Friday, December 18, 2020

সকল কাজের মূলেই যেন থাকে খোদার সন্তুষ্টি অর্জন

লেখা: মুহাম্মাদ আইনান ইকবাল

আপনারা হয়তো মুসলিম জাহানের ৪র্থ খলিফা হযরত আলী ইবনে আবু তালিবের (রাঃ) সেই ঘটনাটি শোনেছেন।
একদা যুদ্ধের ময়দানে কাফিরদের সাথে মুসলিমদের তুমুল যুদ্ধ চলছে।

হযরত আলী (রাঃ) এক শক্তিশালী শত্রুর সাথে যুদ্ধে মত্ত রয়েছেন। দীর্ঘক্ষণ যুদ্ধ চলার পর আল্লাহর সিংহ হযরত আলী (রাঃ) তাকে কাবু করে মাটিতে ফেলে দেন এবং সেই কাফেরকে আঘাত হানার জন্য তার জুলফিকার বের করেন।
ঠিক আঘাত হানার আগেই ভূপাতিত সেই কাফের হযরত আলীর (রাঃ) চেহারা মুবারকে থুথু নিক্ষেপ করল। রাগের কারণে হযরত আলীর (রাঃ) চেহারা রক্তবর্ণ হয়ে ওঠল। মনে হলো এখনই তাঁর তরবারি সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে শত্রুকে ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলবে। কিন্তু তিনি তা করলেন না। যে তরবারি আঘাত হানার জন্য ওপরে ওঠেছিল এবং যা বিদ্যুত গতিতে শত্রুর শরীরকে ক্ষত-বিক্ষত করার কথা ছিল, তা থেমে গেল। শুধু থেমে গেল নয়, ধীরে ধীরে নীচে নেমে এল। পানি যেমন আগুনকে ঠান্ডা করে দেয় , তেমনিভাবে হযরত আলীর (রাঃ) রাগে লাল হয়ে যাওয়া পবিত্র মুখমন্ডলও শান্ত হয়ে পড়ল।

হযরত আলীর (রাঃ) এই আচরণে শত্রু অবাক হয়ে গেল। যে তরবারি এসে তার দেহকে খন্ড-বিখন্ড করে ফেলার কথা, তা আবার কোষবদ্ধ হলো কোন কারণে! বিষ্ময়ের ঘোরে শত্রুর মুখ থেকে কিছুক্ষন কথা বের হলো না। এমন ঘটনা সে দেখেনি, শোনেও নি কোন দিন। ধীরে ধীরে শত্রুটি মুখ খোলল। বলল, “আমার মতো মহাশত্রুকে তরবারির নীচে পেয়েও তরবারি কোষবদ্ধ কেন করলেন?”

হযরত আলী (রাঃ) উত্তর দিলেন, “আমরা নিজের জন্য কিংবা নিজের কোনো খেয়ালখুশি চরিতার্থের জন্য যুদ্ধ করি না। আমরা আল্লাহর পথে আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের জন্য যুদ্ধ করি। কিন্তু আপনি যখন আমার মুখে থুথু নিক্ষেপ করলেন তখন প্রতিশোধ গ্রহণের ক্রোধ আমার কাছে বড় হয়ে ওঠল। এই অবস্থায় আপনাকে হত্যা করলে সেটা আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের জন্য হতো না, বরং তা আমার প্রতিশোধ গ্রহণ হতো। আমি আমার জন্য হত্যা করতে চাইনি বলেই তরবারি ফিরিয়ে নিয়েছি। ব্যক্তিস্বার্থ এসে আমাকে জিহাদের পুণ্য থেকে বঞ্চিত করুক, তা আমি চাইনি।”

শত্রুটি মাটি থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে সাথে সাথে তাওবাহ করে ইসলাম কবুল করলেন। আল্লাহু আকবার! এমন শ্রেষ্ঠ, মহান বীরের হৃদয়েও এই পরিমাণ ক্ষমা এবং স্বস্তিগুণ বিদ্যমান থাকে, এত বড় যোদ্ধা এরকম জিহাদের ময়দানেও এমন শক্তিশালী, বলবান শত্রুকে এতটুকু কর্তব্যজ্ঞানে ছেড়ে দিতে পারেন, তা শত্রুকে বিমোহিত করল। 

শের-ই-খোদা হযরত আলী ইবনে আবু তালিবের (রাঃ) এই ঘটনা থেকে আমরা কী শিক্ষা পাই? আমরা শিক্ষা পাই মুমিনের সকল কাজই আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টির জন্য করতে হবে। আল্লাহর একজন প্রকৃত বান্দা কখনোই নিজের স্বার্থের জন্য, নিজের ফায়দা হাসিলের জন্য কোনো কাজ করে না, বরং করে একমাত্র মহান রবের সন্তুষ্টি লাভের আশায়। আমরাও যদি প্রকৃত মুসলমান হতে চাই তবে নিজের স্বার্থকে বিসর্জন দিতে হবে, সকল কাজের উদ্দেশ্য হতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি।

Monday, October 12, 2020

ধর্ষণের কারণ ও প্রতিকার

(ইসলামিক মিডিয়ার “নির্বাচিত লেখা”-তে আপনিও স্বেচ্ছায় পাঠাতে পারেন আপনার নিজের লেখা। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: muhammadainaniqbalblogger@gmail.com)

লেখা: আবরার হোসাইন চৌধুরী 

যথাসম্ভব সোর্স আর তথ্য দিয়ে সাজানো। তাই কিছুটা বড়। আশা করি ধৈর্য্য ধরে পড়বেন আর কোন ভুল হয়ে থাকলে দূঃখিত।

আজকাল পেরেড মাঠে সন্ধ্যায় চায়ের আড্ডাটা একটা রুটিনেই পরিনিত হয়ে গেছে। চায়ের আড্ডাতে সেই ৪ জনই প্রতিদিন যতসব বেদরকারী টপিক নিয়ে। যদিও আজকের টপিকটা মোটেও বেদরকারি না। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতেই বলে উঠলাম,"কিরে তোরা নোয়াখালীর ঘটনাটা শুনসস নাকি?" সাথে সাথেই সাকিবের উত্তর, " তোর তো নোয়াখালী নিয়েই যত্তসব ঘটনা, নোয়াখাইল্লা হই গেসস যে।" মূলত নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অধ্যয়নরত থাকার কারনেই বন্ধুমহলে আমি নোয়াখাইল্লা খ্যাত। যাক ব্যাপারটা নিয়ে আমি যথেষ্ট সিরিয়াস ছিলাম তাই সাকিবের দুস্টমিকে এরিয়ে গিয়ে বললাম," আরে সিরিয়াসলি, অই যে ধর্ষনের ঘটনাটা।"
আরেক বন্ধু সারঝিল, যার জ্ঞানী জ্ঞানী ভাবটাই একটু বেশি সে বলে উঠলো," হুমমম, শুনসি তো। আসলেই ভয়ানক একটা ঘটনা। তবে এক্ষেত্রে নারীর পর্দার বিষয়টাও কিন্তু সমানে দায়ী।" সাথে সাথে সাকিব অনেকটা রাগান্বিত হয়েই বলে বসলো," আরে তার মানে কি বোরকা পরা মেয়েদের ধর্ষন হয় না নাকি। মেন্টালিটিটাই মূল বিষয়। "

এর প্রেক্ষিতে আমিও বললাম," আসলে এক্ষেত্রে ন্যায় বিচারের অভাবটাকেই বেশি দায়ী বলে আমি মনে করি।"
আমাদের এত আলাপ আলোচনা এর মধ্যে এতক্ষন চুপ করে তার চা খাওয়াটা শেষ করলো দিহান। হঠাৎ সে একদিকে ইশারা করে বললো, " অই দেখ সারজিল, মেয়েটাকে দেখতে কি হট লাগতেসে।" আমরা সবাই দিহানের ইশারা বরাবর তাকালাম কিন্তু কোন মেয়েই ছিলো না সেদিকে। আমরা অবাক ছিলাম। কারন সচরাচর দিহান মেয়েদের নিয়ে এমন মন্তব্য করে না। সাথে সাথেই দিহানের আরেক প্রশ্ন," আচ্ছা আবরার বলতো, ৩০ আগে না ৩১?" আমিও নিয়ম মতোই উত্তর দিলাম ৩০। কিন্তু ব্যপারটা আমাদের কারোরই বোধগম্য হচ্ছে না যে হঠাৎ দিহান কিছু অপ্রাসঙ্গিক  টপিক নিয়ে কেন কথা বলছে তাও অদ্ভুতভাবে। 
সাকিব জিজ্ঞাসা করলো, " কিরে তুই আসলেই কি বলতে চাচ্চস বলতো।" 
এবার দিহান উঠে দাড়ালো আর তার ভাব দেখে বুঝা যাচ্ছিলো যে সে বড় রকম একটা জ্ঞানের ভান্ডার খুলতে যাচ্ছে। 
" দেখ, তোদেরকে যখন আমরা একটা মেয়ের দিকে তাকাতে বললাম, তোরা সাথে সাথে সে দিকে দেখলি, এটা জানার পরও যে ননমাহরাম মেয়েদের দিকে তাকানো একজন পুরুষের জন্য মানা। তাহলে দোষটা কার মেয়েটার নাকি তোদের? আর যেখানে কুরআনে মেয়েদের পর্দার আগে ছেলেদের পর্দার কথা বলা হয়েছে সেখানে কেন পর্দার বিষয়টা কেবল মেয়েদের উপরই লাঘোব হবে।" 
সারঝিলের জবাব, " এর মানে কি, তুই বলতে চাচ্চস ধর্ষনের কারন কেবল পুরুষই? নারীর পর্দার ব্যপার টা কোন কিছুই না?"
" আমি ধর্ষনের মূল কারনটা বলতেসি,  আর ৩০ আগে না ৩১ আগে এই পয়েন্টটাও মাথায় রাখ।" 
দিহানের যুক্তিটা আমার ভালোই লাগলো, কিন্তু সমস্যা একটাই ছেলেটা সবসময়ের মতই কথার মধ্যে রহস্য রেখে কথা বলে। যেমন আজকেও সামান্য ব্যপারটাকেও কতটা রহস্যময় করে তুললো।
"এবার বলি,  ধর্ষনের কারনগুলা আসলে কি। 

প্রথমত; পর্নসাইট আর মুভির নামে যে নোংরামি ছড়াচ্ছে তা। ২০১২ এক রিপোর্ট অনেযায়ী ৫৬% পর্ন ভিডিও দেখা ব্যাক্তির মতে," There tastes in porn had become increasingly extreme or deviant.” মানে এটা ড্রাগের মত কাজ করে। যত দেখবে তত আরো নেশা বাড়ে।  ব্রেইনে একধরনে কেমিক্যাল ক্ষরন হয় এর জন্য।  একটা সময় গিয়ে তা ব্রেইনকে এতটা উত্তেজিত করে দেয় যে তা তখন আর ভার্চুয়ালি সেটিসফাইড থাকে না। Then its works like a Cocain. (source: Link 1)

দ্বিতীয়ত; উপযুক্ত শাস্তির অভাব। এখন যদি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনার মধ্যে  কিছু ধর্ষককে ধরে জনসম্মুখে ইসলামি শাসনমতে পাথর  মেরে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় তাহলে স্বাভাবিকভাবেই এসব কাজের সাথে জড়িতরা এধরনের ক্রাইম করা থেকে দূরে থাকবে।"
 দিহান তার কথা শেষ করার আগেই সাকিব বলে উঠলো, "আমিও তো সেটাই বলতে চাচ্ছি। তবে সৌদি আরবে ইসলামিক শাসন থাকা সত্তে গত কিছু সময় ধরে দেখা যাচ্ছে তারা এভাবে মৃত্যুদন্ডের কথা বললেও তা ঠিকমত তো পালন করে না।  তার প্রমান সৌদি আরবে ফাইহান আল গামদিকে ৫ বছরের মেয়েকে ধর্ষনের পরও শুধু শাস্তি দিয়েছে ৮ বছরের জেল আর ৮ হাজার দোররা। তো এটাই কি ইসলামি শাসন?"

দিহান এবার আবার বলা শুরু করলো, "লেট মি ফিনিশ ইট। একে তো সৌদি আরবকে ইসলামের মডেল হিসেবে ধরার কথা কুরআন আর হাদিসের কোথাও বলে নাই। কারন ইসলামের মডেল হলো কুরআন আর নবীর হাদিস৷ আর মূলত সৌদিতে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলা রাজনৈতিক কারনে বর্তমান সময়ে করা হয়েছে।  যেটা তাদের দূর্নীতির অংশ। আর তারা যদি ইসলাম থেকে সরে যায় ধ্বংস তাদের হবে। যার প্রমান বর্তমান সৌদির অবস্তা। তার মানে এটা না যে ইসলামের নিয়মও তাদেরকে ফলো করে পাল্টে যাবে। 
তো যেটা বলতেসিলাম ইসলামি যে শাসন ১৪০০ বছর আগে ধর্ষকদের জন্য করে গেছে, সমাজে ন্যায় প্রতিষ্টা করতে গেলে সে যেই ধর্মের বা নাস্তিকই হোক না কেন,  তা মানতেই হবে।"  
সাকিব পূনরায় মাঝখানে বলে উঠলো," সেজন্যই দেখ আমেরিকাতে কিন্তু এসব ব্যপারে কোন ছাড় নাই।"
কথা টা শুনেই দিহান কিছুটা হেসে দিলো। হাসার কারনটা আমিও বুঝতে পারলাম না। কারন সাকিবের সাথে আমিও একমত।
" আমেরিকা যদি সত্যি এসব ব্যপারে এত কঠোর হয় তাহলে কেন ১৯৯০ সালের FBI  রিপোর্ট অনুযায়ী আমেরিকাতে সে বছর ১ লক্ষ  ২ হাজার ৫৬০ টা ধর্ষন কেইস হয়েছিলো, তাও মূল সংখ্যার ১৬%।৷ (source: link 2)।
আর ১৯৯৩ সালের এক রিপোর্ট অনুযায়ী শুধু ১০% এরেস্ট হয়।
যাক দেশ যেটায় হোক ধর্ষনের শাস্তির ব্যপারে ইসলাম যে নিয়ম করেছে তাকে এখন অমুসলিম হয়েও অস্বীকার করার উপায় কারো নাই।"
এবার আমাদের সারজিল ভাই এর মুখটা খুললো," তাহলে মানে এক্ষেত্রে নারীর দোষ থাকলেও তারপরও পুরুষকেই মৃত্যুদন্ড৷ বাহ, এটা কেমন কথা?"
" এক্ষেত্রে যদি নারীরও সমান দোষ থাকে তখন তা ধর্ষন না, তাকে যিনা বলা হয় সারজিল বাবু। সেক্ষেত্রেও ইসলাম উভয়কে সমান শাস্তি দিতে বলেছে। পাথড় মেরে মৃত্যুদন্ড।

এবার আসি তৃতীয় কারনে, পর্দা। " 
সাথে সাথে সারজিল উচ্চস্বরে বলে বসলো, " এবার আসলা লাইনে মিয়া। নারীর পর্দাটাও যে ধর্ষনের অন্যতম অংশ এবার বল।" 
দিহান আবার একটা প্রশ্ন ছুড়ে দিলো সারজিলের দিকে," কিরে তোর প্যান্টটা টাকনুর নিচে অবধি নেমে গেছে যে? আর এত টাইট জিন্স প্যান্ট পড়ার মানে কি? "
সারজিল পুরাই অবাক। কিসের মধ্যে কি। আমি আর সাকিবও অবাক হয়ে গেলাম। 
এবার আবার দিহান তার ব্যাখ্যা শুরু করলো," তুই জানোস শারজিল ইসলামে পর্দার বিষয়ে কুরআনে আগে পুরুষের পর্দার কথা বলেছে। অই যে বললাম ৩০ আগে না ৩১। সুরা নূর এর ৩০ নম্বর আয়াতে বলা আছে,
 " আপনি মুমিন পুরুষদের বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এটা তাদের জন্য উত্তম। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত।" 
এরপর সূরা নূরের ৩১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে নারীর পর্দার কথা," আর আপনি মুমিন নারীদের বলে দিন তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত  করে আর তারা যেন যা সাধারনত প্রকাশ  থাকে তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য্য প্রকাশ না করে।" এর পরপরই নারীদের পুরা শরীর ডাকার ব্যপারে কঠোরভাবে বলা হয়েছে।
 আর ইসলামে পর্দার ব্যপারে ৬ টি নিয়ম আছে যার মধ্যে কেবল একটি ছাড়া বাকি ৫ টি নিয়মই নারী পুরুষ উভয়ের জন্য সমান। সে ৬ টি নিয়ম হলো, 
১) ডিলাডালা পোষাক পরতে হবে,
২) পোষাকটি স্বচ্ছ বা পাতলা হবে না,  যাতে তা বাহির হতে দেখা না যায়।
৩)অতি চাকচিক্য পূর্ণ  হবে না, যে তা বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষন করে,
৪) কোন অমুসলিমদের ধর্মীয় প্রতীক থাকা যাবে না,
৫)বিপরীত লিঙ্গের কিছু পরিধান করা যাবে না।
৬)পুরুষ এর নাভী থেকে পায়ের টাকনু অবধি অবশ্যই ঢাকা থাকবে আর নারীর হাতের কবজি আর মুখমন্ডল ছাড়া কিছু দেখা যাবে না। যদিও অনেক ক্ষেতে মুখমন্ডল ঢাকাও বাধ্যতামূলক। 
মানে এক্ষেত্রে ৬ নাম্বার পয়েন্টটা তুই নিজে মিস করে কিভাবে একটা নারীকে সে ব্যাপারে বলবি।
এই ৬ নাম্বার পয়েন্ট টা ছাড়া বাকি গুলা সব নারী পুরুষ উভয়ের জন্য সমান আর এর বেশির ভাগই অন্যান্য ধর্ম গ্রন্থেও বলা আছে। যেমন; 
বাইবেল বুক অফ ডিটরনমি চাপ্টার ২২, অনুচ্ছেদ ৫ এ বলা আছে,
 " নারীর এমন পোশাক পরা উচিৎ নয় যা পুরুষের জন্য নির্ধারীত আর পুরুষের এমন পোষাক পরা উচিৎ নয় যা নারীর জন্য নির্ধারীত। আর যারা এমন করে তারা ঘৃনার যোগ্য।"
আবার বাইবেল প্রথম ক্রন্তিওন্স চাপ্টার ১১,  অনুচ্ছেদ ৫-৬ বলা আছে," যে নারী মাথার চুল খোলা রেখে প্রার্থনা করে তার চুল কাটা হোক।" ইসলামে কিন্তু ডিরেক্ট চুলা কাটার মত কোন নির্দেষ দেয়নি। মানে বাইবেল কুরআন থেকে বেশি  কঠোর।
আবার হিন্দু ধর্মগ্রন্থ রামায়নে আছে," পরশুরাম যখন রামের কাছে আসলো তখন রাম সীতাকে বললো, আমাদের চেয়ে উনি বড়।  তোমার দৃষ্টি নিচু করো এবং সৌন্দর্য্য প্রকাশ করো না।" 
আবার রিগবেধ বুক ১০,  চাপ্টার ৮৫,  অনুচ্ছেদ ৩০ এ বলা হয়েছে," যে নারী পুরুষের পোষাক পরে সে সীমালঙ্গন করে।"

রিগবেধ বুক ৮,  চাপ্টার ৩৩, অনুচ্ছেদ ১৯ বলা আছে," বক্ষ্মা বলেছেন- নারীদের মাথা ডেকে রাখতে। "
মানে পর্দার ব্যপারে নারী পুরুষ উভয়কেই ধরা হবে। আর এটা প্রমানিত যে যেসকল দেশে নারীর পর্দা বাধ্যতামূলক করা আছে সেসকল দেশে ধর্ষনের হারও কম যেমন ; আরব আমিরাতে ধর্ষনের হার ০.৯% আর USA তে ৩৮.৬%। এখন যদি কেউ বলে, না এক্ষেত্রে আরব দেশ গুলাতে নারীর কেইচ নেয়া হয় না বলেই কেইচ ফাইলও হয় না তাই হার কম যে। সেক্ষেত্রে এটা Corruption এর মধ্যে পরে, যে যে দেশে Corruption হার বেশি সে দেশে নারীর প্রতি এই রকম অন্যায়ও বেশি। তাহলে দেখ  আরবি আমিরাত less corruption এর ranking এ ২১ নাম্বার আর USA  এর ranking  ২৩।  (source : link 3,4) 
এরপর ও যদি বলে পর্দার  সাথে জড়িত না    তাহলে কিছু বলার নাই।

ফাইনালি,অন্যতম কারন নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা। নবী সাঃ এর হাদিস মতে, " দুইজন ননমাহরাম নারী পুরুষ একসাথে থাকলে ৩য় জন হয় সেখানে শয়তান।" আর স্বাভাবিকভাবেই শয়তান তার কাজ করবেই।" 
দিহানের এত ইনফরমেশন দেখে আমি সত্যিই হতবাক।  তাই বলেই বসলাম, " ভাই তুই কি এগুলা পেটের মধ্যে  নিয়ে চলা ফেরা করস যে নাকি।" 
এবার সাকিব তার হতাশাগ্রস্ত মুখটা খুললো, " এর মানে কি ধর্ষনের প্রতিকার হলো নারীকে বন্ধী করে রাখো, তাই তো?"
দিহান কিছুটা হেসে বললো," অবশ্যই না। সেজন্যই তো কারন গুলাকে গুরুত্ব  এর হিসাবে একটার পর একটা বললাম।  আর ধর্ষনের কারন গুলাকে সে হিসাবে সলভ করাটাই হলো ধর্ষনের প্রতিকার।  আর কোথাও এটা বলা নাই যে পর্দা করলে ধর্ষন হবে না। পর্দাটা নারী পুরুষ উভয়ের জন্য সমানভাবে সৃষ্টিকর্তার বিধান।  সেটা হিন্দধর্ম হোক আর ইসলাম হোক। কিন্তু একটা জিনিস যে দুই জন জমজ বোন যদি সমান ভাবে সুন্দরী হয় তাহলে একজ যদি পর্দা মেইনটেইন করে অপরজন তা না করে অবশ্যই যে করবে না তাকে রাস্তার বকাটেগুলা ডিস্টার্ব করবে। দেখি সাকিব একটা প্রশ্নের উত্তর দে যদি এই যে ইসলামি নিয়মে শাস্তি দেয়া, নারী পুরুষের উভয়ের জন্য পর্দা করা  আর নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা বন্ধ করা হয় তবে ধর্ষন বাড়বে, নাকি একই থাকবে নাকি কমবে?" 
সাকিব তাই বললো যা যৌক্তিক, কমবে। 
সারজিল এবার একটা সুন্দর মন্তব্য করলো, " মানে, পুরুষ; দৃষ্টি সংযত করবে, 
নারী; পর্দা মেইন্টেন করবে আর 
শাসক; ধর্ষকের উপযুক্ত শাস্তি দিবে,
এই তিনটাই একত্রিত করে ধর্ষনের প্রতিরোধ সম্ভব,  যা ইসলাম বাধ্যতামূলক করেছে। তাই তো?" 
" আফকোর্স মাই ফ্রেন্ড।  আর সাকিবকে বলবো পশ্চিমা সমাজ যা দেখায় তা সত্য কিনা তা যাচাই করে নিবি। সেজন্যই কুরআন এর সূরা হুজুরাত, অধ্যায় ৪৯,  আয়াত ৬ বলা আছে- যখন তুমি কোন তথ্য পাবে ৩য় কাউকে বলার আগে সেটা যাচাই করে নাও।" দিহান তার ভান্ডার এতটুকু বলেই বন্ধ করলো।
এতক্ষন বন্ধুদের মধ্যে এই আলোচনা শেষে আসলেই বলতে হবে যে ধর্ষন এর কারন ও প্রতিকার উভয় ক্ষেত্রেই ইসলামকে ফলো করা বাধ্যতামূলক আর ইসলামের কোন নিয়ম কোন সভ্যতা,  দেশ বা সময়কে ফলো করে না।  ইসলামের নিয়মনীতির মূল উৎস হচ্ছে কুরআন আর হাদিস। 

আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়েত দান করুক।

সূত্র:  





ডিজাইন: মুহাম্মাদ আইনান ইকবাল



Monday, October 5, 2020

ইসলামে ধর্ষণের শাস্তি কী!

লেখা: মুহাম্মাদ আইনান ইকবাল 

ইসলামে ধর্ষণের শাস্তি খুবই কঠোর। পুরো লেখাটা পড়লে আপনারা বিষয়টি নিশ্চিত হবেন ইনশাআল্লাহ। তবে আলোচনার শুরুতে ইসলামে ধর্ষণের শাস্তির তালিকা দেওয়া হলো-
১. প্রকাশ্যে পাথর মেরে হত্যা করা
২. ১০০ বেত্রাঘাত
৩. ব্যক্তিভেদে ওপরের ২ ধরণের শাস্তি দেওয়ার পাশাপাশি ‘মুহারাবা’র শাস্তি প্রয়োগ। (‘মুহরাবা’ সম্পর্কে নিচের বিস্তারিত আলোচনায় পাবেন)

ধর্ষণের ক্ষেত্রে এক পক্ষ থেকে ব্যভিচার সংঘটিত হয়। আর অন্য পক্ষ হয় মজলুম বা নির্যাতিত। তাই মজলুমের কোনো শাস্তি নেই। শুধু জালিম বা ধর্ষকের শাস্তি হবে। ধর্ষণের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় সংঘটিত হয়। এক. ব্যভিচার। দুই. বল প্রয়োগ। তিন. সম্ভ্রম লুণ্ঠন। ব্যভিচারের জন্য পবিত্র ক্বুরআনে বর্ণিত ব্যভিচারের শাস্তি পাবে। ইসলামে ব্যভিচারের শাস্তি ব্যক্তিভেদে ভিন্ন।
ব্যভিচারী যদি বিবাহিত হয়, তাহলে তাকে প্রকাশ্যে পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে।
আর যদি অবিবাহিত হয়, তাহলে তাকে প্রকাশ্যে ১০০ বেত্রাঘাত করা হবে।

হানাফি, শাফেয়ি ও হাম্বলি মাজহাব মতে, ধর্ষণের জন্য ব্যভিচারের শাস্তি প্রযোজ্য হবে।

তবে ইমাম মালেকের (রহঃ) মতে, ধর্ষণের অপরাধে ব্যভিচারের শাস্তির পাশাপাশি মুহারাবার শাস্তি প্রয়োগ করা হবে। ‘মুহারাবা’ হলো অস্ত্র দেখিয়ে বা অস্ত্র ছাড়াই ভীতি প্রদর্শন করে ডাকাতি করা কিংবা লুণ্ঠন করা। এককথায় ‘মুহারাবা’ হলো পৃথিবীতে অনাচার সৃষ্টি, লুণ্ঠন, নিরাপত্তা বিঘ্নিতকরণ, ত্রাসের রাজ্য কায়েম করা ইত্যাদি। পবিত্র ক্বুরআনে মহান আল্লাহ ‘মুহারাবা’র শাস্তি এভাবে নির্ধারণ করেছেন, “যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি হচ্ছে তাদের হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে বা তাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেওয়া হবে কিংবা দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে। এটি তাদের পার্থিব লাঞ্ছনা, আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।” (সুরা: মায়িদা, আয়াত: ৩৩)

এই আয়াতের আলোকে মালেকি মাজহাবে ধর্ষণের শাস্তিতে ‘মুহারাবা’র শাস্তি যুক্ত করার মত দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, সমাজে ধর্ষণ মহামারির আকার ধারণ করলে, সমাজ থেকে ধর্ষণ সমূলে নির্মূল করার লক্ষ্যে এ শাস্তি প্রয়োগ করা জরুরি। (আল মুগনি: ৮/৯৮)

সবশেষে বলতে চাই, ধর্ষণের ক্ষেত্রে ইসলামি আইন মতে শাস্তি দেওয়া হলে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে ধর্ষণ দূর হবে ইনশাআল্লাহ।


Thursday, August 27, 2020

সুলতান তুঘরিল বেগ: মহান সেলজুক সাম্রাজ্যের স্থপতি ছিলেন যিনি


এখনো আমরা বেশিরভাগ মানুষই জানিনা কে ছিলেন মহান সেলজুক সাম্রাজ্যের স্থপতি যেই সাম্রাজ্য ১০ শতক থেকে ১৪ শতক পর্যন্ত মধ্য এশিয়া এবং মধ্য প্রাচ্য শাসন করেছে। এক সময় এই সাম্রাজ্য অর্ধ-পৃথিবী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলো। ভারত উপমহাদেশের মোঘল সাম্রাজ্য এই সাম্রাজ্যেরই উত্তরসূরি। তাই আজ আমরা জানবো এই সেলজুক সাম্রাজ্যের স্থপতি সম্পর্কে।

সেলজুক সাম্রাজ্যের স্থপতি ছিলেন সুলতান তুঘরিল বেগ। তার পূর্ণ নাম ছিলো সুলতান রুকনুদ্দিন আবু তালিব তুঘরুল-বেগ মুহাম্মদ ইবনে মিকাইল ইবনে সেলজুক। তিনি জাতিতে অঘুজ তুর্কি ছিলেন। তুঘরিল গ্রেট ইউরেশিয়ান স্ট্যাফিজের তুর্কি যোদ্ধাদের একত্রিত করেছিলেন এই উপজাতিরা তাদের পূর্বপুরুষকে একটি একক খলিফা হিসেবে সেলজুক বেগ নামে অভিহিত করেছিল, এবং তাদের সাহায্যে পূর্ব ইরানে বিজয় অর্জন করেন। পরে তিনি পারস্য জয় করে ১০৫৫ সালে বুভেয়হী রাজবংশ থেকে আব্বাসীয় রাজধানী বাগদাদ পূনঃদখল করেন এবং তুঘরিল আব্বাসীয় খলিফার কাছে রাজধানী বাগদাদ ন্যস্ত করেন ।তিনি বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে এবং ফাতিমদ খিলাফতের বিরুদ্ধে নিজ বাহিনীতে খলিফার সৈন্যগুলো ব্যবহার করেন। তিনি তার খিলাফতের(সাম্রাজ্য) সীমানা সম্প্রসারণ করে দক্ষ কূটনীতির মাধ্যমে পৃথিবীর অর্ধ-ভূখন্ড তার শাসন বলয়ের মধ্য রাখতে সক্ষম হন।

ইসলামী বিশ্বকে একত্রিত করার প্রচেষ্টায় সফল হন। সেলজুকদের নেতা তুঘরিল বেগ, বুভেয়হীদের রাষ্ট্রকে হিজরি ৪৪৭ সালে উচ্ছেদ করে এই অঞ্চল থেকে ফিতনা দূরীভূত করতে সক্ষম হন। যারা মসজিদের দরজায় সাহাবীদেরকে গালি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের লেখা টাঙাতো তাদেরকে তিনি সমুলে উৎখাত করতে সক্ষম হন। এই ব্যাপারে সব চেয়ে বেশি সীমালঙ্ঘনকারী রাফেজি আবু আব্দুল্লাহ আল জ্বালাবীককে তিনি হত্যা করেন। বাগদাদের আব্বাসী খলিফার উপর এই বুভেয়হীদের প্রচণ্ড চাপ ছিল। সেলজুকগণ এই বুভেয়হী রাষ্ট্রের বিলুপ্তি ঘটিয়ে তাদেরকে বাগদাদ থেকে অপসারণ করেন। সেলজুকের সুলতান তুঘরিল বেগ, আব্বাসী খিলাফতের রাজধানী বাগদাদে গেলে তৎকালীন আব্বাসী খলিফা কাইম বি আমরিল্লাহ তাকে সাদর সম্ভাষণ জানান এবং তাকে সুলতান রুকুনুদ্দীন নামক উপাধিতে ভূষিত করেন। তাকে তার নিজের আসনে বসান এবং অনেক সম্মানে ভূষিত করেন। তার নামে মুদ্রাঙ্কিত করেন এবং বাগদাদ সহ অন্যান্য অঞ্চলের মসজিদে খুতবার সময় তার নাম উল্লেখ করা হয়। এইভাবে সেলজুকদের মান-মর্যাদা আরও অনেক বেড়ে যায়। সেই সময়ের পর থেকে সেলজুকরা, বূভেয়হীদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠা আব্বাসী খলিফাদেরকে সব চেয়ে বড় সাহায্য করেন এবং খলিফা সহজে তার কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম হন। সুলতান তুঘরিল বেগ একজন ব্যক্তিত্ত্বশালী , অসাধারণ মেধাবী এবং সাহসী একজন সেনাপতি ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন দ্বীনদার এবং আবেদ। আর এই কারণেই তিনি তার জাতির কাছ থেকে অনেক বড় সমর্থন এবং সাহায্য পেয়েছিলেন। তিনি ‘’সুলজুকি তুর্ক’’ নামক শক্তিশালী একটি সেনাবাহিনী গঠন করেন এবং ‘’শক্তিশালী রাষ্ট্র’’ এই শ্লোগান দিয়ে এগিয়ে যান। আব্বাসী খলিফা কাইম বি আমরিল্লাহর সাথে পরবর্তীতে সুলতান তুঘরিলের সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পায় এবং এই সম্পর্কের জের ধরে খলিফা সুলতান তুঘরিলের বড় ভাই চাগরি বেগ সাহেবের মেয়েকে বিয়ে করেন। হিজরি ৪৪৮ সালে (১০৫৬ খ্রিঃ) এই বিবাহ সংগঠিত হয়। পরবর্তিতে হিজরি ৪৫৪ সালে সুলতান তুঘরিল খলিফার মেয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু এঁর পর সুলতান তুঘরিল বেগ বেশি দিন হায়াত পাননি। হিজরী ৪৫৫ সালে পবিত্র রমজান মাসের শুক্রবার রাতে ৭০ বছর বয়সে মৃত্যুবরন করেন, তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। তার পরে সাম্রাজ্যের ক্ষমতায় আসেন তার ভ্রাতুষ্পুত্র সুলতান আল্প আরসালান বেগ। সুলতান তুঘরিল বেগের মৃত্যুর পর সেলজুকগন, সুলতান আল্প আরসালানের নেতৃত্বে খোরাসান, ইরান, উত্তর – পূর্ব ইরাক অঞ্চলে পুনঃদখল করে সাম্রাজ্যকে সুসংগঠিত করেন।

এই লেখাটি লেখতে যেসব সূত্র আমাকে সহযোগিতা করেছে:


(𝑨𝒊𝒏𝒂𝒏 𝒀𝒂𝒔𝒓𝒐𝒃𝒊)

Tuesday, August 25, 2020

সুলতান বারকা খান: নীল ও সাদা সাম্রাজ্যের শাসক ছিলেন যিনি


চেঙ্গিস খানের কথা মোটামুটি সবার জানা থাকলেও Khan of the Golden Horde বারকা খান সম্পর্কে আমাদের জানার পরিধি কম। অথচ মোঙ্গল সাম্রাজ্যের এই মহান শাসক সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন।

তাই চলুন, আজ আমরা বারকা খানকে জানবো। 
বারকা খান (অথবা বিরকায়) ছিলেন চেঙ্গিস খানের নাতি। তিনি একজন মোঙ্গল সেনাপতি এবং ১২৫৭–১২৬৬ পর্যন্ত সোনালি সাম্রাজ্যের শাসক, যিনি নীল সাম্রাজ্য এবং সাদা সাম্রাজ্যের উপর শাসন করতে পেরেছিলেন। যুদ্ধের ময়দানে সাহসিকতা ও বীরত্বের জন্য জীবনে বহুবার পুরস্কৃত হন তিনি।

বারকা খান ১২৫২ সালে বুখারা শহরে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি যখন সর-জেকে ছিলেন তখন বুখারার একটি কাফেলার সাথে সাক্ষাত করেন এবং তাদের ধর্ম-বিশ্বাস সম্পর্কে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। বারকা খান তখন ইসলামের একত্ববাদ ও অন্যান্য বিশ্বাসের ধারণা পান এবং মুগ্ধ হন। তিনি কাফেলা ভ্রমণকারীদের কথার দ্বারা ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হন। তারপরে বারকা তার ভাই তুখ-তিমুরকেও ইসলাম গ্রহণে উৎসাহিত করেছিলেন। 

১২৫৫ সালে বারকা খানের ভাই বাতু খান মারা যাওয়ার পর ১২৫৭ সালে তিনি নীল সাম্রাজ্যে (পশ্চিম) তার ভাইয়ের স্থলাভিষিক্ত হন। তিনিই প্রথমবারের মতো মঙ্গোল সাম্রাজ্যের একটি খানাতে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামের আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠা করেন। বারকা শীঘ্রই একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান হয়ে গেলেন। তাঁর ধর্মান্তরের ফলে নীল সাম্রাজ্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েছিল, যদিও তাদের মধ্যে তখনও পশু-পূজারী এবং বৌদ্ধ ছিল। চেঙ্গিস খানের আরেক নাতি হালাকুর বাগদাদ ধ্বংস এবং খলিফা আল-মুস্তা'সিমকে হত্যা করা বারকাকে ক্ষুব্ধ করেছিল। তিনি হালাকু খানকে মোকাবেলা করার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। সিরিয়া ও মিশর দখলের হালাকুর উচ্চাভিলাষ বারকার স্ব-ধর্মীয় লোকদের হুমকিতে রেখেছিল।

মুসলিম ঐতিহাসিক রশিদ-আল-দীন হামাদানীর অনুযায়ী বারকা খান বাগদাদে আক্রমণের প্রতিবাদে তাঁর মঙ্গোল এবং মুসলিম প্রজাদের বলেছিলেন:

“সে (হালাকু) মুসলিমদের সব শহর ধ্বংস করেছে এবং খলিফাকে হত্যা করেছে। আল্লাহর সহায়তায় আমি তার কাছ থেকে সকল নির্দোষের রক্তের হিসাব আদায় করব।”

হালাকু পুত্র আবাকা খানকে আক্রমণ করার জন্য বারকা কুড়া নদী পার হওয়ার চেষ্টা করার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ১২৬৬ থেকে ১২৬৭ এর মধ্যেই তিনি মারা যান। তার পরে তাঁর ভাইয়ের নাতি মেঙ্গু-তিমুর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। মামলুকদের সাথে জোটবদ্ধ থাকার এবং ইলখানাতের সাথে সংঘর্ষে জড়িত থাকার নীতি মেঙ্গু-তিমুর চালিয়ে যান। অনেক ইতিহাসবিদ একমত হয়েছেন যে হালাকুর বিরুদ্ধে বারকার হস্তক্ষেপ মক্কা এবং জেরুজালেমসহ অন্যান্য পবিত্র ভূমির বাগদাদের মতো ভাগ্য হওয়া থেকে রক্ষা করেছিল। প্রকৃতপক্ষে, আল্লাহ তা'আলা বারকা খানের মাধ্যমে মক্কা এবং জেরুজালেমসহ অন্যান্য পবিত্র ভূমিকে রক্ষা করেছিলেন। 

বারকা খান তাঁর শাসনামলে যে কাজ করেন তার প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। বিশেষত হালাকু খানের ধ্বংসযাত্রা থামিয়ে তাঁর হাত থেকে মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার মুসলিম গোত্রগুলোকে রক্ষা করেন; যদিও বেশির ভাগ ঐতিহাসিক আইন জালুতের যুদ্ধকেই ইতিহাসের বাঁকবদলকারী আখ্যা দেন। (আইন জালুতের যুদ্ধ সম্পর্কে জানতে এই বিষয়ে আমার লেখা পড়তে পারেন এই লিংকে: https://muhammadainaniqbal.blogspot.com/2020/08/blog-post_22.html?m=1) কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা ছিল একটি প্রাথমিক জয়। এর পরও মুসলিম বিশ্ব হালাকু খানের আক্রমণঝুঁকিতে ছিল। তাছাড়া হালাকু খান নিজেও সেই যুদ্ধে উপস্থিত ছিলেন না। তবে অসম যুদ্ধে মামলুকদের বিজয় অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। এই কৃতিত্বের প্রকৃত দাবিদার বারকা খান। তাঁর বাহিনীই হালাকু খানকে ডেরায় ফিরে যেতে বাধ্য করেছিল। তিনি আরেকটি মুসলিম গণহত্যা রোধ করতে সক্ষম হন। তিনি যদি হালাকু খানকে রোধ না করতেন হয়তো ইসলামের পবিত্র ভূমিও বাগদাদের মতো রক্তে ভেসে যেত। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, বর্তমান সময়ের মুসলিম ঐতিহাসিকরা বারকা খানের এই অবদান স্মরণ করেন না।

যদিও বারকা খান কোনো দরবেশ ছিলেন না, তবে তিনি মুসলিম ভ্রাতৃত্ব লালন করতেন। সংকটপূর্ণ সময়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। রাজনীতির কূটকৌশল ও ব্যক্তিস্বার্থ বারকা খানকে ‘উম্মাহ চিন্তা’ থেকে দূরে ঠেলে দেয়নি। এটিই বারকা খানের শ্রেষ্ঠত্ব।  

আল্লাহ তা'আলা নীল ও সাদা সাম্রাজ্যের শাসক বারকা খানকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।- আমীন

লেখাটি লেখতে যেসব সূত্র আমাকে সহযোগিতা করেছে:





Saturday, August 22, 2020

বর্বর মোঙ্গলদের মুসলিম বাহিনীর নিকট পরাজয়ের ইতিহাস


যদি প্রশ্ন আসে, মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সেনাবাহিনীর নাম কী! তাহলে সবার আগেই আসবে  মধ্যযুগের মোঙ্গল বাহিনীর নাম যার সূচনা হয়েছিল চেঙ্গিস খানের হাতে। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে তাতার বাহিনী নামে পরিচিত ছিল মোঙ্গল বাহিনী। ১২০৬ সালে চেঙ্গিস খানকে মঙ্গোলিয়ার স্তেপের একচ্ছত্র অধিপতি বা গ্রেট খান হিসাবে ঘোষণা করার পর মোঙ্গল বাহিনী একে একে জয় করে নিয়েছিল এশিয়া ও ইউরোপ বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্যের মালিক ছিল মোঙ্গলরা। চেঙ্গিস খানের সময় থেকে শুরু হওয়া মোঙ্গলদের জয়যাত্রা অব্যাহত ছিল পরবর্তী গ্রেট খানদের সময়ও। ১২০৬ সাল থেকে ১২৬০ সাল এই অর্ধশত বছরে তাঁরা  একটি যুদ্ধেও হারে নি। বাগদাদ, সমরখন্দ, বেইজিং, বুখারা, আলেপ্পোর মত বড় বড় শহর তাতারি হামলায় মাটির সাথে মিশে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আইন জালুতের যুদ্ধে শেষ হয় বর্বর মোঙ্গলদের এই জয়যাত্রা। আইন জালুতের যুদ্ধ ১২৬০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধ দক্ষিণপূর্ব গ্যালিলিতে জাজরিল উপত্যকার আইন জালুতে মামলুক ও মোঙ্গলদের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল।

চলুন যেনে নিই সেই ইতিহাস:

১২৫১ সালে মংকে খান খাগান হন। তিনি তার দাদা চেঙ্গিস খানের বিশ্বব্যপী সাম্রাজ্যের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সচেষ্ট ছিলেন। তিনি তার ভাই হালাকু খানকে পশ্চিমের জাতিসমূহ-কে অধিকার করার দায়িত্ব দেন।

পাঁচ বছর যাবত সেনাদল গঠনের পর ১২৫৬ সালে হালাকু খান অভিযান শুরু করেন। তিনি দক্ষিণ দিকে যাত্রা করেন। আত্মসমর্পণ না করলে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য মংকে খানের নির্দেশ ছিল। হালাকু খান অভিযানকালে অনেক রাজ্য জয় করেন। তাদের অনেকে তার দলে সৈনিক সরবরাহ করেছে। বাগদাদ অভিযানের সময় সিলিসিয়ান আর্মেনীয়রা তার সাথে ছিল। পাশাপাশি এন্টিওকের ফ্রাঙ্ক সেনারাও তার সাথে যোগ দেয়। অভিযানের সময় হাসাসিনরা তার কাছে আত্মসমর্পণ করে। বাগদাদ ধ্বংসের ফলে কয়েক শতাব্দী প্রাচীন আব্বাসীয় খিলাফত ধ্বংস হয়ে যায়। এরপর দামেস্কের আইয়ুবীয়দের পতন হয়। হালাকু খান দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে মামলুক সালতানাত জয় করার পরিকল্পনা করেছিলেন। এসময় মামলুকরা প্রধান মুসলিম শক্তি ছিল। ১২৬০ সালে হালাকু খান কায়রোতে সুলতান কুতুজের কাছে দূত পাঠিয়ে আত্মসমর্পণ দাবি করেন। চিঠিটি পড়লেই বোঝতে পারবেন, মোঙ্গলদের ভাষা ছিল তাদের তরবারির মতোই ভয়ঙ্কর। চিঠিটি হুবহু তোলে ধরার চেষ্টা করছি:

“পূর্ব ও পশ্চিমের শাহেনশাহ মহান খানের পক্ষ থেকে এটি প্রেরিত হচ্ছে মামলুক কুতুজের উদ্দেশ্যে যিনি আমাদের তলোয়ার থেকে পালিয়ে গিয়েছেন। অন্যান্য রাজ্যসমূহের কী পরিণতি হয়েছে তা চিন্তা করে আপনার উচিত আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করা। আপনি শোনেছেন কিভাবে আমরা একটি বিশাল সাম্রাজ্য জয় করেছি এবং পৃথিবীকে দূষিত কারী বিশৃঙ্খলা থেকে একে বিশুদ্ধ করেছি। আমরা বিশাল অঞ্চল জয় করেছি, সব মানুষকে হত্যা করেছি। আপনি আমাদের সেনাবাহিনীর ত্রাস থেকে বাঁচতে পারবেন না। আপনি কোথায় পালাবেন? আমাদের কাছ থেকে পালানোর জন্য আপনি কোন পথ ধরবেন? আমাদের ঘোড়াগুলি দ্রুতগামী, আমাদের তীর ধারালো, আমাদের তলোয়ার বজ্রের মত, আমাদের হৃদয় পর্বতের মত কঠিন, আমাদের সেনারা বালুর মত অগণিত। দুর্গ আমাদের আটকাতে পারবে না, কোনো সেনাবাহিনী আমাদের থামাতে পারবে না। আল্লাহর কাছে আপনার দোয়া আমাদের বিরুদ্ধে কাজে আসবে না। অশ্রু আমাদের চালিত করে না এবং মাতম আমাদের স্পর্শ করে না। শুধুমাত্র যারা আমাদের সুরক্ষা চাইবে তাদেরকে নিরাপত্তা দেয়া হবে। যুদ্ধের আগুন জ্বলে উঠার আগে দ্রুত আপনার জবাব দিন। প্রতিরোধ করলে আপনি সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্যোগের মুখোমুখি হবেন। আমরা আপনাদের মসজিদ গুলি চুরমার করে দেব এবং আপনাদের আল্লাহর দুর্বলতা দেখতে পাবেন এবং এরপর আপনাদের সন্তান ও বৃদ্ধদেরকে হত্যা করা হবে। এই মুহূর্তে আপনি একমাত্র শত্রু যার বিরুদ্ধে আমরা অগ্রসর হয়েছি।”

হালাকু

সাহসী সুলতান কুতুজ মোঙ্গলদের দূতদের কে হত্যা করে এর জবাব দেন। দূতদের কাটা মাথা কায়রোর বাব জুলাইলা ফটকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল।

এসময় মংকে খানের মৃত্যুর ফলে হালাকু খানসহ অন্যান্য নেতৃস্থানীয় মঙ্গোলরা নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য মঙ্গোলিয়া ফিরে আসেন। হালাকু তার বাহিনীর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে তার সাথে নিয়ে যান। তার রেখে যাওয়া বাহিনীর সেনাপতি ছিলেন কিতবুকা।

মোঙ্গলদের প্রতিহত করার জন্য সুলতান কুতুজ দ্রুত একটি বাহিনী গঠন করে ফিলিস্তিনের দিকে অগ্রসর হন।অভিযানকালে বাইবার্স‌ তার সাথে যোগ দেন।

আগস্টের শেষদিকে মোঙ্গলরা তাদের মোঙ্গল শিবির থেকে দক্ষিণ দিকে যাত্রা করে। তারা এসময় আক্কাকেন্দ্রীক ক্রুসেডার জেরুজালেম রাজ্যের সাথে মিলে ফ্রাঙ্ক-মঙ্গোল মৈত্রী গঠনের চেষ্টা চালায়। কিন্তু পোপ চতুর্থ আলেক্সান্ডার এতে সায় দেননি। এছাড়া সাইদার শাসক জুলিয়ানের কারণে কিতবুকার নাতি মৃত্যুর ফলে দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। কিতবুকা রাগান্বিত হয়ে সাইদা আক্রমণ করেন। অন্যদিকে মামলুক রাও মোঙ্গলদের বিরুদ্ধে সহায়তার জন্য ক্রুসেডারদের প্রতি বার্তা পাঠায়।

মামলুকরা ফ্রাঙ্কদের দীর্ঘদিনের শত্রু হলেও আক্কার ব্যারন মোঙ্গলদেরকে বেশি ক্ষতিকর হিসেবে বিবেচনা করেন। এসময় ক্রুসেডাররা দুই পক্ষের মধ্যে কারো সাথে সরাসরি যোগ না দিয়ে ক্ষতি না করার শর্তে মামলুকদেরকে ক্রুসেডার এলাকার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করার সুযোগ দেয়। মোঙ্গলদের জর্ডান নদী অতিক্রম করার খবর পাওয়ার পর সুলতান কুতুজ দক্ষিণ পশ্চিমে জাজরিল উপত্যকার আইন জালুতের দিকে অগ্রসর হন।

মামলুকরা স্থানীয় ভূপ্রকৃতি সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত ছিল। কৌশল হিসেবে কুতুজ তার বাহিনীর একটি অংশকে স্থানীয় পাহাড়ে লুকিয়ে রাখেন এবং বাইবার্স‌কে একটি ক্ষুদ্র সেনাদল দিয়ে পাঠানো হয়।

দুইপক্ষ মুখোমুখি হওয়ার পর মোঙ্গলদেরকে ফাঁদে ফেলার জন্য বাইবার্স‌ হিট-এন্ড-রান কৌশল কাজে লাগান। আক্রমণ করে মামলুকরা পালিয়ে যাচ্ছে দেখে মোঙ্গলরা তাদের ধাওয়া করে। মোঙ্গল সেনাপতি কিতবুকা এই ফাঁদ বুঝতে না পেরে অগ্রসর হন ফলে পাহাড়ি এলাকায় পৌছার পর মামলুকরা আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে এসে আক্রমণ চালায়। ফলে মোঙ্গলরা চারদিক থেকে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।

মোঙ্গলরা বের হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। কুতুজ কিছু দূরে তার নিজস্ব সেনাদল নিয়ে যুদ্ধের প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করছিলেন। এসময় মোঙ্গলরা মামলুক বাহিনীর বাম অংশকে প্রায় ভেদ করতে সক্ষম হয়। এসময় কুতুজ তার যুদ্ধের হেলমেট খুলে ফেলেন যাতে সৈনিকরা তাকে চিনতে পারে। এরপর তিনি তার সেনাদল নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েন। মোঙ্গলরা পিছু হটে কিছু দূরে গিয়ে সংগঠিত হয়ে পুনরায় যুদ্ধক্ষেত্রে ফিরে আসে। তবে যুদ্ধের গতি মামলুকদের পক্ষে চলে যায়। কিতবুকা যুদ্ধে নিহত হন এবং এই অঞ্চলের মোঙ্গল বাহিনীর প্রায় সম্পূর্ণ অংশ ধ্বংস হয়ে যায়।

হাত কামান ব্যবহার হয়েছে এমন যুদ্ধসমূহের মধ্যে আইন জালুতের যুদ্ধ অন্যতম প্রাচীন যুদ্ধ হিসেবে উল্লেখযোগ্য।মোঙ্গল ঘোড়া ও অশ্বারোহীদের মধ্যে আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য মামলুকরা এসমস্ত বিস্ফোরক ব্যবহার করে। পরবর্তীকালে আরব রসায়ন ও সামরিক নিয়মকানুনে বিস্ফোরক হিসেবে বারুদ সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে।

এভাবেই মুসলমানদের হাতে থেমে যায়, বর্বর মোঙ্গলদের জয়যাত্রা।

লেখাটি লিখতে যেসব সূত্র সহযোগিতা করেছে:

১. উইকিপিডিয়া 
২. রোর বাংলা

(𝑨𝒊𝒏𝒂𝒏 𝒀𝒂𝒔𝒓𝒐𝒃𝒊)



Our group link: https://www.facebook.com/groups/302517450203009/ 
Our pages link: https://www.facebook.com/islamicmediachannelbd/?fref=gs&dti=302517450203009&hc_location=group_dialog
and
https://www.facebook.com/islamicmediablogs/ 
Our youtube channel link: https://www.youtube.com/c/Islamicmedia1234

Saturday, May 16, 2020

অবিশ্বাসীর দাফন

লেখক : আইনান ইয়াসরবি 

গফুর চৌধুরীর ঘরে আজ কান্নার রোল। এভাবে লোকটা চলে যাবেন কেউ ভাবতেই পারেননি। আরে ভদ্রলোকতো গতকালও পাড়ার 'মুক্তমনা সংঘে'র আয়োজিত 'ধর্মীয় কুসংস্কার' নামক সেমিনারে জোরালো বক্তব্য রেখেছিলেন যেখানে তিনি বলেছিলেন, "আমি ধর্ম-কর্ম করিনা। এগুলা গোঁড়ামি। ইসলাম একটি সন্ত্রাসী ধর্ম...."

সেমিনার থেকে ফিরে রাতেই হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক করেন। সকাল হওয়ার আগেই মারা যান। যায় হোক, সারাজীবন ধর্মের বিরুদ্ধে কঠোর থাকা গফুর চৌধুরীর মৃত্যুর খবর শুনে ভক্তকুলকে "ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিঊন" পড়তে দেখা যাচ্ছে। অনেকে আত্মার মাগফিরাত কামনা করছে। অনেকটা চাপের মুখে এলাকার ইমাম খাট্টা কম্যুনিস্ট গফুর সাহেবের জানাজাও পড়ালেন। তারপর আবার মোনাজাত করে পরকালে অবিশ্বাসী গফুর চৌধুরীর জন্য কবরের আজাবও মাফ চাওয়া হলো। তাছাড়া তার ছেলেদেরও দেখা গেলো তার ভুল-ত্রুটির জন্য মানুষের কাছে মাফ চাইতে। আচ্ছা একটা কথা বলতেই ভুলে গিয়েছিলাম। গফুর সাহেবের জানাজায় উপস্থিত লোকেরা বেশিরভাগই ওজু বানায়নি, পুকুর দূরে ছিল বলে। সবাই কান্নাকাটি করে কবরস্থানে কবর দেয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ এই সময় একজন সত্তরোর্ধ মুরুব্বিকে হাসতে দেখা যায়। এমন সময়ে কেন হাসলেন কেউ একজন জিজ্ঞেস করলে তার জবাবে তিনি কিছুটা চলিত কিছুটা আঞ্চলিক ভাষায় বললেন, "এই গফুরতো ধর্মেই বিশ্বাস কইরতোনা। আর আইজ তারই জানাজা হইলো। দাফনও হইবো। যার ধর্মই নাই তার আবার এগুলার কী দরকার! কুত্তার ধর্ম নাই, দাফনও নাই। মরা কুত্তারে ডাস্টবিনে দেখা যায়। এই ব্যাটারে এতো কষ্ট কইরা দাফন না কইরা ডাস্টবিনেওতো ফেলা যায়।" এলাকার অনেক যুবককে মুরুব্বির কথায় মৃদু হাসতে দেখা গেলো। যাক, মুরুব্বির কথাকে পাত্তা দেয় কে! দাফন করা হলো। শুনলাম, তারপর নাকি ইমাম সাহেব কবরে বসে বসে আরও কী কী পড়লেন।

[ বিশেষ দ্রষ্টব্য : এটি একটি কাল্পনিক গল্প। অনেকদিন পর গল্প লিখলাম। তাই ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। প্রয়োজনীয় মন্তব্য করে পাশে থাকবেন। ধন্যবাদ। ]



সকল কাজের মূলেই যেন থাকে খোদার সন্তুষ্টি অর্জন

লেখা: মুহাম্মাদ আইনান ইকবাল আপনারা হয়তো মুসলিম জাহানের ৪র্থ খলিফা হযরত আলী ইবনে আবু তালিবের (রাঃ) সেই ঘটনাটি শোনেছেন। একদা যুদ্ধের ময়দান...