনুসারীদের সামনে তাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল সত্তর বছর।

চলচ্চিত্র সম্পাদনা

ওমর মুখতারের জীবনের শেষ দিনগুলো "লায়ন অব দ্য ডেজার্ট"(১৯৮১) চলচ্চিত্রে তুলে ধরা হয়েছে। ওমর মুখতার ও রডোলফো গ্রাজিয়ানির মধ্যকার লড়াইকে ভিত্তি করে চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়। এতে অ্যান্থনি কুইন, অলিভার রিড ও আইরিন পাপাস অভিনয় করেন।
সূত্র: উইকিপিডিয়া
সংগ্রাহক: মুহাম্মাদ আইনান ইকবাল
(ছবিটি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত)

নোবেল পুরষ্কারের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

আলফ্রেড নোবেল ( শুনুন ), ২১ অক্টোবর ১৮৩৩ সালে সুইডেনের স্টকহোমে একটি প্রকৌশল পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি একাধারে রসায়নবিদ, প্রকৌশলী ও একজন উদ্ভাবক ছিলেন। ১৮৯৪ সালে তিনি একটি বফর লোহা ও ইস্পাত কারখানা ক্রয় করেন, যা পরবর্তীতে একটি অন্যতম অস্ত্র তৈরির কারখানায় পরিনত করেন। তিনি ব্যালিস্টিক উদ্ভাবন করেন, যা সারা বিশ্বব্যাপী ধোঁয়াবিহীন সামরিক বিস্ফোরক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাঁর ৩৫৫ টি উদ্ভাবনের মাধ্যমে তিনি জীবদ্দশায় প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক হন যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখ যোগ্য ছিল ডিনামাইট[৪]।

১৮৮৮ সালে তিনি মৃতদের তালিকা দেখে বিস্মত হন, যা একটি ফরাসি পত্রিকায় এ মার্চেন্ট অব ডেথ হু ডেড প্রকাশিত হয়। যেহেতু নোবেলের ভাই লুডভিগ মারা যায়, এই নিবন্ধটি তাকে ভাবিয়ে তোলে এবং খুব সহজেই বুঝতে পারেন যে ইতিহাসে তিনি কিভাবে স্মরণীয় হতে চান। যা তাকে তার উইলটি পরিবর্তন করতে অনুপ্রাণিত করে।[৫] ১০ ডিসেম্বর ১৮৯৬ সালে আলফ্রেদ নোবেল তার নিজ গ্রাম স্যান রিমো, ইতালিতে মৃত্যু বরন করেন। সেই সময় তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর[৬]।

নোবেল তার জীবদ্দশায় অনেক গুলো উইল লিখে গিয়েছিলেন। সর্বশেষটা লেখা হয়েছিল তার মৃত্যুর মাত্র এক বছর আগে ২৭ নভেম্বর ১৮৯৫ সালে প্যারিসে অবস্থিত সুইডিশ-নরওয়ে ক্লাবে।[৭][৮] বিস্ময় ছড়িয়ে দিতে, নোবেল তার সর্বশেষ উইলে উল্লেখ করেন যে তার সকল সম্পদ পুরস্কার আকারে দেয়া হবে যারা পদার্থ, রসায়ন, চিকিৎসা, শান্তি ও সাহিত্যে বৃহত্তর মানবতার স্বার্থে কাজ করবেন[৯]। নোবেল তার মোট সম্পদের (৩১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা) ৯৪ শতাংশ এই পাঁচটি পুরস্কারের জন্য উইল করেন।[১০] ২৬ এপ্রিল ১৮৯৭ এর আগ পর্যন্ত সন্দেহ প্রবনতার জন্য নরওয়ে থেকে এই উইল অনুমোদন করা হয় নি।[১১] নোবেলের উইলের সমন্বয়কারী রগনার সোলম্যান ও রুডলফ লিলজেকুইস্ট নোবেল ফাউন্ডেশন তৈরি করেন। যার কাজ তার সম্পদের রক্ষনাবেক্ষন ও নোবেল পুরস্কার অনুষ্ঠানের আয়জন করা।[১২]

১৮৯৭ সালে নোবেলের উইল অনুমোদন হবার সাথে সাথেই নোবেল পুরস্কার প্রদানের জন্য নরওয়েজীয় নোবেল কমিটি নামক একটি সংস্থা তৈরি করা হয়। অতি শীঘ্রই নোবেল পুরস্কার দেবার অন্যান্য সংস্থাগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তাদের মধ্যে ৭ জুন ক্যারোলিংস্কা ইনিস্টিটিউট, ৯ জুন সুইডিশ একাডেমী এবং ১১ জুন রাজকীয় সুয়েডীয় বিজ্ঞান একাডেমি[১৩]। নোবেল ফাউন্ডেশন কিভাবে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয় তার একটি নীতিমালায় পৌছায় এবং ১৯০০ সালে নোবেল ফাউন্ডেশন নতুনভাবে একটি বিধি তৈরি করে যা রাজা অস্কার কর্তৃক জারি করা হয়। [৯] ১৯০৫ সালে সুইডেন ও নরওয়ের মধ্যে বন্ধন বিলুপ্ত হয়। তার পর থেকে নরওয়েজীয় নোবেল কমিটি শুধু মাত্র শান্তিতে নোবেল পুরস্কার এবং সুইডেনের প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যান্য পুরস্কার গুলো প্রদানের দায়িত্ব পায়।[১১]

আলফ্রেড নোবেলের উইল সম্পাদনা
সুইডেনের রসায়নবিদ ও শিল্পপতি আলফ্রেড নোবেলের উইল অনুসারে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। নোবেল ডিনামাইট আবিষ্কার করেছিলেন, যার মাধ্যমে তার প্রচুর আয় হয়, আর এই আয়ের অর্থ দ্বারাই তিনি পুরস্কার প্রদানের কথা বলে যান। জীবদ্দশায় নোবেল অনেকগুলো উইল লিখেছিলেন, এর মধ্যে সর্বশেষটি লিখেন তার মৃত্যুর মাত্র এক বছর আগে নভেম্বর ২৭, ১৮৯৫ তারিখে। নোবেলের উদ্ভাবনটি ছিল অনেকাংশেই একটি বিস্ফোরক যা প্রভূত ক্ষতির কারণ হতে পারত। তাই যুদ্ধক্ষেত্রে এই ডিনামাইটের ব্যবহার তাঁকে শঙ্কিত করে তোলে। নোবেল পাঁচটি ক্ষেত্রে পুরস্কার দেয়ার জন্য তার মোট সম্পত্তির শতকরা ৯৪ ভাগ দান করে যান। এর মোট পরিমাণ ৩১ মিলিয়ন এসইকে (৩.৪ মিলিয়ন ইউরো, ৪.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)।
সূত্র: উইকিপিডিয়া
সংগ্রাহক: মুহাম্মাদ আইনান ইকবাল
(ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত)

Sunday, August 13, 2017

'আমাদের সকল কাজের মূলে যদি থাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি তবে আমাদের সফলতা আসবেই'

-------মুহাম্মাদ আইনান ইকবাল
এই পৃথিবীতে আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন কেবল তাঁর ইবাদত করার জন্য৷কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই ইবাদতের সঠিক সংজ্ঞা জানেন না৷ইবাদত বলতে মূলত আল্লাহ তা'আলার আদেশ-নিষেধ মেনে চলাকেই বোঝায়৷আর সকল ভাল কাজ করা এবং সকল মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা আল্লাহ তা'আলার আদেশ৷অতএব মানুষ যেসব ভাল কাজ করবে তার সবই এবাদত৷অন্যদিকে মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকাটাও ইবাদত৷কারণ মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকতেও আল্লাহ আদেশ করেছেন৷
এখন আমরা যদি এভাবে ভালো কাজ করি ও মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকি তাহলে আল্লাহ রব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জন আমাদের পক্ষে সহজ হয়ে যাবে৷কেননা আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে তাঁর ইবাদত করার জন্যই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন৷আর উপরের আলোচনা থেকে এই কথা স্পষ্ট প্রতীয়মান যে সকল ভাল কাজ করা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকাই আল্লাহর ইবাদত৷
এখন আমরা যদি সর্বাবস্থায় বিভিন্ন ভাল কাজ করি এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকি তাহলে চিন্তা করুন আমাদের জীবনটা কত সুখময় হয়ে যাবে৷
এখন আমাদের ভাল কাজের সঠিক সংজ্ঞা জানা প্রয়োজন৷কেবলমাত্র সেসব কাজই ভাল যা স্রষ্টা ভাল বলেছেন৷আর সেই সমস্ত কাজ কখনো ভাল হওয়া সম্ভব নয় যা আমাদেরকে স্রষ্টা আল্লাহ তা'আলা করতে নিষেধ করেছেন৷এমন অনেক কাজ রয়েছে যা আমার ভাল লাগলেও আপনার হয়ত ভাল লাগবেনা অথবা আপনার ভাল লাগলেও আমার ভাল লাগবেনা৷তাই কোন কাজটি প্রকৃতপক্ষে ভাল তা আমাদের সাধারণ জ্ঞান দ্বারা জানা সম্ভব নয়৷তাই কেবলমাত্র সেসব কাজকেই ভাল বলা যাবে যা আল্লাহ ভাল বলেছেন৷অন্যদিকে আল্লাহ তা'আলা যেসব কাজকে খারাপ বলেছেন তা-ই খারাপ৷কেননা আল্লাহ সব জানেন৷তিনিই প্রকৃত ভাল খারাপ নির্ণয়ের ক্ষমতা রাখেন৷
আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যমে কিভাবে আমরা সফল হতে পারি তা একটি উদাহরণের মাধ্যমে বোঝানো যায়৷যেমন ধরুন আল্লাহ তা'আলা মিথ্যা কথা বলতে নিষেধ করেছেন এবং সত্য বলতে বলেছেন৷এখন আমরা যদি মিথ্যা থেকে বিরত থাকি আর সত্য বলি তবে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারব৷কারণ সত্য বলা আর মিথ্যা না বলা এই দুটো কাজই আল্লাহর ইবাদত৷আর এইভাবে আমরা যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সর্বাবস্থায় সত্য বলি ও মিথ্যা থেকে বিরত থাকি তাহলে আমরা অন্যান্য অপরাধ থেকেও বিরত হতে পারব৷আর এইভাবেই আমরা ভাল কাজ করে দুনিয়াতে মানুষের কাছে যেমন সমাদৃত হতে পারি ঠিক তেমনই আখিরাতেও সফলতা লাভ করতে পারি৷

সকল কাজের মূলেই যেন থাকে খোদার সন্তুষ্টি অর্জন

লেখা: মুহাম্মাদ আইনান ইকবাল আপনারা হয়তো মুসলিম জাহানের ৪র্থ খলিফা হযরত আলী ইবনে আবু তালিবের (রাঃ) সেই ঘটনাটি শোনেছেন। একদা যুদ্ধের ময়দান...