Saturday, August 22, 2020

বর্বর মোঙ্গলদের মুসলিম বাহিনীর নিকট পরাজয়ের ইতিহাস


যদি প্রশ্ন আসে, মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সেনাবাহিনীর নাম কী! তাহলে সবার আগেই আসবে  মধ্যযুগের মোঙ্গল বাহিনীর নাম যার সূচনা হয়েছিল চেঙ্গিস খানের হাতে। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে তাতার বাহিনী নামে পরিচিত ছিল মোঙ্গল বাহিনী। ১২০৬ সালে চেঙ্গিস খানকে মঙ্গোলিয়ার স্তেপের একচ্ছত্র অধিপতি বা গ্রেট খান হিসাবে ঘোষণা করার পর মোঙ্গল বাহিনী একে একে জয় করে নিয়েছিল এশিয়া ও ইউরোপ বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্যের মালিক ছিল মোঙ্গলরা। চেঙ্গিস খানের সময় থেকে শুরু হওয়া মোঙ্গলদের জয়যাত্রা অব্যাহত ছিল পরবর্তী গ্রেট খানদের সময়ও। ১২০৬ সাল থেকে ১২৬০ সাল এই অর্ধশত বছরে তাঁরা  একটি যুদ্ধেও হারে নি। বাগদাদ, সমরখন্দ, বেইজিং, বুখারা, আলেপ্পোর মত বড় বড় শহর তাতারি হামলায় মাটির সাথে মিশে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আইন জালুতের যুদ্ধে শেষ হয় বর্বর মোঙ্গলদের এই জয়যাত্রা। আইন জালুতের যুদ্ধ ১২৬০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধ দক্ষিণপূর্ব গ্যালিলিতে জাজরিল উপত্যকার আইন জালুতে মামলুক ও মোঙ্গলদের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল।

চলুন যেনে নিই সেই ইতিহাস:

১২৫১ সালে মংকে খান খাগান হন। তিনি তার দাদা চেঙ্গিস খানের বিশ্বব্যপী সাম্রাজ্যের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সচেষ্ট ছিলেন। তিনি তার ভাই হালাকু খানকে পশ্চিমের জাতিসমূহ-কে অধিকার করার দায়িত্ব দেন।

পাঁচ বছর যাবত সেনাদল গঠনের পর ১২৫৬ সালে হালাকু খান অভিযান শুরু করেন। তিনি দক্ষিণ দিকে যাত্রা করেন। আত্মসমর্পণ না করলে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য মংকে খানের নির্দেশ ছিল। হালাকু খান অভিযানকালে অনেক রাজ্য জয় করেন। তাদের অনেকে তার দলে সৈনিক সরবরাহ করেছে। বাগদাদ অভিযানের সময় সিলিসিয়ান আর্মেনীয়রা তার সাথে ছিল। পাশাপাশি এন্টিওকের ফ্রাঙ্ক সেনারাও তার সাথে যোগ দেয়। অভিযানের সময় হাসাসিনরা তার কাছে আত্মসমর্পণ করে। বাগদাদ ধ্বংসের ফলে কয়েক শতাব্দী প্রাচীন আব্বাসীয় খিলাফত ধ্বংস হয়ে যায়। এরপর দামেস্কের আইয়ুবীয়দের পতন হয়। হালাকু খান দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে মামলুক সালতানাত জয় করার পরিকল্পনা করেছিলেন। এসময় মামলুকরা প্রধান মুসলিম শক্তি ছিল। ১২৬০ সালে হালাকু খান কায়রোতে সুলতান কুতুজের কাছে দূত পাঠিয়ে আত্মসমর্পণ দাবি করেন। চিঠিটি পড়লেই বোঝতে পারবেন, মোঙ্গলদের ভাষা ছিল তাদের তরবারির মতোই ভয়ঙ্কর। চিঠিটি হুবহু তোলে ধরার চেষ্টা করছি:

“পূর্ব ও পশ্চিমের শাহেনশাহ মহান খানের পক্ষ থেকে এটি প্রেরিত হচ্ছে মামলুক কুতুজের উদ্দেশ্যে যিনি আমাদের তলোয়ার থেকে পালিয়ে গিয়েছেন। অন্যান্য রাজ্যসমূহের কী পরিণতি হয়েছে তা চিন্তা করে আপনার উচিত আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করা। আপনি শোনেছেন কিভাবে আমরা একটি বিশাল সাম্রাজ্য জয় করেছি এবং পৃথিবীকে দূষিত কারী বিশৃঙ্খলা থেকে একে বিশুদ্ধ করেছি। আমরা বিশাল অঞ্চল জয় করেছি, সব মানুষকে হত্যা করেছি। আপনি আমাদের সেনাবাহিনীর ত্রাস থেকে বাঁচতে পারবেন না। আপনি কোথায় পালাবেন? আমাদের কাছ থেকে পালানোর জন্য আপনি কোন পথ ধরবেন? আমাদের ঘোড়াগুলি দ্রুতগামী, আমাদের তীর ধারালো, আমাদের তলোয়ার বজ্রের মত, আমাদের হৃদয় পর্বতের মত কঠিন, আমাদের সেনারা বালুর মত অগণিত। দুর্গ আমাদের আটকাতে পারবে না, কোনো সেনাবাহিনী আমাদের থামাতে পারবে না। আল্লাহর কাছে আপনার দোয়া আমাদের বিরুদ্ধে কাজে আসবে না। অশ্রু আমাদের চালিত করে না এবং মাতম আমাদের স্পর্শ করে না। শুধুমাত্র যারা আমাদের সুরক্ষা চাইবে তাদেরকে নিরাপত্তা দেয়া হবে। যুদ্ধের আগুন জ্বলে উঠার আগে দ্রুত আপনার জবাব দিন। প্রতিরোধ করলে আপনি সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্যোগের মুখোমুখি হবেন। আমরা আপনাদের মসজিদ গুলি চুরমার করে দেব এবং আপনাদের আল্লাহর দুর্বলতা দেখতে পাবেন এবং এরপর আপনাদের সন্তান ও বৃদ্ধদেরকে হত্যা করা হবে। এই মুহূর্তে আপনি একমাত্র শত্রু যার বিরুদ্ধে আমরা অগ্রসর হয়েছি।”

হালাকু

সাহসী সুলতান কুতুজ মোঙ্গলদের দূতদের কে হত্যা করে এর জবাব দেন। দূতদের কাটা মাথা কায়রোর বাব জুলাইলা ফটকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল।

এসময় মংকে খানের মৃত্যুর ফলে হালাকু খানসহ অন্যান্য নেতৃস্থানীয় মঙ্গোলরা নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য মঙ্গোলিয়া ফিরে আসেন। হালাকু তার বাহিনীর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে তার সাথে নিয়ে যান। তার রেখে যাওয়া বাহিনীর সেনাপতি ছিলেন কিতবুকা।

মোঙ্গলদের প্রতিহত করার জন্য সুলতান কুতুজ দ্রুত একটি বাহিনী গঠন করে ফিলিস্তিনের দিকে অগ্রসর হন।অভিযানকালে বাইবার্স‌ তার সাথে যোগ দেন।

আগস্টের শেষদিকে মোঙ্গলরা তাদের মোঙ্গল শিবির থেকে দক্ষিণ দিকে যাত্রা করে। তারা এসময় আক্কাকেন্দ্রীক ক্রুসেডার জেরুজালেম রাজ্যের সাথে মিলে ফ্রাঙ্ক-মঙ্গোল মৈত্রী গঠনের চেষ্টা চালায়। কিন্তু পোপ চতুর্থ আলেক্সান্ডার এতে সায় দেননি। এছাড়া সাইদার শাসক জুলিয়ানের কারণে কিতবুকার নাতি মৃত্যুর ফলে দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। কিতবুকা রাগান্বিত হয়ে সাইদা আক্রমণ করেন। অন্যদিকে মামলুক রাও মোঙ্গলদের বিরুদ্ধে সহায়তার জন্য ক্রুসেডারদের প্রতি বার্তা পাঠায়।

মামলুকরা ফ্রাঙ্কদের দীর্ঘদিনের শত্রু হলেও আক্কার ব্যারন মোঙ্গলদেরকে বেশি ক্ষতিকর হিসেবে বিবেচনা করেন। এসময় ক্রুসেডাররা দুই পক্ষের মধ্যে কারো সাথে সরাসরি যোগ না দিয়ে ক্ষতি না করার শর্তে মামলুকদেরকে ক্রুসেডার এলাকার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করার সুযোগ দেয়। মোঙ্গলদের জর্ডান নদী অতিক্রম করার খবর পাওয়ার পর সুলতান কুতুজ দক্ষিণ পশ্চিমে জাজরিল উপত্যকার আইন জালুতের দিকে অগ্রসর হন।

মামলুকরা স্থানীয় ভূপ্রকৃতি সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত ছিল। কৌশল হিসেবে কুতুজ তার বাহিনীর একটি অংশকে স্থানীয় পাহাড়ে লুকিয়ে রাখেন এবং বাইবার্স‌কে একটি ক্ষুদ্র সেনাদল দিয়ে পাঠানো হয়।

দুইপক্ষ মুখোমুখি হওয়ার পর মোঙ্গলদেরকে ফাঁদে ফেলার জন্য বাইবার্স‌ হিট-এন্ড-রান কৌশল কাজে লাগান। আক্রমণ করে মামলুকরা পালিয়ে যাচ্ছে দেখে মোঙ্গলরা তাদের ধাওয়া করে। মোঙ্গল সেনাপতি কিতবুকা এই ফাঁদ বুঝতে না পেরে অগ্রসর হন ফলে পাহাড়ি এলাকায় পৌছার পর মামলুকরা আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে এসে আক্রমণ চালায়। ফলে মোঙ্গলরা চারদিক থেকে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।

মোঙ্গলরা বের হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। কুতুজ কিছু দূরে তার নিজস্ব সেনাদল নিয়ে যুদ্ধের প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করছিলেন। এসময় মোঙ্গলরা মামলুক বাহিনীর বাম অংশকে প্রায় ভেদ করতে সক্ষম হয়। এসময় কুতুজ তার যুদ্ধের হেলমেট খুলে ফেলেন যাতে সৈনিকরা তাকে চিনতে পারে। এরপর তিনি তার সেনাদল নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েন। মোঙ্গলরা পিছু হটে কিছু দূরে গিয়ে সংগঠিত হয়ে পুনরায় যুদ্ধক্ষেত্রে ফিরে আসে। তবে যুদ্ধের গতি মামলুকদের পক্ষে চলে যায়। কিতবুকা যুদ্ধে নিহত হন এবং এই অঞ্চলের মোঙ্গল বাহিনীর প্রায় সম্পূর্ণ অংশ ধ্বংস হয়ে যায়।

হাত কামান ব্যবহার হয়েছে এমন যুদ্ধসমূহের মধ্যে আইন জালুতের যুদ্ধ অন্যতম প্রাচীন যুদ্ধ হিসেবে উল্লেখযোগ্য।মোঙ্গল ঘোড়া ও অশ্বারোহীদের মধ্যে আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য মামলুকরা এসমস্ত বিস্ফোরক ব্যবহার করে। পরবর্তীকালে আরব রসায়ন ও সামরিক নিয়মকানুনে বিস্ফোরক হিসেবে বারুদ সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে।

এভাবেই মুসলমানদের হাতে থেমে যায়, বর্বর মোঙ্গলদের জয়যাত্রা।

লেখাটি লিখতে যেসব সূত্র সহযোগিতা করেছে:

১. উইকিপিডিয়া 
২. রোর বাংলা

(𝑨𝒊𝒏𝒂𝒏 𝒀𝒂𝒔𝒓𝒐𝒃𝒊)



Our group link: https://www.facebook.com/groups/302517450203009/ 
Our pages link: https://www.facebook.com/islamicmediachannelbd/?fref=gs&dti=302517450203009&hc_location=group_dialog
and
https://www.facebook.com/islamicmediablogs/ 
Our youtube channel link: https://www.youtube.com/c/Islamicmedia1234

Saturday, May 16, 2020

অবিশ্বাসীর দাফন

লেখক : আইনান ইয়াসরবি 

গফুর চৌধুরীর ঘরে আজ কান্নার রোল। এভাবে লোকটা চলে যাবেন কেউ ভাবতেই পারেননি। আরে ভদ্রলোকতো গতকালও পাড়ার 'মুক্তমনা সংঘে'র আয়োজিত 'ধর্মীয় কুসংস্কার' নামক সেমিনারে জোরালো বক্তব্য রেখেছিলেন যেখানে তিনি বলেছিলেন, "আমি ধর্ম-কর্ম করিনা। এগুলা গোঁড়ামি। ইসলাম একটি সন্ত্রাসী ধর্ম...."

সেমিনার থেকে ফিরে রাতেই হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক করেন। সকাল হওয়ার আগেই মারা যান। যায় হোক, সারাজীবন ধর্মের বিরুদ্ধে কঠোর থাকা গফুর চৌধুরীর মৃত্যুর খবর শুনে ভক্তকুলকে "ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিঊন" পড়তে দেখা যাচ্ছে। অনেকে আত্মার মাগফিরাত কামনা করছে। অনেকটা চাপের মুখে এলাকার ইমাম খাট্টা কম্যুনিস্ট গফুর সাহেবের জানাজাও পড়ালেন। তারপর আবার মোনাজাত করে পরকালে অবিশ্বাসী গফুর চৌধুরীর জন্য কবরের আজাবও মাফ চাওয়া হলো। তাছাড়া তার ছেলেদেরও দেখা গেলো তার ভুল-ত্রুটির জন্য মানুষের কাছে মাফ চাইতে। আচ্ছা একটা কথা বলতেই ভুলে গিয়েছিলাম। গফুর সাহেবের জানাজায় উপস্থিত লোকেরা বেশিরভাগই ওজু বানায়নি, পুকুর দূরে ছিল বলে। সবাই কান্নাকাটি করে কবরস্থানে কবর দেয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ এই সময় একজন সত্তরোর্ধ মুরুব্বিকে হাসতে দেখা যায়। এমন সময়ে কেন হাসলেন কেউ একজন জিজ্ঞেস করলে তার জবাবে তিনি কিছুটা চলিত কিছুটা আঞ্চলিক ভাষায় বললেন, "এই গফুরতো ধর্মেই বিশ্বাস কইরতোনা। আর আইজ তারই জানাজা হইলো। দাফনও হইবো। যার ধর্মই নাই তার আবার এগুলার কী দরকার! কুত্তার ধর্ম নাই, দাফনও নাই। মরা কুত্তারে ডাস্টবিনে দেখা যায়। এই ব্যাটারে এতো কষ্ট কইরা দাফন না কইরা ডাস্টবিনেওতো ফেলা যায়।" এলাকার অনেক যুবককে মুরুব্বির কথায় মৃদু হাসতে দেখা গেলো। যাক, মুরুব্বির কথাকে পাত্তা দেয় কে! দাফন করা হলো। শুনলাম, তারপর নাকি ইমাম সাহেব কবরে বসে বসে আরও কী কী পড়লেন।

[ বিশেষ দ্রষ্টব্য : এটি একটি কাল্পনিক গল্প। অনেকদিন পর গল্প লিখলাম। তাই ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। প্রয়োজনীয় মন্তব্য করে পাশে থাকবেন। ধন্যবাদ। ]



Friday, March 6, 2020

চলুন বেশি বেশি তাওবাহ করি

#প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা,
চলুন করোনা ভাইরাসসহ সকল প্রকার বালা মুসিবত থেকে রক্ষা পেতে যথাযথ সচেতনতার পাশাপাশি আমরা বেশি বেশি তাওবাহ করি। আল্লাহ তা'আলা বলেন, "তোমাদেরকে যেসব বিপদাপদ স্পর্শ করে, সেগুলো তোমাদেরই কৃতকর্মের কারণে। আর অনেক গুনাহ তিনি (আল্লাহ) ক্ষমা করে দেন।" (সুরা শুরা : ৩০)

অতএব, মানুষ বিপদের সম্মুখীন হয় গুনাহর কারণে। তাই আল্লাহ তা'আলার কাছে আমাদের বেশি করে ক্ষমা চাইতে হবে, তাওবাহ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
"তোমরা প্রত্যেকেই আন্তরিকতার সঙ্গে আল্লাহর কাছে তাওবাহ করো।" (সুরা আত-তাহরিম : আয়াত ৮)

হাদীসে বর্ণিত আছে,

"أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
(অর্থ : "আমি সেই আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি যিনি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব, অবিনশ্বর। এবং আমি তাঁর কাছে তওবা করছি।")

এই দোয়া পড়লে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন, যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়নকারী হয়।" (আবু দাউদ-১৫১৭, তিরমিযী-৩৫৭৭, মিশকাত-২৩৫৩)

এছাড়া করোনা ভাইরাসসহ অন্যান্য রোগ থেকে রক্ষা পেতে নিম্নের দু'আটিও গুরুত্বপূর্ণ -

اللَّهمَّ إِنِّي أَعُوُذُ بِكَ مِنَ الْبرَصِ، وَالجُنُونِ، والجُذَامِ، ومن سّيءِ الأَسْقامِ.

অর্থ : "হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকট ধবল, কুষ্ঠ এবং উন্মাদনাসহ সব ধরনের কঠিন দূরারোগ্য ব্যাধি থেকে পানাহ চাই।" (সুনান আবু দাউদ)

------- Ainan Yasrobi

Wednesday, January 22, 2020

ধর্ষণ বন্ধ হচ্ছে না কেন!

যে যতই থিওরি দিয়ে ধর্ষণ বন্ধ করার চেষ্টা করুক না কেন, যতক্ষণ পর্যন্ত কুরআনের নির্দেশনা না মানা হবে ততক্ষন পর্যন্ত কোনোভাবেই ধর্ষণ বন্ধ করা সম্ভব নয়। চলুন দেখি, ধর্ষণসহ সকল প্রকার জিনা বন্ধে কুরআনের সাধারণ কি নির্দেশনা রয়েছে।

আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআন মাজীদে সূরা নূরের ৩০ নং আয়াতে বলছেন, 'হে নবী! মুমিনদের (পুরুষ) বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এতেই তাদের জন্য পবিত্রতা রয়েছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে, আল্লাহ তা সম্পর্কে অবহিত আছেন।' 
(সূরা নূর, ৩০)

এখানে পুরুষদেরকে আল্লাহ তা'আলা দৃষ্টি নত রাখতে বলেছেন। অর্থ্যাৎ যেসব নারীদের দিকে পুরুষদের দৃষ্টি দেয়া জায়েজ নেই, তাদের দিকে না তাকাতে বলেছেন এবং পাশাপাশি লজ্জাস্থানের হেফাজত করতে বলেছেন। এখন পুরুষরা যদি কুরআনের এই নির্দেশনা পালন না করে, তাহলে ধর্ষণ বন্ধ হবেনা।

আর ধর্ষণসহ সকল প্রকার জিনা বন্ধে কুরআনে নারীদের প্রতিও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।'
(সূরা আহযাব, ৫৯)

আরও বলা হয়েছে, 'হে নবী! মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। তারা যেন সাধারণত যা প্রকাশ থাকে তা ছাড়া নিজেদের আভরণ প্রদর্শন না করে।'
(সূরা নূর, ৩১)

এখানে নারীদের দৃষ্টিও সংযত রাখার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি হিজাব পালনের কথা বলা হয়েছে।

উপরে উল্লিখিত আয়াত ছাড়া জিনা বন্ধ করতে কুরআন ও হাদীসে আরও অনেক আলোচনা রয়েছে। তবে আমি মনে করি, ধর্ষণসহ সকল প্রকার জিনা বন্ধের মূল নির্দেশনা এই আয়াতগুলোর ভেতরেই রয়েছে। এখন আপনারা বলুন, বাংলাদেশের নারী বা পুরুষের মধ্যে কয়জন এই আয়াতগুলোর নির্দেশনা মেনে চলে! আর যতদিন সমাজে কুরআনের আয়াতের নির্দেশনার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন না হবে ততদিন ধর্ষণও বন্ধ হবে না। চলুন আজ থেকে আমরা নিজেরা পর্দা মেনে চলি এবং অপরকে উদ্বুদ্ধ করি। 

এখন একদল লোক বলবে, 'ভাই, এই আয়াতগুলোর নির্দেশনার বাস্তবায়নই যদি সমাধান হয় তাহলে শিশুরা এবং বৃদ্ধারা কেন ধর্ষণের শিকার হয়? পর্দা করা নারী কেন ধর্ষণের শিকার হয়?'
এসব প্রশ্নের উত্তর একদম সোজা। ধরুন, আপনি এক কাপ চা বানাতে দুধ, চিনি দিলেন। কিন্তু চা পাতা দিলেন না। তাহলে কি চা হবে! হবে না। অতএব, সমাজের কিছুসংখ্যক নারী-পুরুষ কুরআন মেনে চললো, আর বিরাটসংখ্যক নারী-পুরুষ কুরআন ধরলোই না, এভাবে ধর্ষণ বন্ধ হবে না। বরং সমাজের প্রত্যেক নারী-পুরুষকে পর্দা মেনে চলতে হবে। নয়তো শিশু,বৃদ্ধা কিংবা পর্দা করা নারী কেউই ধর্ষণ থেকে রক্ষা পাবেনা।

- Ainan

Saturday, January 18, 2020

মানুষকে ভালোবাসুন, আল্লাহ তা'আলা আপনাকে ভালোবাসবেন

যখন আপনার রক্ত লাগে তখন কি আপনি দেখেন, যে ব্লাড ডোনার আপনাকে রক্ত দিচ্ছে সে কোন মতাদর্শের! না। দেখেন না। আর রক্তদাতাও যদি আপনার মতাদর্শ বিবেচনা করতেন, তাহলে হয়তো আপনাকে আর রক্ত দেয়া হতো না তার। মতাদর্শ, ধর্ম ইত্যাদির ভিন্নতার জন্য কখনোই মানুষকে ঘৃণা করা যাবেনা। রসূলুল্লাহর(সঃ) আদর্শ ছিল মানুষকে ভালোবাসা সে যে মতাদর্শেরই হোক না কেন। 

হাদীসে এসেছে, হযরত সাহল ইবনে হুনাইফ ও হযরত কায়েস ইবনে সা'দ (রাঃ) একদিন বসা ছিলেন। তারা তখন কাদিসিয়ায় থাকেন। পাশ দিয়ে একটি লাশ নেয়া হচ্ছিল। তা দেখে তারা দুজনই দাঁড়ালেন। উপস্থিত লোকেরা তাদেরকে জানাল, 'এ এক অমুসলিমের লাশ।' তাঁরা তখন শোনালেন, রসূলুল্লাহর (সল্লল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পাশ দিয়েও একবার এক লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তিনি যখন তা দেখে দাঁড়ালেন, উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম তখন বললেন, 'এ তো ইহুদির লাশ।' রসূলুল্লাহ (সল্লল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, أليست نفسا অর্থাৎ 'সে মানুষ  ছিল তো?' 
(সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৩১২)

রসূল(সঃ) কোনো মানুষকে ঘৃণা করতেননা সে যে ধর্মেরই হোকনা কেন। রসূলের(সঃ) জীবনে এরকম আরও অনেক ঘটনা আছে। যেখানে রসূলই(সঃ) মানুষকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে তার মত-পথ দেখেননি। সেখানে আমরা কিভাবে মতপার্থক্যের কারণে মানুষকে ঘৃণা করতে পারি!
  
 - Ainan

Sunday, December 1, 2019

আওলাদে রসূল (সঃ) এবং আহলে বায়াতে রসূল (সঃ) নিয়ে ভন্ডামি এবং একটি হাদীসের অপব্যাখ্যা

আমাদের প্রথমত 'আওলাদে রসূল' এবং 'আহলে বায়াতে রসূল', এই দু'টো শব্দের পার্থক্য জানতে হবে। সোজা কথায়, আওলাদে রসূল (সঃ) বলতে রসূলুল্লাহর (সঃ) বংশধরকে বোঝায়। অন্যদিকে আহলে বায়াতে রসূল (সঃ) বলতে রসূলুল্লাহর (সঃ) পরিবারবর্গকে বোঝায়। প্রিয়নবীর (সঃ) পরিবারে যাঁরা ছিলেন অর্থ্যাৎ পরিবারের সদস্যরাই কেবল হযরতের আহলে বায়াতের অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে 'আওলাদে রসূল' বলতে রসূলের (সঃ) বংশধরকে বোঝায়। অতএব, এই দু'টি শব্দই সম্পূর্ণ আলাদা। যেমন : হযরত আয়েশা (রাঃ) রসূলে করিমের (সঃ) বংশধর বা আওলাদে রসূল (সঃ) নন, কিন্তু তিনি আহলে বায়াতে রসূলের (সঃ) অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে বর্তমানে কেউ যদি সত্যিই আওলাদে রসূল (সঃ) হন, তবে তিনি আহলে বায়াতে রসূলের (সঃ) অন্তর্ভুক্ত হবেন না। কেননা তিনি রসূলের বংশধর হতে পারেন, কিন্তু পরিবারের সদস্য নন। তিনি রসূলের (সঃ) যেই পরিবার ছিল, সেখানে ছিলেন না।

আওলাদে রসূল (সঃ) সম্পর্কে কোনো হাদীস নেই। কিন্তু আহলে বায়াতে রসূল (সঃ) সম্পর্কিত হাদীস রয়েছে। এমনই একটি উল্লেখযোগ্য হাদীস হলো, 
"হযরত আবু যর (রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু) হতে বর্ণিত,
তিনি পবিত্র ক্বাবা ঘরের দরজা হাত
দিয়ে ধরা অবস্থায় বলেন, আমি নবীয়ে পাককে
(সল্লল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতে শুনেছি, তোমাদের মধ্যে আমার
আহলে বায়াতের দৃষ্টান্ত হযরত নুহ্ (আলাহিস সালামের)
জাহাজের মত । যে এতে আরোহন
করেছে সে মুক্তি পেয়েছে, আর যে এটা থেকে মুখ
ফিরিয়ে নিয়েছে, সে ধ্বংস হয়েছে।"
(মুসনাদে ইমাম
আহমদ : সুত্র : মিশকাত শরীফ ৫৭০ পৃষ্ঠা) 

বর্তমানে আমাদের সমাজে বেশিরভাগ ভন্ডরাই নিজেদেরকে বা তার ভক্তরা তাকে আওলাদে রসূল (সঃ) দাবী করে এবং এই হাদীসকে উদাহরণ হিসেবে টেনে বলে যে তারা হাদীস অনুযায়ী নিজেদের মুক্তির জন্য আওলাদে রসূলকে (সঃ) অনুসরণ করছে। অথচ হাদীসে আওলাদে রসূলকে (সঃ) অনুসরণ করতে বলা হয় নি, বরং রসূলের (সঃ) আহলে বায়াতের মর্যাদার কথা বলা হয়েছে। আর আহলে বায়াত আর আওলাদে রসূলের (সঃ) মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে যা উপরের আলোচনা থেকে প্রতীয়মান। অতএব, কেউ যদি 'আওলাদে রসূল' দাবী করে ভন্ডামি করে তবে আমরা তাকে অনুসরণ করবনা বরং আহলে বায়াতে রসূলের (সঃ) পথ অনুসরণ করব। 

পোস্টটি শেয়ার করুন এবং ভন্ড, মাজার পূজারীদের রুখে দিন। ধন্যবাদ।

- Ainan

Saturday, June 15, 2019

ইসলামের আলোকে খেলাধুলা (বিশেষ করে ক্রিকেট, ফুটবল)

--- মুহাম্মাদ ইনান ইকবাল
একশ্রেণির মানুষ প্রচার করছে যে ইসলামে খেলাধুলা হারাম। এক্ষেত্রে তারা বিশেষত ক্রিকেট, ফুটবলের কথায় উল্লেখ করে। এই বিষয়ে সবসময় লিখার কথা আমার মাথায় থাকে। কারণ খেলাধুলা(ক্রিকেট, ফুটবল প্রভৃতি) ইসলামে হারাম নয় এই ব্যাপারে আমার কাছে প্রচুর প্রমাণ আছে। যারা এটার বিরুদ্ধে কথা বলে তারা কিন্তু খেলাধুলা হারাম হওয়ার পক্ষে কোনো যুক্তিই দেখায় না। শুধু বলে যে, খেলাধুলার কারণে সময়ের অপচয় হয়, খেলাধুলা করা বাজে কাজ।
প্রথমে তাদের যুক্তিগুলো খন্ডন করি চলুন। খেলাধুলা ক্রিকেট বা ফুটবল খেলা করা কি আসলেই সময়ের অপচয়? উত্তর হলো, "না।" কারণ যারা খেলাধুলা করেন তারা এটাকে পেশা হিসেবেই নেন। অনেকটা তাদের কাছে খেলাধুলা অফিসের চাকরি করার মতো। এখন কি বলবেন যে চাকরি করা হারাম বা এটার কারণে সময়ের অপচয় হয়! তবে শালীনতা এবং শ্লীলতার বিষয়গুলো মাথায় রেখেই খেলাধুলা করতে হবে। যেমনটা করেন হাশিম আমলা, মুশফিকুর রহীম কিংবা মোহাম্মদ আলীরা।
দ্বিতীয়ত, খেলাধুলা করা বাজে কাজ নয়। কারণ খেলাধুলা বর্তমানে শুধু বিনোদনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং একটি দেশ ও জাতিকে বিশ্বের মাঝে সমুন্নত হতে হলে, সেই দেশ বা জাতিকে অবশ্যই ক্রিকেট ও ফুটবল খেলায় এগিয়ে থাকতে হবে। আপনি কি জানেন শুধু সাকিবের কারণেই বাংলাদেশকে অনেক দেশের মানুষ চেনে? যদি মেসি, নেইমাররা না থাকতো অথবা বিশ্বকাপ ফুটবল না হতো হয়ত আমরা কখনো আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিলকে চিনতামই না। অতএব, খেলাধুলা কখনো কখনো আন্তর্জাতিক মহলে একটি দেশ ও জাতিকে পরিচয়ও করিয়ে দেয়।
উপরের লিখা হতে মোটামুটি এতটুকু নিশ্চিত যে খেলাধুলা(ক্রিকেট, ফুটবল প্রভৃতি) করা কোনো অনর্থক কাজ নয় এবং এটির কারণে সময়ের অপচয় হয় না।
এবার চলুন দেখে আসি পবিত্র কুরআনুল মাজীদ ও হাদীস শরীফে খেলাধুলার ব্যাপারে কি বলা হয়েছে।
১২. (ইউসুফের (আঃ) ভাইয়েরা তাদের পিতাকে বলল) "আপনি আগামীকাল তাকে (ইউসুফকে (আঃ)) আমাদের সঙ্গে পাঠিয়ে দিন, সে তৃপ্তিসহকারে (ফলমূল) খাবে এবং (খোলা প্রান্তরে) খেলাধুলা করবে। আমরা অবশ্যই তার রক্ষণাবেক্ষণ করব।"
(সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ১২)
ইউসুফের (আঃ) ভাইয়েরা পিতার সঙ্গে প্রতারণা করে তাঁকে দূরে কোথাও নিয়ে যাওয়ার ফন্দি খোঁজে। তারা তাদের পিতাকে বলল, আগামীকাল আমরা মাঠে পশু বিচরণ করাতে যাব। আমাদের সঙ্গে ইউসুফকে দিয়ে দিন। জঙ্গলে গিয়ে সে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল খাবে, আমাদের সঙ্গে খেলাধুলা করবে। ইউসুফের কোনো ক্ষতি হবে না। আমরাই তাঁর রক্ষণাবেক্ষণ করব। পরে ইয়াকুব (আঃ) ইউসুফ (আঃ)-কে তাদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। কেননা শরিয়তের সীমারেখা মেনে শরীরচর্চা ও খেলাধুলা করা হলে তা অবৈধ নয়। যদি অবৈধ হতো তবে হযরত ইয়াকুব (আঃ) কি অনুমতি দিতেন! কখনোই দিতেননা।
মানুষের স্বভাব হলো, অবিরাম কাজ করার ফলে সে ক্লান্ত হয়ে ওঠে।
ক্লান্তি দূর করতে প্রয়োজন একটু বিনোদনের। যেন নবোদ্যমে কাজ শুরু করা যায়। ইসলাম মানুষের স্বভাবগত ধর্ম। তাই ইসলাম বৈধ পন্থায় প্রশান্তি ও প্রফুল্লতা লাভ করার যাবতীয় পথ উন্মুক্ত রেখেছে। স্বয়ং রসুল (সঃ)-এর জীবনে এর প্রতিফলন দেখা যায়। একবার কৃষ্ণাঙ্গ কিছু লোক মসজিদে নববীর সামনে যুদ্ধের মহড়া দিচ্ছিল, তখন রসুল (সঃ) আয়েশাকে (রাঃ) জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি তাদের মহড়া দেখতে যাবে? আয়েশা (রাঃ) হ্যাঁ সূচক জবাব দেন। রসুল (সঃ) ঘরের দরজায় আয়েশাকে (রাঃ) চাদর দিয়ে আড়াল করে দাঁড়িয়ে যান। আর আয়েশা (রাঃ) রসুলের পেছনে দাঁড়িয়ে তাঁর কাঁধ ও কান মুবারকের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গা দিয়ে তাদের মহড়া দেখতে থাকেন। আয়েশা (রাঃ) নিজে থেকে প্রস্থান না করা পর্যন্ত রসুল (সঃ) এভাবেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। (বুখারি, হাদিস : ৫১৯০)
এই হাদীস থেকে বলা যায়, শুধু খেলাধুলা করাই বৈধ নয়, বরং বিনোদনের জন্য দেখাও যায়।
রসুলুল্লাহ (সঃ) ইরশাদ করেন, " তোমরা মাঝেমধ্যে বৈধ বিনোদন, খেলাধুলা কিংবা অন্য কোনো বৈধ উপায়ে হৃদয়কে বিশ্রাম ও আরাম দেবে। " (আবু দাউদ)
এই হাদীসটাতে স্পষ্টভাবেই বৈধ পন্থায় বিনোদনের উপদেশ দেয়া হয়েছে।
আরেকটি কথা হলো খেলাধুলা করা ও উপভোগ করা যাবে শরীয়তের সীমারেখায়। যেমন : ফুটবল খেলাটা জায়েজ হলেও পরিহিত কাপড় শরীয়ত সম্মত নয়। তবে ক্রিকেটে এই ব্যাপারে খেলা করা ও কাপড় উভয়টিই সঠিক।
খেলাধুলা ও বিনোদনের ক্ষেত্রে শালীনতা বজায় রাখতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, " যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। " (সুরা : নূর, আয়াত : ১৯)
যারা খেলাধুলা অপছন্দ করে তারা কুরআনের নিম্মোক্ত আয়াতটির কথা বলে বিরোধিতা করতে পারে।
তা হলো,
"একশ্রেণির লোক এমন আছে, যারা অজ্ঞতাবশত মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশ্যে লাহওয়াল হাদিস তথা অবান্তর কথাবার্তা ক্রয় করে এবং তা নিয়ে ঠাট্টাবিদ্রূপ করে। তাদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি। " (সুরা : লোকমান, আয়াত : ৬)
বেশির ভাগ সাহাবি, তাবেঈ ও তাফসিরবিদ এ আয়াতে উল্লিখিত 'লাহওয়াল হাদিস'-এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, গান-বাজনা, বাদ্যযন্ত্র, কিসসা-কাহিনীসহ যেসব বিষয় মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিল করে দেয়, সেগুলো "লাহওয়াল হাদিস"-এর অন্তর্ভুক্ত। (মা’আরেফুল কোরআন : ৭-৮)
কিন্তু ক্রিকেট বা ফুটবল লাহওয়াল হাদিসের অন্তর্ভুক্ত নয়।
ক্রিকেটের ক্ষেত্রে নিজ দেশের জয়ের জন্য ' ইনশাআল্লাহ ', জয় লাভ করলে ' আলহামদুলিল্লাহ ' বললেও কোনো সমস্যা নেই অথবা যেকোনো মুসলিম দেশের জয়ে এরকম অভিব্যক্তি ব্যক্তও করা যায়। কারণ এতে করে বিশ্বের কাছে নিজ দেশের ও জাতির মর্যাদা সমুন্নত হয়।
আর হালাল কোনো কাজে এই ধরণের অভিব্যক্তি প্রকাশে কোনো গুনাহ নেই।
আমার নানু এই ব্যাপারে সংক্ষেপে বলেন, " সতর্কতার সাথে, শরীয়ত সম্মত উপায়ে খেলাধুলা করা বৈধ। "
এছাড়া উনার কাছে শুনেছি হযরতের দাদা আল্লামা জমীরউদ্দীন আহমদ চাটগামী(রহঃ) (হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠাতা) একবার রেঙ্গুনে গেলে কুস্তি খেলা উপভোগ করেছেন।
ধন্যবাদ আপনাদেরকে। সময় করে লিখাটি পড়ার জন্য। লিখাটি কপি না করে শেয়ার করুন।
পরিশেষে বলতে চাই, আলহামদুলিল্লাহ বাংলাদেশ ক্রিকেটে এখন অনেক এগিয়ে। ইনশাআল্লাহ এবার বাংলাদেশ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হবে। ইনশাআল্লাহ পরের ম্যাচে ইন্ডিয়া হারবে।

সকল কাজের মূলেই যেন থাকে খোদার সন্তুষ্টি অর্জন

লেখা: মুহাম্মাদ আইনান ইকবাল আপনারা হয়তো মুসলিম জাহানের ৪র্থ খলিফা হযরত আলী ইবনে আবু তালিবের (রাঃ) সেই ঘটনাটি শোনেছেন। একদা যুদ্ধের ময়দান...