Monday, October 5, 2020

ইসলামে ধর্ষণের শাস্তি কী!

লেখা: মুহাম্মাদ আইনান ইকবাল 

ইসলামে ধর্ষণের শাস্তি খুবই কঠোর। পুরো লেখাটা পড়লে আপনারা বিষয়টি নিশ্চিত হবেন ইনশাআল্লাহ। তবে আলোচনার শুরুতে ইসলামে ধর্ষণের শাস্তির তালিকা দেওয়া হলো-
১. প্রকাশ্যে পাথর মেরে হত্যা করা
২. ১০০ বেত্রাঘাত
৩. ব্যক্তিভেদে ওপরের ২ ধরণের শাস্তি দেওয়ার পাশাপাশি ‘মুহারাবা’র শাস্তি প্রয়োগ। (‘মুহরাবা’ সম্পর্কে নিচের বিস্তারিত আলোচনায় পাবেন)

ধর্ষণের ক্ষেত্রে এক পক্ষ থেকে ব্যভিচার সংঘটিত হয়। আর অন্য পক্ষ হয় মজলুম বা নির্যাতিত। তাই মজলুমের কোনো শাস্তি নেই। শুধু জালিম বা ধর্ষকের শাস্তি হবে। ধর্ষণের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় সংঘটিত হয়। এক. ব্যভিচার। দুই. বল প্রয়োগ। তিন. সম্ভ্রম লুণ্ঠন। ব্যভিচারের জন্য পবিত্র ক্বুরআনে বর্ণিত ব্যভিচারের শাস্তি পাবে। ইসলামে ব্যভিচারের শাস্তি ব্যক্তিভেদে ভিন্ন।
ব্যভিচারী যদি বিবাহিত হয়, তাহলে তাকে প্রকাশ্যে পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে।
আর যদি অবিবাহিত হয়, তাহলে তাকে প্রকাশ্যে ১০০ বেত্রাঘাত করা হবে।

হানাফি, শাফেয়ি ও হাম্বলি মাজহাব মতে, ধর্ষণের জন্য ব্যভিচারের শাস্তি প্রযোজ্য হবে।

তবে ইমাম মালেকের (রহঃ) মতে, ধর্ষণের অপরাধে ব্যভিচারের শাস্তির পাশাপাশি মুহারাবার শাস্তি প্রয়োগ করা হবে। ‘মুহারাবা’ হলো অস্ত্র দেখিয়ে বা অস্ত্র ছাড়াই ভীতি প্রদর্শন করে ডাকাতি করা কিংবা লুণ্ঠন করা। এককথায় ‘মুহারাবা’ হলো পৃথিবীতে অনাচার সৃষ্টি, লুণ্ঠন, নিরাপত্তা বিঘ্নিতকরণ, ত্রাসের রাজ্য কায়েম করা ইত্যাদি। পবিত্র ক্বুরআনে মহান আল্লাহ ‘মুহারাবা’র শাস্তি এভাবে নির্ধারণ করেছেন, “যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি হচ্ছে তাদের হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে বা তাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেওয়া হবে কিংবা দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে। এটি তাদের পার্থিব লাঞ্ছনা, আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।” (সুরা: মায়িদা, আয়াত: ৩৩)

এই আয়াতের আলোকে মালেকি মাজহাবে ধর্ষণের শাস্তিতে ‘মুহারাবা’র শাস্তি যুক্ত করার মত দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, সমাজে ধর্ষণ মহামারির আকার ধারণ করলে, সমাজ থেকে ধর্ষণ সমূলে নির্মূল করার লক্ষ্যে এ শাস্তি প্রয়োগ করা জরুরি। (আল মুগনি: ৮/৯৮)

সবশেষে বলতে চাই, ধর্ষণের ক্ষেত্রে ইসলামি আইন মতে শাস্তি দেওয়া হলে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে ধর্ষণ দূর হবে ইনশাআল্লাহ।


Thursday, August 27, 2020

সুলতান তুঘরিল বেগ: মহান সেলজুক সাম্রাজ্যের স্থপতি ছিলেন যিনি


এখনো আমরা বেশিরভাগ মানুষই জানিনা কে ছিলেন মহান সেলজুক সাম্রাজ্যের স্থপতি যেই সাম্রাজ্য ১০ শতক থেকে ১৪ শতক পর্যন্ত মধ্য এশিয়া এবং মধ্য প্রাচ্য শাসন করেছে। এক সময় এই সাম্রাজ্য অর্ধ-পৃথিবী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলো। ভারত উপমহাদেশের মোঘল সাম্রাজ্য এই সাম্রাজ্যেরই উত্তরসূরি। তাই আজ আমরা জানবো এই সেলজুক সাম্রাজ্যের স্থপতি সম্পর্কে।

সেলজুক সাম্রাজ্যের স্থপতি ছিলেন সুলতান তুঘরিল বেগ। তার পূর্ণ নাম ছিলো সুলতান রুকনুদ্দিন আবু তালিব তুঘরুল-বেগ মুহাম্মদ ইবনে মিকাইল ইবনে সেলজুক। তিনি জাতিতে অঘুজ তুর্কি ছিলেন। তুঘরিল গ্রেট ইউরেশিয়ান স্ট্যাফিজের তুর্কি যোদ্ধাদের একত্রিত করেছিলেন এই উপজাতিরা তাদের পূর্বপুরুষকে একটি একক খলিফা হিসেবে সেলজুক বেগ নামে অভিহিত করেছিল, এবং তাদের সাহায্যে পূর্ব ইরানে বিজয় অর্জন করেন। পরে তিনি পারস্য জয় করে ১০৫৫ সালে বুভেয়হী রাজবংশ থেকে আব্বাসীয় রাজধানী বাগদাদ পূনঃদখল করেন এবং তুঘরিল আব্বাসীয় খলিফার কাছে রাজধানী বাগদাদ ন্যস্ত করেন ।তিনি বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে এবং ফাতিমদ খিলাফতের বিরুদ্ধে নিজ বাহিনীতে খলিফার সৈন্যগুলো ব্যবহার করেন। তিনি তার খিলাফতের(সাম্রাজ্য) সীমানা সম্প্রসারণ করে দক্ষ কূটনীতির মাধ্যমে পৃথিবীর অর্ধ-ভূখন্ড তার শাসন বলয়ের মধ্য রাখতে সক্ষম হন।

ইসলামী বিশ্বকে একত্রিত করার প্রচেষ্টায় সফল হন। সেলজুকদের নেতা তুঘরিল বেগ, বুভেয়হীদের রাষ্ট্রকে হিজরি ৪৪৭ সালে উচ্ছেদ করে এই অঞ্চল থেকে ফিতনা দূরীভূত করতে সক্ষম হন। যারা মসজিদের দরজায় সাহাবীদেরকে গালি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের লেখা টাঙাতো তাদেরকে তিনি সমুলে উৎখাত করতে সক্ষম হন। এই ব্যাপারে সব চেয়ে বেশি সীমালঙ্ঘনকারী রাফেজি আবু আব্দুল্লাহ আল জ্বালাবীককে তিনি হত্যা করেন। বাগদাদের আব্বাসী খলিফার উপর এই বুভেয়হীদের প্রচণ্ড চাপ ছিল। সেলজুকগণ এই বুভেয়হী রাষ্ট্রের বিলুপ্তি ঘটিয়ে তাদেরকে বাগদাদ থেকে অপসারণ করেন। সেলজুকের সুলতান তুঘরিল বেগ, আব্বাসী খিলাফতের রাজধানী বাগদাদে গেলে তৎকালীন আব্বাসী খলিফা কাইম বি আমরিল্লাহ তাকে সাদর সম্ভাষণ জানান এবং তাকে সুলতান রুকুনুদ্দীন নামক উপাধিতে ভূষিত করেন। তাকে তার নিজের আসনে বসান এবং অনেক সম্মানে ভূষিত করেন। তার নামে মুদ্রাঙ্কিত করেন এবং বাগদাদ সহ অন্যান্য অঞ্চলের মসজিদে খুতবার সময় তার নাম উল্লেখ করা হয়। এইভাবে সেলজুকদের মান-মর্যাদা আরও অনেক বেড়ে যায়। সেই সময়ের পর থেকে সেলজুকরা, বূভেয়হীদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠা আব্বাসী খলিফাদেরকে সব চেয়ে বড় সাহায্য করেন এবং খলিফা সহজে তার কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম হন। সুলতান তুঘরিল বেগ একজন ব্যক্তিত্ত্বশালী , অসাধারণ মেধাবী এবং সাহসী একজন সেনাপতি ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন দ্বীনদার এবং আবেদ। আর এই কারণেই তিনি তার জাতির কাছ থেকে অনেক বড় সমর্থন এবং সাহায্য পেয়েছিলেন। তিনি ‘’সুলজুকি তুর্ক’’ নামক শক্তিশালী একটি সেনাবাহিনী গঠন করেন এবং ‘’শক্তিশালী রাষ্ট্র’’ এই শ্লোগান দিয়ে এগিয়ে যান। আব্বাসী খলিফা কাইম বি আমরিল্লাহর সাথে পরবর্তীতে সুলতান তুঘরিলের সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পায় এবং এই সম্পর্কের জের ধরে খলিফা সুলতান তুঘরিলের বড় ভাই চাগরি বেগ সাহেবের মেয়েকে বিয়ে করেন। হিজরি ৪৪৮ সালে (১০৫৬ খ্রিঃ) এই বিবাহ সংগঠিত হয়। পরবর্তিতে হিজরি ৪৫৪ সালে সুলতান তুঘরিল খলিফার মেয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু এঁর পর সুলতান তুঘরিল বেগ বেশি দিন হায়াত পাননি। হিজরী ৪৫৫ সালে পবিত্র রমজান মাসের শুক্রবার রাতে ৭০ বছর বয়সে মৃত্যুবরন করেন, তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। তার পরে সাম্রাজ্যের ক্ষমতায় আসেন তার ভ্রাতুষ্পুত্র সুলতান আল্প আরসালান বেগ। সুলতান তুঘরিল বেগের মৃত্যুর পর সেলজুকগন, সুলতান আল্প আরসালানের নেতৃত্বে খোরাসান, ইরান, উত্তর – পূর্ব ইরাক অঞ্চলে পুনঃদখল করে সাম্রাজ্যকে সুসংগঠিত করেন।

এই লেখাটি লেখতে যেসব সূত্র আমাকে সহযোগিতা করেছে:


(𝑨𝒊𝒏𝒂𝒏 𝒀𝒂𝒔𝒓𝒐𝒃𝒊)

Tuesday, August 25, 2020

সুলতান বারকা খান: নীল ও সাদা সাম্রাজ্যের শাসক ছিলেন যিনি


চেঙ্গিস খানের কথা মোটামুটি সবার জানা থাকলেও Khan of the Golden Horde বারকা খান সম্পর্কে আমাদের জানার পরিধি কম। অথচ মোঙ্গল সাম্রাজ্যের এই মহান শাসক সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন।

তাই চলুন, আজ আমরা বারকা খানকে জানবো। 
বারকা খান (অথবা বিরকায়) ছিলেন চেঙ্গিস খানের নাতি। তিনি একজন মোঙ্গল সেনাপতি এবং ১২৫৭–১২৬৬ পর্যন্ত সোনালি সাম্রাজ্যের শাসক, যিনি নীল সাম্রাজ্য এবং সাদা সাম্রাজ্যের উপর শাসন করতে পেরেছিলেন। যুদ্ধের ময়দানে সাহসিকতা ও বীরত্বের জন্য জীবনে বহুবার পুরস্কৃত হন তিনি।

বারকা খান ১২৫২ সালে বুখারা শহরে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি যখন সর-জেকে ছিলেন তখন বুখারার একটি কাফেলার সাথে সাক্ষাত করেন এবং তাদের ধর্ম-বিশ্বাস সম্পর্কে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। বারকা খান তখন ইসলামের একত্ববাদ ও অন্যান্য বিশ্বাসের ধারণা পান এবং মুগ্ধ হন। তিনি কাফেলা ভ্রমণকারীদের কথার দ্বারা ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হন। তারপরে বারকা তার ভাই তুখ-তিমুরকেও ইসলাম গ্রহণে উৎসাহিত করেছিলেন। 

১২৫৫ সালে বারকা খানের ভাই বাতু খান মারা যাওয়ার পর ১২৫৭ সালে তিনি নীল সাম্রাজ্যে (পশ্চিম) তার ভাইয়ের স্থলাভিষিক্ত হন। তিনিই প্রথমবারের মতো মঙ্গোল সাম্রাজ্যের একটি খানাতে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামের আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠা করেন। বারকা শীঘ্রই একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান হয়ে গেলেন। তাঁর ধর্মান্তরের ফলে নীল সাম্রাজ্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েছিল, যদিও তাদের মধ্যে তখনও পশু-পূজারী এবং বৌদ্ধ ছিল। চেঙ্গিস খানের আরেক নাতি হালাকুর বাগদাদ ধ্বংস এবং খলিফা আল-মুস্তা'সিমকে হত্যা করা বারকাকে ক্ষুব্ধ করেছিল। তিনি হালাকু খানকে মোকাবেলা করার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। সিরিয়া ও মিশর দখলের হালাকুর উচ্চাভিলাষ বারকার স্ব-ধর্মীয় লোকদের হুমকিতে রেখেছিল।

মুসলিম ঐতিহাসিক রশিদ-আল-দীন হামাদানীর অনুযায়ী বারকা খান বাগদাদে আক্রমণের প্রতিবাদে তাঁর মঙ্গোল এবং মুসলিম প্রজাদের বলেছিলেন:

“সে (হালাকু) মুসলিমদের সব শহর ধ্বংস করেছে এবং খলিফাকে হত্যা করেছে। আল্লাহর সহায়তায় আমি তার কাছ থেকে সকল নির্দোষের রক্তের হিসাব আদায় করব।”

হালাকু পুত্র আবাকা খানকে আক্রমণ করার জন্য বারকা কুড়া নদী পার হওয়ার চেষ্টা করার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ১২৬৬ থেকে ১২৬৭ এর মধ্যেই তিনি মারা যান। তার পরে তাঁর ভাইয়ের নাতি মেঙ্গু-তিমুর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। মামলুকদের সাথে জোটবদ্ধ থাকার এবং ইলখানাতের সাথে সংঘর্ষে জড়িত থাকার নীতি মেঙ্গু-তিমুর চালিয়ে যান। অনেক ইতিহাসবিদ একমত হয়েছেন যে হালাকুর বিরুদ্ধে বারকার হস্তক্ষেপ মক্কা এবং জেরুজালেমসহ অন্যান্য পবিত্র ভূমির বাগদাদের মতো ভাগ্য হওয়া থেকে রক্ষা করেছিল। প্রকৃতপক্ষে, আল্লাহ তা'আলা বারকা খানের মাধ্যমে মক্কা এবং জেরুজালেমসহ অন্যান্য পবিত্র ভূমিকে রক্ষা করেছিলেন। 

বারকা খান তাঁর শাসনামলে যে কাজ করেন তার প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। বিশেষত হালাকু খানের ধ্বংসযাত্রা থামিয়ে তাঁর হাত থেকে মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার মুসলিম গোত্রগুলোকে রক্ষা করেন; যদিও বেশির ভাগ ঐতিহাসিক আইন জালুতের যুদ্ধকেই ইতিহাসের বাঁকবদলকারী আখ্যা দেন। (আইন জালুতের যুদ্ধ সম্পর্কে জানতে এই বিষয়ে আমার লেখা পড়তে পারেন এই লিংকে: https://muhammadainaniqbal.blogspot.com/2020/08/blog-post_22.html?m=1) কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা ছিল একটি প্রাথমিক জয়। এর পরও মুসলিম বিশ্ব হালাকু খানের আক্রমণঝুঁকিতে ছিল। তাছাড়া হালাকু খান নিজেও সেই যুদ্ধে উপস্থিত ছিলেন না। তবে অসম যুদ্ধে মামলুকদের বিজয় অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। এই কৃতিত্বের প্রকৃত দাবিদার বারকা খান। তাঁর বাহিনীই হালাকু খানকে ডেরায় ফিরে যেতে বাধ্য করেছিল। তিনি আরেকটি মুসলিম গণহত্যা রোধ করতে সক্ষম হন। তিনি যদি হালাকু খানকে রোধ না করতেন হয়তো ইসলামের পবিত্র ভূমিও বাগদাদের মতো রক্তে ভেসে যেত। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, বর্তমান সময়ের মুসলিম ঐতিহাসিকরা বারকা খানের এই অবদান স্মরণ করেন না।

যদিও বারকা খান কোনো দরবেশ ছিলেন না, তবে তিনি মুসলিম ভ্রাতৃত্ব লালন করতেন। সংকটপূর্ণ সময়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। রাজনীতির কূটকৌশল ও ব্যক্তিস্বার্থ বারকা খানকে ‘উম্মাহ চিন্তা’ থেকে দূরে ঠেলে দেয়নি। এটিই বারকা খানের শ্রেষ্ঠত্ব।  

আল্লাহ তা'আলা নীল ও সাদা সাম্রাজ্যের শাসক বারকা খানকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।- আমীন

লেখাটি লেখতে যেসব সূত্র আমাকে সহযোগিতা করেছে:





Saturday, August 22, 2020

বর্বর মোঙ্গলদের মুসলিম বাহিনীর নিকট পরাজয়ের ইতিহাস


যদি প্রশ্ন আসে, মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সেনাবাহিনীর নাম কী! তাহলে সবার আগেই আসবে  মধ্যযুগের মোঙ্গল বাহিনীর নাম যার সূচনা হয়েছিল চেঙ্গিস খানের হাতে। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে তাতার বাহিনী নামে পরিচিত ছিল মোঙ্গল বাহিনী। ১২০৬ সালে চেঙ্গিস খানকে মঙ্গোলিয়ার স্তেপের একচ্ছত্র অধিপতি বা গ্রেট খান হিসাবে ঘোষণা করার পর মোঙ্গল বাহিনী একে একে জয় করে নিয়েছিল এশিয়া ও ইউরোপ বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্যের মালিক ছিল মোঙ্গলরা। চেঙ্গিস খানের সময় থেকে শুরু হওয়া মোঙ্গলদের জয়যাত্রা অব্যাহত ছিল পরবর্তী গ্রেট খানদের সময়ও। ১২০৬ সাল থেকে ১২৬০ সাল এই অর্ধশত বছরে তাঁরা  একটি যুদ্ধেও হারে নি। বাগদাদ, সমরখন্দ, বেইজিং, বুখারা, আলেপ্পোর মত বড় বড় শহর তাতারি হামলায় মাটির সাথে মিশে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আইন জালুতের যুদ্ধে শেষ হয় বর্বর মোঙ্গলদের এই জয়যাত্রা। আইন জালুতের যুদ্ধ ১২৬০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধ দক্ষিণপূর্ব গ্যালিলিতে জাজরিল উপত্যকার আইন জালুতে মামলুক ও মোঙ্গলদের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল।

চলুন যেনে নিই সেই ইতিহাস:

১২৫১ সালে মংকে খান খাগান হন। তিনি তার দাদা চেঙ্গিস খানের বিশ্বব্যপী সাম্রাজ্যের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সচেষ্ট ছিলেন। তিনি তার ভাই হালাকু খানকে পশ্চিমের জাতিসমূহ-কে অধিকার করার দায়িত্ব দেন।

পাঁচ বছর যাবত সেনাদল গঠনের পর ১২৫৬ সালে হালাকু খান অভিযান শুরু করেন। তিনি দক্ষিণ দিকে যাত্রা করেন। আত্মসমর্পণ না করলে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য মংকে খানের নির্দেশ ছিল। হালাকু খান অভিযানকালে অনেক রাজ্য জয় করেন। তাদের অনেকে তার দলে সৈনিক সরবরাহ করেছে। বাগদাদ অভিযানের সময় সিলিসিয়ান আর্মেনীয়রা তার সাথে ছিল। পাশাপাশি এন্টিওকের ফ্রাঙ্ক সেনারাও তার সাথে যোগ দেয়। অভিযানের সময় হাসাসিনরা তার কাছে আত্মসমর্পণ করে। বাগদাদ ধ্বংসের ফলে কয়েক শতাব্দী প্রাচীন আব্বাসীয় খিলাফত ধ্বংস হয়ে যায়। এরপর দামেস্কের আইয়ুবীয়দের পতন হয়। হালাকু খান দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে মামলুক সালতানাত জয় করার পরিকল্পনা করেছিলেন। এসময় মামলুকরা প্রধান মুসলিম শক্তি ছিল। ১২৬০ সালে হালাকু খান কায়রোতে সুলতান কুতুজের কাছে দূত পাঠিয়ে আত্মসমর্পণ দাবি করেন। চিঠিটি পড়লেই বোঝতে পারবেন, মোঙ্গলদের ভাষা ছিল তাদের তরবারির মতোই ভয়ঙ্কর। চিঠিটি হুবহু তোলে ধরার চেষ্টা করছি:

“পূর্ব ও পশ্চিমের শাহেনশাহ মহান খানের পক্ষ থেকে এটি প্রেরিত হচ্ছে মামলুক কুতুজের উদ্দেশ্যে যিনি আমাদের তলোয়ার থেকে পালিয়ে গিয়েছেন। অন্যান্য রাজ্যসমূহের কী পরিণতি হয়েছে তা চিন্তা করে আপনার উচিত আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করা। আপনি শোনেছেন কিভাবে আমরা একটি বিশাল সাম্রাজ্য জয় করেছি এবং পৃথিবীকে দূষিত কারী বিশৃঙ্খলা থেকে একে বিশুদ্ধ করেছি। আমরা বিশাল অঞ্চল জয় করেছি, সব মানুষকে হত্যা করেছি। আপনি আমাদের সেনাবাহিনীর ত্রাস থেকে বাঁচতে পারবেন না। আপনি কোথায় পালাবেন? আমাদের কাছ থেকে পালানোর জন্য আপনি কোন পথ ধরবেন? আমাদের ঘোড়াগুলি দ্রুতগামী, আমাদের তীর ধারালো, আমাদের তলোয়ার বজ্রের মত, আমাদের হৃদয় পর্বতের মত কঠিন, আমাদের সেনারা বালুর মত অগণিত। দুর্গ আমাদের আটকাতে পারবে না, কোনো সেনাবাহিনী আমাদের থামাতে পারবে না। আল্লাহর কাছে আপনার দোয়া আমাদের বিরুদ্ধে কাজে আসবে না। অশ্রু আমাদের চালিত করে না এবং মাতম আমাদের স্পর্শ করে না। শুধুমাত্র যারা আমাদের সুরক্ষা চাইবে তাদেরকে নিরাপত্তা দেয়া হবে। যুদ্ধের আগুন জ্বলে উঠার আগে দ্রুত আপনার জবাব দিন। প্রতিরোধ করলে আপনি সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্যোগের মুখোমুখি হবেন। আমরা আপনাদের মসজিদ গুলি চুরমার করে দেব এবং আপনাদের আল্লাহর দুর্বলতা দেখতে পাবেন এবং এরপর আপনাদের সন্তান ও বৃদ্ধদেরকে হত্যা করা হবে। এই মুহূর্তে আপনি একমাত্র শত্রু যার বিরুদ্ধে আমরা অগ্রসর হয়েছি।”

হালাকু

সাহসী সুলতান কুতুজ মোঙ্গলদের দূতদের কে হত্যা করে এর জবাব দেন। দূতদের কাটা মাথা কায়রোর বাব জুলাইলা ফটকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল।

এসময় মংকে খানের মৃত্যুর ফলে হালাকু খানসহ অন্যান্য নেতৃস্থানীয় মঙ্গোলরা নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য মঙ্গোলিয়া ফিরে আসেন। হালাকু তার বাহিনীর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে তার সাথে নিয়ে যান। তার রেখে যাওয়া বাহিনীর সেনাপতি ছিলেন কিতবুকা।

মোঙ্গলদের প্রতিহত করার জন্য সুলতান কুতুজ দ্রুত একটি বাহিনী গঠন করে ফিলিস্তিনের দিকে অগ্রসর হন।অভিযানকালে বাইবার্স‌ তার সাথে যোগ দেন।

আগস্টের শেষদিকে মোঙ্গলরা তাদের মোঙ্গল শিবির থেকে দক্ষিণ দিকে যাত্রা করে। তারা এসময় আক্কাকেন্দ্রীক ক্রুসেডার জেরুজালেম রাজ্যের সাথে মিলে ফ্রাঙ্ক-মঙ্গোল মৈত্রী গঠনের চেষ্টা চালায়। কিন্তু পোপ চতুর্থ আলেক্সান্ডার এতে সায় দেননি। এছাড়া সাইদার শাসক জুলিয়ানের কারণে কিতবুকার নাতি মৃত্যুর ফলে দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। কিতবুকা রাগান্বিত হয়ে সাইদা আক্রমণ করেন। অন্যদিকে মামলুক রাও মোঙ্গলদের বিরুদ্ধে সহায়তার জন্য ক্রুসেডারদের প্রতি বার্তা পাঠায়।

মামলুকরা ফ্রাঙ্কদের দীর্ঘদিনের শত্রু হলেও আক্কার ব্যারন মোঙ্গলদেরকে বেশি ক্ষতিকর হিসেবে বিবেচনা করেন। এসময় ক্রুসেডাররা দুই পক্ষের মধ্যে কারো সাথে সরাসরি যোগ না দিয়ে ক্ষতি না করার শর্তে মামলুকদেরকে ক্রুসেডার এলাকার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করার সুযোগ দেয়। মোঙ্গলদের জর্ডান নদী অতিক্রম করার খবর পাওয়ার পর সুলতান কুতুজ দক্ষিণ পশ্চিমে জাজরিল উপত্যকার আইন জালুতের দিকে অগ্রসর হন।

মামলুকরা স্থানীয় ভূপ্রকৃতি সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত ছিল। কৌশল হিসেবে কুতুজ তার বাহিনীর একটি অংশকে স্থানীয় পাহাড়ে লুকিয়ে রাখেন এবং বাইবার্স‌কে একটি ক্ষুদ্র সেনাদল দিয়ে পাঠানো হয়।

দুইপক্ষ মুখোমুখি হওয়ার পর মোঙ্গলদেরকে ফাঁদে ফেলার জন্য বাইবার্স‌ হিট-এন্ড-রান কৌশল কাজে লাগান। আক্রমণ করে মামলুকরা পালিয়ে যাচ্ছে দেখে মোঙ্গলরা তাদের ধাওয়া করে। মোঙ্গল সেনাপতি কিতবুকা এই ফাঁদ বুঝতে না পেরে অগ্রসর হন ফলে পাহাড়ি এলাকায় পৌছার পর মামলুকরা আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে এসে আক্রমণ চালায়। ফলে মোঙ্গলরা চারদিক থেকে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।

মোঙ্গলরা বের হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। কুতুজ কিছু দূরে তার নিজস্ব সেনাদল নিয়ে যুদ্ধের প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করছিলেন। এসময় মোঙ্গলরা মামলুক বাহিনীর বাম অংশকে প্রায় ভেদ করতে সক্ষম হয়। এসময় কুতুজ তার যুদ্ধের হেলমেট খুলে ফেলেন যাতে সৈনিকরা তাকে চিনতে পারে। এরপর তিনি তার সেনাদল নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েন। মোঙ্গলরা পিছু হটে কিছু দূরে গিয়ে সংগঠিত হয়ে পুনরায় যুদ্ধক্ষেত্রে ফিরে আসে। তবে যুদ্ধের গতি মামলুকদের পক্ষে চলে যায়। কিতবুকা যুদ্ধে নিহত হন এবং এই অঞ্চলের মোঙ্গল বাহিনীর প্রায় সম্পূর্ণ অংশ ধ্বংস হয়ে যায়।

হাত কামান ব্যবহার হয়েছে এমন যুদ্ধসমূহের মধ্যে আইন জালুতের যুদ্ধ অন্যতম প্রাচীন যুদ্ধ হিসেবে উল্লেখযোগ্য।মোঙ্গল ঘোড়া ও অশ্বারোহীদের মধ্যে আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য মামলুকরা এসমস্ত বিস্ফোরক ব্যবহার করে। পরবর্তীকালে আরব রসায়ন ও সামরিক নিয়মকানুনে বিস্ফোরক হিসেবে বারুদ সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে।

এভাবেই মুসলমানদের হাতে থেমে যায়, বর্বর মোঙ্গলদের জয়যাত্রা।

লেখাটি লিখতে যেসব সূত্র সহযোগিতা করেছে:

১. উইকিপিডিয়া 
২. রোর বাংলা

(𝑨𝒊𝒏𝒂𝒏 𝒀𝒂𝒔𝒓𝒐𝒃𝒊)



Our group link: https://www.facebook.com/groups/302517450203009/ 
Our pages link: https://www.facebook.com/islamicmediachannelbd/?fref=gs&dti=302517450203009&hc_location=group_dialog
and
https://www.facebook.com/islamicmediablogs/ 
Our youtube channel link: https://www.youtube.com/c/Islamicmedia1234

Saturday, May 16, 2020

অবিশ্বাসীর দাফন

লেখক : আইনান ইয়াসরবি 

গফুর চৌধুরীর ঘরে আজ কান্নার রোল। এভাবে লোকটা চলে যাবেন কেউ ভাবতেই পারেননি। আরে ভদ্রলোকতো গতকালও পাড়ার 'মুক্তমনা সংঘে'র আয়োজিত 'ধর্মীয় কুসংস্কার' নামক সেমিনারে জোরালো বক্তব্য রেখেছিলেন যেখানে তিনি বলেছিলেন, "আমি ধর্ম-কর্ম করিনা। এগুলা গোঁড়ামি। ইসলাম একটি সন্ত্রাসী ধর্ম...."

সেমিনার থেকে ফিরে রাতেই হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক করেন। সকাল হওয়ার আগেই মারা যান। যায় হোক, সারাজীবন ধর্মের বিরুদ্ধে কঠোর থাকা গফুর চৌধুরীর মৃত্যুর খবর শুনে ভক্তকুলকে "ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিঊন" পড়তে দেখা যাচ্ছে। অনেকে আত্মার মাগফিরাত কামনা করছে। অনেকটা চাপের মুখে এলাকার ইমাম খাট্টা কম্যুনিস্ট গফুর সাহেবের জানাজাও পড়ালেন। তারপর আবার মোনাজাত করে পরকালে অবিশ্বাসী গফুর চৌধুরীর জন্য কবরের আজাবও মাফ চাওয়া হলো। তাছাড়া তার ছেলেদেরও দেখা গেলো তার ভুল-ত্রুটির জন্য মানুষের কাছে মাফ চাইতে। আচ্ছা একটা কথা বলতেই ভুলে গিয়েছিলাম। গফুর সাহেবের জানাজায় উপস্থিত লোকেরা বেশিরভাগই ওজু বানায়নি, পুকুর দূরে ছিল বলে। সবাই কান্নাকাটি করে কবরস্থানে কবর দেয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ এই সময় একজন সত্তরোর্ধ মুরুব্বিকে হাসতে দেখা যায়। এমন সময়ে কেন হাসলেন কেউ একজন জিজ্ঞেস করলে তার জবাবে তিনি কিছুটা চলিত কিছুটা আঞ্চলিক ভাষায় বললেন, "এই গফুরতো ধর্মেই বিশ্বাস কইরতোনা। আর আইজ তারই জানাজা হইলো। দাফনও হইবো। যার ধর্মই নাই তার আবার এগুলার কী দরকার! কুত্তার ধর্ম নাই, দাফনও নাই। মরা কুত্তারে ডাস্টবিনে দেখা যায়। এই ব্যাটারে এতো কষ্ট কইরা দাফন না কইরা ডাস্টবিনেওতো ফেলা যায়।" এলাকার অনেক যুবককে মুরুব্বির কথায় মৃদু হাসতে দেখা গেলো। যাক, মুরুব্বির কথাকে পাত্তা দেয় কে! দাফন করা হলো। শুনলাম, তারপর নাকি ইমাম সাহেব কবরে বসে বসে আরও কী কী পড়লেন।

[ বিশেষ দ্রষ্টব্য : এটি একটি কাল্পনিক গল্প। অনেকদিন পর গল্প লিখলাম। তাই ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। প্রয়োজনীয় মন্তব্য করে পাশে থাকবেন। ধন্যবাদ। ]



Friday, March 6, 2020

চলুন বেশি বেশি তাওবাহ করি

#প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা,
চলুন করোনা ভাইরাসসহ সকল প্রকার বালা মুসিবত থেকে রক্ষা পেতে যথাযথ সচেতনতার পাশাপাশি আমরা বেশি বেশি তাওবাহ করি। আল্লাহ তা'আলা বলেন, "তোমাদেরকে যেসব বিপদাপদ স্পর্শ করে, সেগুলো তোমাদেরই কৃতকর্মের কারণে। আর অনেক গুনাহ তিনি (আল্লাহ) ক্ষমা করে দেন।" (সুরা শুরা : ৩০)

অতএব, মানুষ বিপদের সম্মুখীন হয় গুনাহর কারণে। তাই আল্লাহ তা'আলার কাছে আমাদের বেশি করে ক্ষমা চাইতে হবে, তাওবাহ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
"তোমরা প্রত্যেকেই আন্তরিকতার সঙ্গে আল্লাহর কাছে তাওবাহ করো।" (সুরা আত-তাহরিম : আয়াত ৮)

হাদীসে বর্ণিত আছে,

"أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
(অর্থ : "আমি সেই আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি যিনি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব, অবিনশ্বর। এবং আমি তাঁর কাছে তওবা করছি।")

এই দোয়া পড়লে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন, যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়নকারী হয়।" (আবু দাউদ-১৫১৭, তিরমিযী-৩৫৭৭, মিশকাত-২৩৫৩)

এছাড়া করোনা ভাইরাসসহ অন্যান্য রোগ থেকে রক্ষা পেতে নিম্নের দু'আটিও গুরুত্বপূর্ণ -

اللَّهمَّ إِنِّي أَعُوُذُ بِكَ مِنَ الْبرَصِ، وَالجُنُونِ، والجُذَامِ، ومن سّيءِ الأَسْقامِ.

অর্থ : "হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকট ধবল, কুষ্ঠ এবং উন্মাদনাসহ সব ধরনের কঠিন দূরারোগ্য ব্যাধি থেকে পানাহ চাই।" (সুনান আবু দাউদ)

------- Ainan Yasrobi

Wednesday, January 22, 2020

ধর্ষণ বন্ধ হচ্ছে না কেন!

যে যতই থিওরি দিয়ে ধর্ষণ বন্ধ করার চেষ্টা করুক না কেন, যতক্ষণ পর্যন্ত কুরআনের নির্দেশনা না মানা হবে ততক্ষন পর্যন্ত কোনোভাবেই ধর্ষণ বন্ধ করা সম্ভব নয়। চলুন দেখি, ধর্ষণসহ সকল প্রকার জিনা বন্ধে কুরআনের সাধারণ কি নির্দেশনা রয়েছে।

আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআন মাজীদে সূরা নূরের ৩০ নং আয়াতে বলছেন, 'হে নবী! মুমিনদের (পুরুষ) বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এতেই তাদের জন্য পবিত্রতা রয়েছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে, আল্লাহ তা সম্পর্কে অবহিত আছেন।' 
(সূরা নূর, ৩০)

এখানে পুরুষদেরকে আল্লাহ তা'আলা দৃষ্টি নত রাখতে বলেছেন। অর্থ্যাৎ যেসব নারীদের দিকে পুরুষদের দৃষ্টি দেয়া জায়েজ নেই, তাদের দিকে না তাকাতে বলেছেন এবং পাশাপাশি লজ্জাস্থানের হেফাজত করতে বলেছেন। এখন পুরুষরা যদি কুরআনের এই নির্দেশনা পালন না করে, তাহলে ধর্ষণ বন্ধ হবেনা।

আর ধর্ষণসহ সকল প্রকার জিনা বন্ধে কুরআনে নারীদের প্রতিও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।'
(সূরা আহযাব, ৫৯)

আরও বলা হয়েছে, 'হে নবী! মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। তারা যেন সাধারণত যা প্রকাশ থাকে তা ছাড়া নিজেদের আভরণ প্রদর্শন না করে।'
(সূরা নূর, ৩১)

এখানে নারীদের দৃষ্টিও সংযত রাখার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি হিজাব পালনের কথা বলা হয়েছে।

উপরে উল্লিখিত আয়াত ছাড়া জিনা বন্ধ করতে কুরআন ও হাদীসে আরও অনেক আলোচনা রয়েছে। তবে আমি মনে করি, ধর্ষণসহ সকল প্রকার জিনা বন্ধের মূল নির্দেশনা এই আয়াতগুলোর ভেতরেই রয়েছে। এখন আপনারা বলুন, বাংলাদেশের নারী বা পুরুষের মধ্যে কয়জন এই আয়াতগুলোর নির্দেশনা মেনে চলে! আর যতদিন সমাজে কুরআনের আয়াতের নির্দেশনার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন না হবে ততদিন ধর্ষণও বন্ধ হবে না। চলুন আজ থেকে আমরা নিজেরা পর্দা মেনে চলি এবং অপরকে উদ্বুদ্ধ করি। 

এখন একদল লোক বলবে, 'ভাই, এই আয়াতগুলোর নির্দেশনার বাস্তবায়নই যদি সমাধান হয় তাহলে শিশুরা এবং বৃদ্ধারা কেন ধর্ষণের শিকার হয়? পর্দা করা নারী কেন ধর্ষণের শিকার হয়?'
এসব প্রশ্নের উত্তর একদম সোজা। ধরুন, আপনি এক কাপ চা বানাতে দুধ, চিনি দিলেন। কিন্তু চা পাতা দিলেন না। তাহলে কি চা হবে! হবে না। অতএব, সমাজের কিছুসংখ্যক নারী-পুরুষ কুরআন মেনে চললো, আর বিরাটসংখ্যক নারী-পুরুষ কুরআন ধরলোই না, এভাবে ধর্ষণ বন্ধ হবে না। বরং সমাজের প্রত্যেক নারী-পুরুষকে পর্দা মেনে চলতে হবে। নয়তো শিশু,বৃদ্ধা কিংবা পর্দা করা নারী কেউই ধর্ষণ থেকে রক্ষা পাবেনা।

- Ainan

সকল কাজের মূলেই যেন থাকে খোদার সন্তুষ্টি অর্জন

লেখা: মুহাম্মাদ আইনান ইকবাল আপনারা হয়তো মুসলিম জাহানের ৪র্থ খলিফা হযরত আলী ইবনে আবু তালিবের (রাঃ) সেই ঘটনাটি শোনেছেন। একদা যুদ্ধের ময়দান...